নতুন হুঙ্কার অনুব্রতর। —নিজস্ব চিত্র।
বীরভূমের রাজনীতি ‘খেলা হবে’ স্লোগানেই সরগরম। নন্দীগ্রামে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর মুখে প্রথম বার শোনা যাওয়া স্লোগানকেই বীরভূমে নতুন মাত্রা দেন জেলার তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। বলেন, ‘‘খেলা হবে, ভয়ঙ্কর খেলা হবে।’’ এ বার আর এক নতুন মন্তব্য অনব্রতর। জানালেন, এখন তিনি দর্শক। আর তিনি যখন খেলা শুরু করবেন তখন, সবাই দেখবে।
শুক্রবার রাজ্যে আসছেন বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডা। শনিবার তাঁর কর্মসূচি মালদহ ও নদিয়া জেলায়। এর পরে মঙ্গলবার ফের রাজ্যে থাকার কথা তাঁর। সেই সফরে তিনি যাবেন ঝাড়গ্রাম ও তারাপীঠে। সেই কর্মসূচি প্রসঙ্গেই বিজেপি-কে কটাক্ষ করে অনুব্রত শুক্রবার বলেন, ‘‘সবাই নাচবে আমি দেখব, পরে আমি খেলা আরম্ভ করলে ওরা দেখবে।’’ বৃহস্পতিবার কীর্ণাহারে জেলা তৃণমূলের সভায় অনুব্রত ছাড়াও ছিলেন জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহ। সেখান থেকেই ফের বিজেপি-কে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন অনুব্রত। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি মিথ্যা পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। একটা করে বার করে আর বলে। একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকলেই উন্নয়ন হবে।’’ বৃহস্পতিবারের সভা মঞ্চ থেকেও ‘খেলা হবে, ভয়ঙ্কর খেলা হবে’ বলে হুঙ্কার দেন তিনি। সভার শেষে সাংবাদিক বৈঠকও করেন অনুব্রত। সেখানেই নড্ডার জেলা সফরকে কটাক্ষ করেন তিনি। সেই সঙ্গে রাজ্য বাজেটের প্রশংসা করে বলেন, ২০ লক্ষ মানুষের জন্য বাড়ি দেওয়া হয়েছে৷
তবে আপাতত অনুব্রতর স্লোগানই নতুন করে চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। গত ২৭ জানুয়ারি হেতমপুরে বিজেপি-কে সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়ে অনুব্রত জানিয়ে দেন, বিধানসভা নির্বাচনে ‘ভয়ঙ্কর খেলা’ হতে চলেছে বীরভূমে। তিনি বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই খেলা হবে। একশো বার খেলা হবে। ভয়ঙ্কর খেলা হবে। এই মাটিতেই খেলা হবে। পারবেন তো পগার পার করে দিতে? ঠেঙিয়ে পগার পার করে দিন।’’
সাম্প্রতিক কালে রাজ্যে সব নির্বাচনেই নতুন নতুন স্লোগান তুলে খবরের শিরোনামে এসেছেন অনুব্রত। সেই সঙ্গে একের পর এক ‘হিট ডায়লগ’ উপহার দিয়েছেন বঙ্গ রাজনীতিকে। সে সব নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে দলীয় কর্মীদের অনুব্রত নিদান দিয়েছিলেন, ‘‘কেউ নির্দল প্রার্থী হলে তার বাড়ির চালটা কেটে জ্বালিয়ে দিস।’’ অবলীলায় মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলছেন, ‘‘পুলিশ বাধা দিলে পুলিশকে বোমা মারুন!’’ এর পরে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তাঁর মুখে শোনা গিয়েছিল ‘চড়াম চড়াম বাদ্যি’, ‘গুড়বাতাসা’। তবে অনুব্রতর মন্তব্য নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক তৈরি হয়েছিল ২০১৮ সালে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে বলেছিলেন, ‘‘ভোটের দিন রাস্তায় উন্নয়ন দাঁড়িয়ে থাকবে।’’
‘উন্নয়ন দাঁড়িয়ে থাকা’ বলা নিয়ে প্রতিবাদে কবিতাও লেখেন কবি শঙ্খ ঘোষ— ‘দেখ খুলে তোর তিন নয়ন / রাস্তা জুড়ে খড়্গ হাতে দাঁড়িয়ে আছে উন্নয়ন’। এর পরে কবিকে ‘শঙ্খ নামের অপমান’ বলেও আক্রমণ শানান অনুব্রত।
তবে কিছু দিন আগে পর্যন্তও বেশ চুপই ছিলেন তিনি। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে ততই যেন অনুব্রতর গলায় ‘উত্তাপ’ বাড়ছে।