প্রতীকী ছবি।
শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি নির্ভর করে তাঁদের দক্ষতার উপরে। সরকারি নিয়মবিধি অনুযায়ী ছ’মাস অন্তর ন্যূনতম মজুরির হার সংশোধিত হয়। সম্প্রতি চালু নিয়ম মেনে সেই হারে সংশোধন করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু সংশোধিত মজুরির সেই হার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসেরই কর্মচারী সংগঠনকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। তাদের অভিযোগ, দুর্মূল্যের বাজারে মজুরি বৃদ্ধির হার যথেষ্ট নয়। অদক্ষ শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি নিয়েও সরব হচ্ছে তারা।
সরকারের সংশোধনের পরে অদক্ষ, অল্প দক্ষ, দক্ষ এবং উচ্চ দক্ষতার নিরিখে আগের থেকে ন্যূনতম মজুরি কিছুটা বেড়েছে। সাধারণ ভাবে রাজ্যের দু’টি এলাকার ন্যূনতম মজুরিতে পার্থক্য থাকে। পুর নিগম, পুরসভা, নোটিফায়েড বা বিজ্ঞাপিত এলাকা, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং টাউনশিপ এলাকায় (‘জ়োন এ’) ন্যূনতম মজুরির হার কিছুটা বেশি। রাজ্যের বাকি অংশ (‘জ়োন বি’) পৃথক এলাকাভুক্ত। সেখানে সেই হার কিছুটা কম। সম্প্রতি সংশোধিত হার অনুযায়ী ‘জ়োন এ’ এলাকায় অদক্ষ শ্রমিকদের দৈনিক ন্যূনতম মজুরি ৩৫৫ টাকা (আগে ছিল ৩৩৮)। ‘জ়োন বি’ এলাকায় সেই পরিমাণ ৩২২ টাকা (আগে ছিল ২৯৬)। মাসিক হিসাবে মজুরির পরিমাণ যথাক্রমে ৯২৩৯ এবং ৮৩৮০ টাকা। অল্প দক্ষ শ্রমিকদের ক্ষেত্রে ‘জ়োন এ’ এলাকায় দৈনিক ন্যূনতম মজুরি ৩৭১ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৯১ টাকা। ‘জ়োন বি’ এলাকায় তা ৩২৫ থেকে বেড়ে ৩৫৪ টাকা হয়েছে। ওই দুই এলাকায় দক্ষ শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি আগে ছিল যথাক্রমে ৪০৯ এবং ৩৫৮ টাকা। এখন তা যথাক্রমে ৪৩০ এবং ৩৯০ টাকা হয়েছে। নতুন ব্যবস্থায় উচ্চ দক্ষতার শ্রমিকেরা ওই দুই এলাকায় ন্যূনতম মজুরি পাবেন যথাক্রমে ৪৭৩ এবং ৪২৯ টাকা। আগে তা যথাক্রমে ৪৪৯ এবং ৩৯৪ টাকা ছিল।
রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের একাংশ মত, রাজ্য সরকারের উৎকর্ষ বাংলা প্রকল্পটিকে আরও সক্রিয় ভাবে বলবৎ করা উচিত। অদক্ষ শ্রমিকদের দক্ষ করাই এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য। প্রশ্ন, এই কর্মসূচির পরেও বেশির ভাগ শ্রমিকই অদক্ষ থেকে যাবেন কেন? ন্যূনতম বেতনের পরিমাণ নিয়েও অসন্তোষ আছে। সংগঠনের প্রবীণ নেতা মনোজ চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘এই মজুরি আজকের বাজারে খুবই কম। তাই এক দিকে যেমন অদক্ষদের দক্ষ করতে হবে, তেমনই ন্যূনতম মজুরির বিষয়টিও দেখতে হবে গুরুত্ব দিয়ে।’’
সরকারি সূত্রের বক্তব্য, উৎকর্ষ বাংলা কর্মসূচি রূপায়ণের চেষ্টা চলছে যথেষ্টই। প্রতিটি জেলা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে সক্রিয় করা হয়েছে। শিল্প মহলের চাহিদা বুঝে কর্মপ্রার্থীদের দক্ষ করে তোলার কর্মসূচি নিয়েছে কারিগরি শিক্ষা দফতর। কয়েক হাজার কর্মপ্রার্থীর কাজের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, প্রায় ৩৩ ধরনের কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকেরা স্তর ভিত্তিতে ন্যূনতম মজুরির এই সুবিধা পাবেন। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই মজুরি-হার কার্যকর থাকবে। তার পরে ফের তা সংশোধিত হবে।