—প্রতীকী ছবি।
লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে রাজ্যের প্রায় ৭০% শহরে দলের পিছিয়ে থাকা নিয়ে সঙ্কটে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। শুধু তা-ই নয়, বিধানসভা ভোটের আগে এই পরিস্থিতি বদল করতে পদক্ষেপ নিয়েও তীব্র টানাপড়েন শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। দলের একাংশের মতে, অবিলম্বে স্থানীয় স্তরে ‘মুখ’ বদল না করলে বিধানসভা ভোটে বড় মূল্য দিতে হবে তৃণমূলকে। আর এক অংশ অবশ্য তাতে ‘বিদ্রোহে’র ঝুঁকি দেখছে। তবে শহরের এই ‘বিপদ’ মেনে নিচ্ছে দু’পক্ষই।
এ বারের লোকসভা ভোটে জয়ের আড়ালে ‘বিপদ’ লুকিয়ে রয়েছে তৃণমূলের। প্রাথমিক পর্যালোচনায় দেখা গিয়েছে, যে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ গোটা রাজ্যে বিরোধীদের রুখে দিতে পেরেছে বলে মনে করা হচ্ছে, তা ততটা কাজে আসেনি পুর-অঞ্চলে। পুর-নিগম, বড় পুরসভা তো বটেই মফস্সলে দলের হাতে থাকা ছোট পুরসভাগুলিতেও বিপর্যস্ত হয়েছে তৃণমূল। এমন পুরসভাও রয়েছে, যার ৮০-৯০% বা তার বেশি ওয়ার্ডেই পিছিয়ে রয়েছে শাসক দল। তৃণমূলের মেয়র, চেয়ারম্যান, মন্ত্রী-নেতাদের নিজেদের ওয়ার্ডে হেরে যাওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করে পদক্ষেপের প্রয়োজন মানছেন দলীয় নেতৃত্ব।
দলীয় পর্যালোচনায় এই ফলের পিছনে স্থানীয় নেতৃত্বের ভাবমূর্তি, দুর্নীতি, গা-জোয়ারিকেই চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই সূত্রেই ‘মুখ’ বদলের পক্ষে এক নেতার যুক্তি, ‘‘কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩২টি তৃণমূলের হাতে। কিন্তু লোকসভা ভোটে উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতা মিলিয়ে ৪৫টিতে এগিয়ে গিয়েছে বিজেপি। সরকারের সব প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ার পরে কেন এই জনমত, তা ভাবতেই হবে।’’ এবং এই মূল্যায়নের ভিত্তিতেই তাঁরা চাইছেন, এই সব এলাকায় দল ও জনপ্রতিনিধি স্তরে কিছু বদল আনা হোক। তাঁদের মতে, পুর-প্রতিনিধিদের একাংশ রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কহীন। নিজের ভোটটুকু নিশ্চিত করলেও অন্য ভোটে ‘নিষ্ক্রিয়’ থাকেন। এবং অন্য এমন সব কাজে যুক্ত, যা মানুষ পছন্দ করছেন না।
দলের নজরে এসেছে শিলিগুড়ি, আসানসোল পুরসভা। শিলিগুড়ির ৪৭টি ওয়ার্ডের ৪৬টিতে হেরেছে তৃণমূল। শিলিগুড়িতে ২০১৬ সালের পর থেকে দলের ক্ষয় ক্রমেই বেড়েছে। তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘মানুষের আস্থা অর্জনে মুখ্যমন্ত্রী বারবার শিলিগুড়ি গিয়েছেন। তার পরেও কাজকর্মে কোনও উন্নতি হয়নি। ফলে, স্থানীয় নেতৃত্বের দায়বদ্ধতা অবশ্যই আতশকাচে আসা দরকার।’’ আসানসোল পুরসভা নিয়েও দুর্ভাবনায় রয়েছে তৃণমূল। পূর্ব বর্ধমান, বীরভূম, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনার মতো জেলাগুলির বহু পুরসভায় তৃণমূলের হাল ভাল নয়। রাজ্যে আগে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের মাঝের সময়ে পুরভোট হত। কিন্তু কোভিডের জেরে ভোটের সময় পরিবর্তন হওয়ায় বিধানসভা ভোটের আগে পুরভোট হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাই শহুরে ভোট সংক্রান্ত উদ্বেগ সঙ্গে নিয়েই বিধানসভা ভোটে নামতে হতে পারে তৃণমূলকে।
উত্তরে আলিপুরদুয়ার থেকে শুরু করে দক্ষিণে বনগাঁ বা পশ্চিমে মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম পুরসভার মতো শহরে ভোটার তৃণমূলকে প্রত্যাখ্যান করেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের দু’টি লোকসভা আসন জিতলেও সিংহভাগ পুরসভায় বিজেপির থেকে পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। এই হিসেব সামনে রেখে দলের একাংশ যে মুখ বদল চাইছে, তা নিয়ে আপত্তিও রয়েছে। মুখবদলের বিরোধিতা করে অন্য অংশের দাবি, বিষয়টি এত সরল নয়। আর্থিক এবং সামাজিক সুযোগ-সুবিধার নিরিখেই শহরে সরকারি প্রকল্পের কার্যকারিতা বিচার করা দরকার। তা ছাড়া, ধর্মীয় মেরুকরণের প্রভাব বেশি থাকায় শহরে প্রত্যাশিত ফল হয়নি। বরং বিধানসভা ভোটের আগে দলের অন্দরে ঝাঁকুনি লাগলে ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।