জঙ্গল শেখ। — ফাইল চিত্র
দলেরই বিধায়কের এক অনুগামীকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হলেন তৃণমূল কাউন্সিলর। দিন পনেরো আগে প্রকাশ্যে গুলি করে ওই খুনের ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল কাটোয়ার দাপুটে কাউন্সিলর জঙ্গল শেখের। রবিবার তাঁকে পাকড়াও করে পুলিশ। বর্ধমানের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, ‘‘বেশ কিছু দিন ধরে জঙ্গল শেখকে খোঁজা হচ্ছিল। তাঁকে গ্রেফতার করে জেরা করা হচ্ছে।’’
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ১ অক্টোবর কাটোয়ার খাজুরডিহিতে খুন হন বছর চব্বিশের সাবির শেখ। সকালে বাড়ির কাছে দোকানে চা খেতে গিয়েছিলেন তিনি। একটি গাড়িতে করে এসে তাঁকে গুলি করে দুষ্কৃতীরা। শব্দ শুনে বেরিয়ে আসেন সাবিরের বাড়ির লোকজন। তার মধ্যেই দুষ্কৃতীরা গুলি ছুড়তে-ছুড়তে চম্পট দেয়। সাবিরের মা ফিরোজা বিবির অভিযোগ করেন, তাঁরা জঙ্গল শেখকে গুলি ছুড়তে দেখেছেন। পুলিশের কাছে জঙ্গল-সহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তিনি। ঘটনার পরেই চার জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, রবিবার সন্ধ্যায় কাটোয়ার মাঠপাড়া এলাকায় অনুগামীদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন জঙ্গল। সাদা পোশাকে জনা দশেক পুলিশের একটি দল গিয়ে তাঁকে ধরে। জঙ্গল-ঘনিষ্ঠদের দাবি, রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যই খুনের ঘটনায় নাম জড়িয়ে তাঁকে গ্রেফতার করা হল। যদিও ঘটনা হল, জঙ্গলের বিরুদ্ধে এর আগেও অন্তত গোটা ছয়েক খুনের অভিযোগ হয়েছে। ২০০৩ সালে সাবিরের পরিবারেরই এক জনকে খুনের মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন। এ ছাড়াও জঙ্গলের বিরুদ্ধে নানা সময়ে হুমকি, তোলাবাজির অভিযোগ উঠেছে। ২০১৫ সালে তৃণমূলে যোগ দিয়েই পুরভোটে জিতে কাউন্সিলর হন তিনি। তার পরেও পুরনো একটি খুনের মামলায় তাঁকে ধরা হয়েছিল। পরে জামিন পান।
কাটোয়ার দীর্ঘদিনের কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় গত বছর পুরভোটের পরপরই তৃণমূলে যোগ দেন। তারপর থেকেই শহরে কাউন্সিলর জঙ্গল ও বিধায়কের গোষ্ঠীর লোকজনের মধ্যে বারবার গোলমাল বেধেছে। এ বার বিধানসভা ভোটের দিন দলের প্রার্থী রবীন্দ্রনাথবাবুর বিরুদ্ধে ময়দানে নামার অভিযোগও উঠেছিল জঙ্গলের বিরুদ্ধে। শাসক দলের একাংশের অনুমান, রবীন্দ্রনাথ গোষ্ঠীর লোক বলে পরিচিত সাবিরকে খুনের পিছনে রয়েছে সেই দ্বন্দ্বই।
খুনের পরেই অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি জানিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথবাবু। এ দিন জঙ্গলকে গ্রেফতারের পরে অবশ্য ‘পুলিশি তদন্তের বিষয়’ বলে এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। তৃণমূলের বর্ধমান জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আইন আইনের পথে চলবে। দোষ প্রমাণ হলে শাস্তি হবে।’’