ফাইল চিত্র।
এ বারের ২১ জুলাইয়ে তৃণমূলের সমাবেশে কেমন ভিড় হবে, তা নিয়ে নানা মহলেই কৌতূহল বাড়ছে।
লোকসভা ভোটে বিজেপির কাছে ধাক্কা খাওয়ার পরে ২১ জুলাইয়ের শহিদ দিবসের সভাই তৃণমূলের সব চেয়ে বড় সমাবেশ। শহিদ সমাবেশের ৪৮ ঘণ্টা আগেই মঞ্চ তৈরির কাজও শেষের পথে। বিভিন্ন জেলা থেকে লোক আসা শুরু হয়েছে।
এ বার সমাবেশ রবিবার। ছুটির দিন হওয়ায় ধর্মতলা সংলগ্ন রাস্তায় পথচলতি মানুষের ভিড় কিছুটা হলেও কম থাকবে বলে অনেকেরই ধারণা। দলীয় নেতৃত্বও এ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। সে কারণে সংগঠিত ভিড়ের উপরেই শাসক দলকে অনেকটাই ভরসা করতে হতে পারে বলে অনেকের অভিমত। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেন, ‘‘গত বারের রেকর্ড ছাপিয়ে যাবে এ বার। আগামী দিনের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ শুনতেই মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আসবেন।’’
অন্যদিকে, বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কটাক্ষ, ‘‘কত লোক হবে, দেখা যাবে! বাংলার মানুষ লোকসভা ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বার্তা দিয়ে দিয়েছে। এখন যাঁদের পরামর্শদাতা নিয়োগ করেছেন, তাঁদের কথায় ২১শের মঞ্চ থেকে তিনি দুঃখপ্রকাশ বা ক্ষমা প্রার্থনার পথে যাবেন বলেই মনে হয়।’’ পার্থবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বক্তৃতা করতে কারও পরামর্শ, উপদেশ নিতে হয় না। তিনি মানুষের মনের কথা বলেন। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে তাঁর বক্তব্যই দিকনির্দেশের কাজ করে।’’
বরাবরের মতোই ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে ত্রিস্তরীয় মঞ্চ তৈরি হয়েছে। একদিকে থাকবেন শহিদ পরিবারেরা। মূল মঞ্চে থাকবেন মন্ত্রী-বিধায়ক, সাংসদেরা। তবে এ বার কৌতূহল বাড়ছে মঞ্চে ওঠার মূল সিঁড়ির পাশের ছোট্ট একটি ঘর নিয়ে। ওই ঘরে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর বসবেন কি না, তা নিয়েও গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
লোকসভায় বিজেপির কাছে হারলেও কোচবিহার, মালদা, উত্তর দিনাজপুর থেকে কর্মী-সমর্থকেরা শুক্রবার সকালেই পৌঁছে গিয়েছেন কলকাতায়। দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ থেকে বাসেই সমর্থকদের আনার ব্যবস্থা হয়েছে। সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্ক, কসবার গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম, আলিপুরের উত্তীর্ণ, ধর্মতলার ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে জেলা থেকে আসা সমর্থকদের রাখার ব্যবস্থা হয়েছে। বেশিরভাগ জেলা থেকেই এ বার ট্রেনে আনার বন্দোবস্ত হচ্ছে বলে দলীয় সূত্রের খবর। আগে জেলা থেকে প্রচুর বাস ভাড়া করে সমর্থক আনত তৃণমূল। এ বার সেই রেওয়াজে অনেকটাই ভাটা বলে জানা গিয়েছে।
খোদ পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুর থেকে এ বার শ’খানেক বাস কম আসছে একুশে জুলাইয়ের সমাবেশে। তৃণমূল সূত্রে খবর, এ বছর মোট ৩২৫টি বাস ভাড়া করা হয়েছে। গত বছর এই সংখ্যাটাই ছিল চারশোর বেশি। যদিও জেলা তৃণমূলের সভাপতি শিশির অধিকারীর দাবি, ‘‘হাতে এখনও সময় আছে। শেষ পর্যন্ত এ বারও বাসের সংখ্যাটা চারশো পেরিয়ে যাবে।’’
পশ্চিম মেদিনীপুরেও গত বারের তুলনায় এ বার অর্ধেক বাস ভাড়া করা হচ্ছে বলে জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মৃগাঙ্ক মাইতি জানিয়েছেন। এ বার ভাড়া হয়েছে ৬০০টি বাস। গত বার তা ছিল শ’তিনেক। ঝাড়গ্রামের বেশিরভাগ কর্মীই ট্রেনে কলকাতা যাবেন বলে ঠিক হয়েছে। টাকার অভাবে বাস ভাড়া করা সম্ভব হচ্ছে না জানিয়ে জেলার তৃণমূল সভাপতি বিরবাহা সরেন বলেন, ‘‘বাস ভাড়া করার জন্য টাকা পাইনি। প্রতিটি ব্লক নিজের মতো করে ব্যবস্থা করছে।’’
পূর্ব বর্ধমানে প্রতিটি পঞ্চায়েতের বাস মালিকদের সঙ্গে কথা বলে বাস ভাড়া করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে পশ্চিম বর্ধমানের সমর্থকেরা ট্রেনেই কলকাতা আসবেন বলে নেতাদের দাবি। বাঁকুড়ায় বাস ভাড়ায় জোর দেওয়া হচ্ছে। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে ট্রেন-ছোট গাড়ি মিলিয়ে সমর্থকেরা আসবেন বলে জানা গিয়েছে। বাসের পাশাপাশি ট্রেনেও হুগলি থেকে লোক আসবে বলে জানিয়েছেন জেলা সভাপতি দিলীপ যাদব। সেখান থেকে কম করে ৪০০টি বাস আসবে বলে দিলীপ জানান। হাওড়া থেকেও শ’পাঁচেক বাসবোঝাই মানুষ আসবে বলে জেলা নেতৃত্ব জানিয়েছেন। এ দিন দিনভর হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশনে বিভিন্ন জেলা থেকে লোক এসে পৌঁছেছেন।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।