তদন্তেই ফাঁক, পুলিশকে গুলির মামলায় মুক্ত ১৩

সরকারি আইনজীবী অমলেন্দু চক্রবর্তী ও তমাল মুখোপাধ্যায় জানান, এই রায়ের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করা হবে কি না, সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন লালবাজারের কর্তারা। লালবাজার এ দিনই জানায়, হাইকোর্টে মামলা করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:১০
Share:

গোপাল তিওয়ারি। (ডান দিকে) বাড়ির পথে জগন্নাথ মণ্ডল। বৃহস্পতিবার। ছবি—নিজস্ব চিত্র, সুমন বল্লভ।

প্রায় সাড়ে চার বছর আগে কলকাতা পুরসভার ভোটের দিন গিরিশ পার্কে গুলি চালিয়ে পুলিশ অফিসারকে হত্যার চেষ্টার মামলা থেকে গোপাল তিওয়ারি-সহ ১৩ জনকে বেকসুর মুক্তি দিল কলকাতার নগর দায়রা আদালত। বিচারক সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার জানান, পুলিশি তদন্তে ফাঁক আছে। তা ছাড়া অভিযুক্ত গোপালদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণও মেলেনি। সেই জন্যই তাদের মুক্তি দেওয়া হচ্ছে।

Advertisement

সরকারি আইনজীবী অমলেন্দু চক্রবর্তী ও তমাল মুখোপাধ্যায় জানান, এই রায়ের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করা হবে কি না, সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন লালবাজারের কর্তারা। লালবাজার এ দিনই জানায়, হাইকোর্টে মামলা করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।

পুলিশ জানায়, ২০১৫ সালের ১৮ এপ্রিল, পুরভোটের দিন দুষ্কৃতীদের গুলিতে গিরিশ পার্ক থানার তৎকালীন সাব-ইনস্পেক্টর জগন্নাথ মণ্ডল (এখন কসবা থানার অতিরিক্ত ওসি) জখম হন। অভিযোগ ওঠে, মধ্য কলকাতার কুখ্যাত দুষ্কৃতী গোপাল তিওয়ারির দলবল সে-দিন গোলমাল বাধানোর উদ্দেশ্যে গিরিশ পার্ক থানা এলাকার বারাণসী ঘোষ স্ট্রিটে জড়ো হয়েছিল। সেই খবর পেয়ে জগন্নাথবাবু সেখানে গেলে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। তদন্তকারীদের দাবি ছিল, গুলি চলাকালীন গোপাল ঘটনাস্থলে হাজির ছিল। পুলিশ গোপাল-সহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করে হাঙ্গামা বাধানো এবং হত্যার চেষ্টার মামলা দায়ের করে। এ ছাড়াও মামলা করা হয় অস্ত্র এবং বিস্ফোরক আইনে।

Advertisement

অমিল ও অসঙ্গতি

• জখম পুলিশ অফিসারের রক্তের সঙ্গে ঘটনাস্থলে পাওয়া রক্তের নমুনা মেলেনি।
• গুলি লাগে ওই অফিসারের বুকের ডান দিকে। কিন্তু আদালতে জমা পড়া উর্দিতে বুলেটের ফুটো আছে কাঁধের হাড় ও তলপেটের কাছে।
• গুলি দুষ্কৃতীরা ছুড়েছিল, নাকি গোলমাল থামাতে পুলিশের ছোড়া গুলিতেই ওই অফিসার জখম হন, তা নির্ধারিত হয়নি।
• হত্যার উদ্দেশ্য নিয়েই গুলি ছোড়া হয়েছিল, এমন মত প্রকাশ করেননি চিকিৎসক।
• ঘটনার দিন গিরিশ পার্ক থানায় কত বুলেট ছিল, তার হিসেব পায়নি আদালত।
• অসঙ্গতি আছে একাধিক সাক্ষীর বয়ানে।

নগর দায়রা আদালতের রায় শুনে জগন্নাথবাবু এ দিন বলেন, ‘‘এই রায়ে আমি সন্তুষ্ট নই।’’ চলতি মাসেই ওই অফিসারের অবসর বলে জানান লালবাজারের এক কর্তা।

অভিযুক্তদের আইনজীবী অশোক বক্সী, ফজলে আহমেদ, শাহিদ ইমাম জানান, তদন্তে যে ফাঁক আছে, সওয়ালে তাঁরা সেটা বলেছিলেন। উদাহরণ দিয়ে তাঁরা জানান, পুলিশ অফিসারের বুকের ডান দিকে গুলি লেগেছিল। কিন্তু ওই অফিসারের যে-উর্দি আদালতে জমা পড়ে, তাতে দেখা যায়, উর্দিতে বুলেটের দু’টি ফুটো রয়েছে। একটি ফুটো কাঁধের হাড়ের কাছে। অন্যটি তলপেটের কাছে।

অভিযুক্তদের আইনজীবীরা আরও জানান, পুলিশ অফিসারের রক্তের নমুনার সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া রক্তের নমুনা মেলেনি। বস্তুত অভিযুক্তেরা গুলি ছুড়েছিল, নাকি পুলিশের গুলিতেই ওই অফিসার জখম হন, তা-ও প্রমাণিত হয়নি।

হত্যার চেষ্টার ধারায় চার্জশিট দিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু হত্যা করার উদ্দেশ্য নিয়েই গুলি ছোড়া হয়েছিল, চিকিৎসক এমন কোনও অভিমত দেননি। আদালত একাধিক সাক্ষীর বক্তব্যে অসঙ্গতিও নথিভুক্ত করেছে বলে জানান ওই আইনজীবীরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement