ভাইরাল ভিডিয়োয় এ দৃশ্য দেখা গিয়েছে। —নিজস্ব চিত্র।
গদিমোড়া চেয়ারে গা এলিয়ে বসে তৃণমূল বিধায়কের ভাই তথা শাসকদলের শ্রমিকনেতা। তাঁর পদসেবা করছেন এক কর্মী। মুর্শিদাবাদের কান্দিতে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ের ভিতরে এ দৃশ্যই দেখা গিয়েছে একটি ভাইরাল ভিডিয়োয়। রবিবার থেকে ওই ভিডিয়ো ঘিরে এমনই দাবি উঠেছে। যদিও ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।
ভাইরাল ভিডিয়োটি নিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে কান্দিতে। বিজেপির কটাক্ষ, দাসত্বপ্রথা ফিরিয়ে এনেছে শাসকদল। কংগ্রেসের দাবি, তৃণমূলের লোকজনই ভিডিয়ো তুলে ভাইরাল করেছে। তবে ওই ভিডিয়োর সত্যতা স্বীকার করে নিয়েও ঘটনার ‘অন্য’ ব্যাখ্যা দিয়েছেন ওই শ্রমিকনেতা। তাঁর পাল্টা দাবি, পা পিছলে পড়ে যাওয়ায় পায়ে ব্যথার উপশম করছিলেন ওই কর্মী।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ভাইরাল ভিডিয়োটি নেটমাধ্যমে প্রথম পোস্ট করেছিলেন শরিফুল ইসলাম নামে এলাকার এক কংগ্রেস কর্মী। যদিও পরে তিনি সেটি সরিয়ে দেন। ২৮ অক্টোবর রাত ৯টা নাগাদ কান্দির গোকর্ণ এলাকার তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে ওই ভিডিয়ো তোলা হয়েছিল বলে দাবি। ওই ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, কান্দির বিধায়ক অপূর্ব সরকারের ভাই তথা তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র নেতা পার্থপ্রতিম সরকার ওরফে বাপি বিশ্রাম করছেন। তাঁর পদসেবা করছেন এক যুবক।
এই ভিডিয়ো সত্যতা স্বীকার করে নিলেও পার্থপ্রতিমের দাবি, ‘‘২৮ তারিখ রাতে কান্দি ব্লকের একটি পার্ক পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। পার্কের ভিতর পার্টি অফিসে ঢোকার মুখে পা পিছলে পড়ে যাই। সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার কর্মীরা আমাকে অফিসঘরে নিয়ে গিয়ে বসান। ফ্রিজ় থেকে বরফজল এনে আমার পায়ে ঘষে দিচ্ছিলেন তাঁরা। সে সময় পার্কে বহু লোকজন ছিল। তাঁদের মধ্যে কে বা কারা এ ছবি তুলেছেন। ছবিটা এডিট করে কিছু বাজে কথা লিখেছে। আমি পড়ে গিয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছি। আমার লেগেছে কি না, সে সময় তা দেখছিলেন আমাদের কর্মীরা।’’ তাঁর দাবি, ‘‘এটা বিরোধীপক্ষের কাজ। পঞ্চায়েত ভোটের আগে যে কোনও উপায়ে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের হেয় করার চক্রান্ত। ধিক্কার জানাই। এ ধরনের ভিডিয়ো ছড়িয়ে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দমাতে পারবে না।’’ এই ‘চক্রান্ত কার মস্তিষ্কপ্রসূত’, তা-ও জানিয়েছেন পার্থপ্রতিম। তাঁর দাবি, ‘‘খুব সম্ভবত কংগ্রেসের সালাম শেখ বলে একটি ছেলের মাথা থেকে এটা বেরিয়েছে। আমরা প্রশাসনকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি। আমি কখন পড়ে গিয়েছিলাম বা ডাক্তার দেখিয়েছি, তা-ও জানিয়েছি। পড়ে যাওয়ার পর সমবেদনা জানানোর বদলে নোংরা রাজনীতি করছে বিরোধীরা।’’
পার্থপ্রতিমের এই দাবি নস্যাৎ করেছে কংগ্রেস। দলের প্রাক্তন বিধায়ক সফিউল আলমের দাবি, ‘‘ওই নামে কংগ্রেসের কোনও দলীয় কর্মী নেই। তা ছাড়া, তৃণমূলের পার্টি অফিসে নিশ্চয়ই কংগ্রেসের কেউ থাকে না। ভিডিয়োটা তুলেছে তৃণমূলের লোক। পোস্টও করেছে তৃণমূলের লোক। কংগ্রেস এখানে কোথা থেকে এল? আর তৃণমূলের নেতারা যে তাঁদের কর্মীদের চাকরবাকর ভাবেন, তা প্রমাণ হল।’’ এই তরজায় বিজেপি নেত্রী বিনীতা রায়ের কটাক্ষ, ‘‘ভিডিয়োটা দেখে খুবই লজ্জা লাগছে। আমরা এতে ধিক্কার জানাই। তৃণমূলের শ্রমিকনেতার আচরণ মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে মনে করিয়ে দেয়। যেন দাসপ্রথা ফিরিয়ে আনছেন ওঁরা! সত্যিই, এই পার্টিটা কোথায় চলে গিয়েছে!’’