২০১৮ সালে অভিষেকের নেতৃত্বেই কোচবিহারে রাজনীতি করতেন নিশীথ। ফাইল চিত্র।
ভুল হয়েছিল, ক্ষমা চাইছি। বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিকের জন্য মাথাভাঙার জনতার উদ্দেশে এমনই মন্তব্য করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার মাথাভাঙা কলেজ ময়দানে জনসভা করতে এসেছিলেন তিনি। সেখানেই তাঁর বক্তৃতায় বার বার ঘুরে ফিরে এল নিশীথ প্রসঙ্গ। সেই প্রসঙ্গে এক বার কোচবিহারের আমজনতার কাছে ক্ষমা চাইলেন অভিষেক।
তিনি বলেন, ‘‘কোচবিহারের সাংসদ, যিনি এখন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, তিনি এক সময় আমার অধীনেই ছিলেন। কিন্তু আমি জানতে পারি ২০১৮ সালে আমার নাম করে পঞ্চায়েতে প্রার্থী করেছেন। সেই সময়েই তাঁকে বহিষ্কার করেছিলাম। আমরা যাঁদের আবর্জনা ভেবে বহিষ্কার করি, অন্যরা তাঁদের সম্পদ ভেবে নেয়। আমি মনে করি দুষ্টু গোরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল।’’ এর পরেই অভিষেক বলেন, ‘‘আমরা ভুল করলে ভুল স্বীকার করতে জানি। তাই আপনাদের কাছে ক্ষমা চাইছি। আপনারা আমার সঙ্গে থাকলে আমি সব ঠিক করব। এখন থেকে কোচবিহারের দায়িত্ব আমার। আপনাদের সমর্থন পেলেই সব কিছু ঠিক করা সম্ভব আমার পক্ষে।’’
২০১৮ সালে অভিষেক ছিলেন যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি। তাঁর নেতৃত্বেই কোচবিহারে রাজনীতি করতেন নিশীথ। ওই বছরই পঞ্চায়েত নির্বাচনে নিশীথের বিরুদ্ধে তৃণমূল প্রার্থীদের নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড় করানোর অভিযোগ ওঠে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই তাঁকে বহিষ্কার করা হয় তৃণমূল থেকে। ২০১৯ সালে নিশীথ যোগদান করেন বিজেপিতে। ওই বছরই বিজেপির প্রতীকে কোচবিহার থেকে প্রার্থী হন নিশীথ। তৃণমূল প্রার্থী পরেশ অধিকারীকে হারিয়ে সাংসদ হন নিশীথ। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটেও তাঁকে দিনহাটা কেন্দ্রে প্রার্থী করে বিজেপি। সেই ভোটেও উদয়ন গুহকে হারিয়ে জয় পান নিশীথ। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্বের নির্দেশে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। পরে রাজ্য থেকে চার জনকে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী করা হলে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হন নিশীথ। সেই নিশীথকেই কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন অভিষেক।
নিশীথের ওপর খড়্গহস্ত হয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘আমার নাম করে নৌকা ইত্যাদি প্রতীকে পঞ্চায়েত ভোটে নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড় করিয়েছিল। আমি জেনেই তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করি। সেই সময় কিন্তু আমি কোচবিহারের দায়িত্বে ছিলাম না। এখন কোচবিহারের দায়িত্ব আমার নিজের কাঁধে তুলে নিচ্ছি। তাই সেই সময় যে সব ভুল হয়েছিল এ বার আর তা হবে না।’’ শুধু এ ভাবেই আক্রমণ করে থামেননি অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘‘কোচবিহারের সমস্যা নিয়ে গত চার বছরে একটি বারের জন্য সংসদে সরব হননি এখানকার বিজেপি সাংসদ। এমনকি কোভিডের সময়ে কোচবিহারের মানুষ কেমন আছেন, তার খোঁজও নেওয়া হয়নি। সেই কঠিন সময়ে আপনাদের পাশে ছিল তৃণমূল।’’ নিশীথের কথা উল্লেখ করে কোচবিহারবাসীর প্রতি অভিষেকের সতর্কবার্তা, ‘‘কেউ আমার লোক নয়, যাঁরা মঞ্চে আছেন তাঁরাও নয়। যাঁরা নীচের ঘোরাফেরা করছেন তাঁরাও নয়। যদি কেউ বলে আমি অভিষেকের লোক, তাঁকে দাঁড় করিয়ে ‘এক ডাকে অভিষেক’-এ ফোন করুন।’’ ‘এক ডাকে অভিষেক’-এর ফোন নম্বরটিও জনসভায় জানিয়ে দিয়েছেন অভিষেক।
নিশীথের পাশাপাশি, কোচবিহারের ঘোকসাডাঙার পঞ্চায়েত প্রধান দীপ্তি বর্মণের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেছেন অভিষেক। তাঁর অভিযোগ, পঞ্চায়েত প্রধান হয়েই স্বজনপোষণে লিপ্ত হয়েছেন তিনি। অভিষেকের অভিযোগ, কোচবিহারে ১২৮টি পঞ্চায়েত আছে। ১২৭টি তৃণমূল জিতেছিল। ১টি বিজেপি জিতেছিল। বিজেপি পরিচালিত ঘোকসাডাঙা পঞ্চায়েত, মাথাভাঙা বিধানসভার অন্তর্গত। প্রধানের নাম দীপ্তি বর্মণ। স্বামী রতন বর্মণের নামে জব কার্ড তৈরি করেছেন ওই প্রধান। শ্বশুরের নামে আবাস যোজনার বাড়ির আবেদন করেছেন। সঙ্গে স্বামীর কাকা বিজন কুমার বর্মণও আবাস পেতে আবেদন করেছেন। পঞ্চায়েত প্রধান হয়েই দীপ্তির পরিবার জাতীয় সড়কের কাছে লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে জমি কিনেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।