ব্রাত্যের গলায় কি শুভেন্দুর সুর! গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
রাজ্যপালের সঙ্গে নবান্নের সংঘাত প্রকাশ্যে এসে গেল। রাজ্যপাল রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে যে চিঠি পাঠিয়েছেন তার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আক্রমণ শানালেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘ওই চিঠির বৈধতা আছে কি না তা দেখতে হবে। আমি উচ্চশিক্ষা দফতরের সচিবকে আইনি পরামর্শ নিতে বলেছি।’’ একই সঙ্গে ওই চিঠি যেন রাজভবন প্রত্যাহার করে নেয় সেই বার্তাও দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
সিভি আনন্দ বোসের সমালোচনা করার পাশাপাশি, প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী এবং জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে তুলনা করলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। রাজ্যপালের কয়েকটি নির্দেশ নিয়েই শুরু হয়েছে রাজ্যভবন ও নবান্নের সংঘাত। ওই নির্দেশে বলা হয়েছে, রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অন্তর্বর্তী উপাচার্যদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাপ্তাহিক কাজের রিপোর্ট রাজভবনে আচার্যের কাছে পাঠাতে হবে। রাজ্যপাল বোসের আগাম অনুমোদন নিতে হবে আর্থিক লেনদেন সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যদের কাছে রাজভবন থেকে এই মর্মে নির্দেশ পৌঁছেছে। ওই নির্দেশ সম্পর্কে ব্রাত্য জানান, উচ্চশিক্ষা দফতরকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে এই চিঠি উপাচার্যদের পাঠানো হয়েছে। রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে এমন ভাবে চিঠি পাঠানো যায় কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষামন্ত্রী।
বর্তমান রাজ্যপালকে নিয়ে প্রথম দিকে খুশিই ছিল বাংলার শাসক তৃণমূল। তখন বিজেপির অভিযোগ ছিল, রাজ্যপাল তৃণমূলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করছেন। রাজভবনের প্রধান সচিব পদ থেকে নন্দিনী চক্রবর্তীকে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে নতুন করে রাজভবন-নবান্ন সংঘাত শুরু হয়। এখনও পর্যন্ত নবান্নের পাঠানো তালিকা থেকে কাউকে বোস না-বাছায় রাজভবনের প্রধান সচিব পদ খালি। তবে বিজেপির মধ্যে রাজ্যপালকে নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। রাজ্যপালকে নিয়ে দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার কোনও বিরূপ মন্তব্য না করলেও টানা আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বার বার তিনি গোপালকৃষ্ণ এবং ধনখড়ের মতো নন বোস বলে সমালোচনা করছেন।
এ বার রাজ্যের মন্ত্রীর গলাতেও সেই তুলনা। ব্রাত্য শুক্রবার সেই তুলনার সময়ে বলেন, ‘‘আমরা গোপালকৃষ্ণ গান্ধী, জগদীপ ধনখড়কে দেখেছি। তাঁরা যা চান পরিষ্কার করে বলেন। এম কে নারায়ণনের মতো অনেকে আবার কিছুই বলেন না। ভাসা ভাসা বিবৃতি দিয়ে লাভ নেই। যেটা বলার পরিষ্কার করে বলুন।’’ ব্রাত্যের দাবি, রাজ্যপাল যেটা অনুভব করেন সেটা বলেন না। আর যেটা বলেন, সেটা অনুভব করেন না। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বোসের সাম্প্রতিক মন্তব্য নিয়েও তিনি সমালোচনা করেন। সেই প্রসঙ্গে রোমান দার্শনিক সেনাকাকে উদ্ধৃত করে ব্রাত্য বলেন, ‘‘এক রকম অনুভব করে আর এক রকম লেখা অন্যায়। এবং এক রকম অনুভব করে আর এক রকম বলাটা পাপ।’’