অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘ইন্ডিয়া’ বনাম ‘ভারত’ বিতর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এমন বদলের আদৌ প্রয়োজন রয়েছে কি না তা নিয়েই মূলত তিনি মন্তব্য করেন। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক একই বিষয়েই বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করলেন মঙ্গলবার। বিজেপি নেতারা নানা রকম কথা বললেও কেন্দ্রের তরফে অবশ্য এখনও পর্যন্ত দেশের নামবদলের বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। এরই মধ্যে তৃণমূল নেতা তথা বিরোধী জোটের সমন্বয় কমিটির সদস্য অভিষেক নতুন প্রশ্ন তুলে দিলেন। তিনি দাবি করলেন, কেন্দ্রীয় সরকার নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে গিয়ে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে নজর সরাতেই এ হেন বিতর্ক তৈরি করছে।
মঙ্গলবার সমালোচনার পাশাপাশি কেন্দ্রের পাঁচ আশু কর্তব্য মনে করিয়েছেন অভিষেক। বুধবার ‘এক্স’-এ পোস্ট করে অভিষেক বলেন, দেশের নাম নিয়ে বিতর্ক তৈরি করে আসলে বিজেপি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে সাধারণের দৃষ্টি ঘোরাতে চাইছে। এর পরেই সরকারের কোন কোন দিকে নজর দেওয়া উচিত জানিয়ে পাঁচটি বিষয়ের উল্লেখ করেছেন অভিষেক— মূল্যবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা এবং সীমান্ত সুরক্ষা। একই সঙ্গে অভিষেকের পরামর্শ, কেন্দ্র যেন ডাবল ইঞ্জিন সরকার আর জাতীয়তাবাদের ফাঁকা বুলি না আওড়ায়।
জি২০ সম্মেলন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর দেওয়া রাষ্ট্রনেতাদের নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্রে ‘দ্য প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়া’র বদলে ‘দ্য প্রেসিডেন্ট অফ ভারত’ লেখা নিয়েই বিতর্কের সূত্রপাত হয় মঙ্গলবার। রাতে ‘প্রাইম মিনিস্টার অফ ভারত’ লেখা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ইন্দোনেশিয়া সফরের প্রচারপত্র সামনে আনে বিজেপি। তবে তার আগেই জোর বিতর্ক শুরু হয়ে যায় জাতীয় রাজনীতিতে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ-প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়াল স্পষ্টতই জানান, বিরোধী জোটের নাম ‘ইন্ডিয়া’ হওয়াতেই বিজেপি আচমকা ‘ভারত’ নাম নিয়ে রাজনীতির ময়দানে। আক্রমণ করা হয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও। এমনটা যে হতে পারে তা তিনি আগাম আশঙ্কা করেছিলেন বলে জানান কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ। এক্স-এ রমেশ মঙ্গলবার লেখেন, ‘‘তা হলে যেটা শুনেছিলাম, সেটাই সত্যি! আগামী ৯ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি ভবনে জি২০ নেতাদের নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্রে লেখা হয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ভারত’, অথচ চিরাচরিত ভাবে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়া’ লেখাই দস্তুর।’’
মমতা কোনও পোস্ট না করলেও তৃণমূলের বক্তব্য জানিয়েছিলেন সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই। মঙ্গলবার শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে নিজের বক্তব্যে মমতা বলেন, ‘‘আজকে তো ইন্ডিয়ার নাম চেঞ্জ করে দিচ্ছে বলে আমি শুনলাম। মাননীয় রাষ্ট্রপতির নামে যে কার্ড হয়েছে, জি২০-র লাঞ্চে না ডিনারে, তাতে লেখা আছে ভারত বলে। আরে ভারত তো আমরা বলি। এতে নতুনত্ব কী আছে?’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ইংরিজিতে বলি ইন্ডিয়া। ইন্ডিয়ান কনস্টিটিউশন। হিন্দিতে বলে ভারত কা সংবিধান। ভারত তো আমরাও বলি, ভারত আমার ভারতবর্ষ স্বদেশ আমার স্বপ্ন গো। এতে নতুন করে কিছু বলার নেই। কিন্তু ইন্ডিয়া নামে সারা বিশ্ব চেনে। হঠাৎ এমন কী হল?’’ এর পরে আশঙ্কার কথাও বলেছেন মমতা। মোদীর সরকারকে চড়া সুরে আক্রমণ শানিয়ে মমতা বলেছেন, ‘‘আজকে দেশের নামটাও চেঞ্জ হয়ে যাবে। কবে রবি ঠাকুরের নাম চেঞ্জ হয়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নাম চেঞ্জ করে দেওয়া হচ্ছে। বড় বড় ঐতিহাসিক সৌধের নাম বদল করে দেওয়া হচ্ছে। ইতিহাসকে পরিবর্তন করে দিচ্ছে।’’