Amit Shah

৩ দিনে চতুর্থ বার তোপ তৃণমূলের, ভাঁওতা দিচ্ছেন শাহ, মন্তব্য পার্থর

পার্থবাবু শুরুতেই কটাক্ষ ছোড়েন অমিত শাহের ‘সোনার বাংলা গড়া’ সংক্রান্ত মন্তব্যের দিকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২০ ২১:৫২
Share:

সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে ফের অমিত শাহকে বিঁধলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়রা।—নিজস্ব চিত্র।

আরও এক বার তোপ দাগল তৃণমূলঅমিত শাহের ভার্চুয়াল র‌্যালি শেষ হতেই প্রথমে আক্রমণে নামানো হয়েছিল অরূপ বিশ্বাসকে। তার কিছু ক্ষণ পরেই ডেরেক ও’ব্রায়েন, অমিত মিত্র এবং দীনেশ ত্রিবেদী এক যোগে বিঁধেছিলেন বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতিকে। পরের দিন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ খুলেছিলেন। শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেনকে ‘করোনা এক্সপ্রেস’ তিনি বলেননি বলে জানিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার ফের আর এক দফা ‘জবাব’ দেওয়া হল তৃণমূলের তরফ থেকে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সাংবাদিক সম্মেলন হল তৃণমূল ভবনে। আয়ুষ্মান ভারত থেকে পিএম কিসান, পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা থেকে সোনার বাংলা গড়ার প্রতিশ্রুতি— একের পর এক বিষয়ে অমিত শাহকে খণ্ডন করার চেষ্টা করল রাজ্যের শাসক দল।

Advertisement

তৃণমূল মহাসচিব তথা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে ছিলেন আর এক মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিধায়ক সমীর চক্রবর্তী। মন্ত্রী বা বিধায়ক হিসেবে অবশ্য নয়, তৃণমূল নেতা হিসেবেই এই সাংবাদিক সম্মেলন ডেকেছিলেন তাঁরা। পার্থবাবু শুরুতেই কটাক্ষ ছোড়েন অমিত শাহের ‘সোনার বাংলা গড়া’ সংক্রান্ত মন্তব্যের দিকে। বাংলার সংস্কৃতি সম্পর্কে অমিত শাহরা কতটুকু জানেন, সে প্রশ্ন তোলেন পার্থ। মনে করিয়ে দেন বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনা। লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে উত্তর কলকাতায় রোড শো করেছিলেন অমিত শাহ। সেই রোড শো ঘিরে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছিল। প্রথমে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রবেশপথের সামনে, পরে বিদ্যাসাগর কলেজের সামনে। ওই গোলমালে বিদ্যাসাগরের মূর্তিও ভেঙে যায়। বিজেপির বিরুদ্ধে মূর্তি ভাঙার অভিযোগ তুলে আক্রমণের সুর তুঙ্গে তোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও অভিযোগ করেন যে, ওই দিন অমিত শাহের উপস্থিতিতেই বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা হয়েছিল। বাংলার সংস্কৃতি মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে আপনারা সোনার বাংলা গড়বেন? এ দিন প্রশ্ন ছোড়েন পার্থ।

মঙ্গলবারের ভার্চুয়াল সভা থেকে অমিত শাহ রাজ্য সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে ১০ বছরের কাজের হিসেব চেয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় সরকারের কয়েকটি প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে অমিত শাহ বলেছিলেন, এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নিজের কাজের হিসেব দিন। পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন সে প্রসঙ্গ তুলে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন বিজেপির দিকে। প্রচেষ্টা প্রকল্প, স্নেহের পরশ প্রকল্প-সহ রাজ্য সরকারের সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে পার্থ জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের সব কাজের হিসেব ওয়েবসাইটে দেওয়া রয়েছে, পারলে বিজেপি-ও ওয়েবে সে সব প্রকাশ করুক।

Advertisement

আরও পড়ুন: রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ছুঁতে চলেছে, এক দিনে আক্রান্ত ৪৪০

আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গে চালু হতে না দেওয়ার অভিযোগ তুলে অমিত শাহ প্রবল আক্রমণ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। রাজ্যে বিজেপির সরকার এলে মুখ্যমন্ত্রী শপথ নেওয়ার ১ মিনিটের মধ্যে ওই প্রকল্প রাজ্য চালু করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। সে প্রসঙ্গে এ দিন বিজেপি-কে ‘জবাব’ দেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় সরকার ওই আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প চালু করার অনেক আগেই পশ্চিমবঙ্গে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প চালু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মনে করিয়ে দেন রাজীব। তিনি জানান, ওই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের দেড় কোটি পরিবারের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে স্বাস্থ্যবিমা, কিন্তু কেন্দ্রের আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের মাধ্যমে ১ কোটি ১২ লক্ষ পরিবার স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা পাবে। কেন্দ্রের প্রকল্প গ্রহণ করলে রাজ্যের ৩৮ লক্ষ পরিবার স্বাস্থ্যবিমা থেকে বঞ্চিত হত বলে তিনি দাবি করেন। শুধু নিখরচায় স্বাস্থ্যবিমা দেওয়া নয়, যে কোনও সরকারি হাসপাতালে সকলের জন্য নিখরচায় চিকিৎসাও যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার চালু করেছে, তা-ও এ দিন রাজীব মনে করিয়ে দেন। বিজেপি কখনও ক্ষমতায় এলে সে সব সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে বলে দাবি করেন রাজীব।

আরও পড়ুন: রাজনীতি নয়, গঠনমূলক কাজের ডাক অভিষেকের, সূচনা যুবশক্তির

প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি (পিএম কিসান) প্রকল্প বাংলায় চালু হতে না দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বঞ্চিত করছেন রাজ্যের কৃষকদের— এমন অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার তোপ দেগেছিলেন অমিত শাহ। পাল্টা তোপ ফিরিয়ে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য এই সব প্রকল্পের কথা বলছে বিজেপি। রাজীবের কথায়, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই রাজ্যের কৃষকদের ৫ হাজার টাকা করে দিয়েছেন।’’

অমিত শাহ বলেছিলেন, রাজ্য সরকার কৃষকদের তালিকা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্র তাঁদের অ্যাকাউন্টে ৬ হাজার টাকা করে দিয়ে দেবে। রাজীব এ দিন সে প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘‘সত্যিই যদি অত দরদ থাকে, তা হলে আমরা পরিযায়ী শ্রমিকদের তালিকা দিচ্ছি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা মেনে নিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে পিএমকেয়ারস থেকে ১০ হাজার টাকা করে এখনই দিন।’’

রাজীবের কথার সূত্র ধরেই ফের আক্রমণ করেন পার্থ। বিজেপি নানা ভাঁওতা দিয়ে রাজ্যের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। কালো টাকা উদ্ধার করে সবার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে কেন দেওয়া হল না? প্রশ্ন তোলেন পার্থ। অমিত শাহ যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছেন, সেগুলোও পূরণ করা হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement