প্রতীকী ছবি।
জয়েন্ট এন্ট্রান্স ( মেইন) পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে বাংলা ভাষা অন্তর্ভুক্ত না হলে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে সেই অধিকার ছিনিয়ে আনার হুমকি দিল তৃণমূল। অন্যদিকে, কার্যত রাজ্যের দাবির পাশে দাঁড়িয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও বলেছেন, ‘‘রাজ্যের প্রতি কোনও অবিচার হতে দিতে পারি না। প্রয়োজনে এটা নিয়ে আমাকে লড়াই করতে হবে।’’
জয়েন্টের সর্বভারতীয় পরীক্ষায় হিন্দি, ইংরাজির পাশাপাশি কেন আঞ্চলিক ভাষার মধ্যে শুধু গুজরাতিতে প্রশ্নোত্তরের সুযোগ থাকবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। বাংলা-সহ সব আঞ্চলিক ভাষাতেই এই প্রশ্ন হোক, এই দাবিতে সোমবার কলকাতায় গাঁধীমূর্তির পাদদেশে যুব তৃণমূল কেন্দ্র-বিরোধী সমাবেশ করে। সেখানে যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘‘বিজেপির ৩০২ জন সাংসদ। আমাদের ২২। ৩০২ বনাম ২২-এর লড়াইয়ে দেখা যাক কার কব্জির জোর বেশি। বাংলা ভাষা অন্তর্ভুক্ত না হলে দিল্লির বুক থেকে নিজেদের অধিকার ছিনিয়ে আনব আমরা।’’ রাজ্যপাল জানিয়েছেন, ‘‘যে এজেন্সি এ কাজ করছে, তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। সব কাগজ দেখে দু’তিনদিনের মধ্যেই রাজ্যকে জানাব কেন এমন হয়েছে। যা করার হোমওয়ার্ক করে করব।’’
চলতি মাসে সংসদের অধিবেশনেও তৃণমূল জয়েন্টে বাংলা ভাষা-সহ আঞ্চলিক ভাষা অন্তর্ভুক্তির দাবি তুলবে বলেও জানান অভিষেক। বর্ষীয়ান মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, ‘‘বাংলা আবেদন জানায়নি বলে কেন্দ্র বলছে। কিন্তু আবেদন করে তো এটা হয় না। দেশের সব রাজ্যের মাতৃভাষায় পরীক্ষায় দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে কি না, সেটা তো কেন্দ্রীয় নীতিগত সিদ্ধান্ত। কেন্দ্র কী সব রাজ্যকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল যে তারা সব মাতৃভাষায় প্রশ্ন করতে আগ্রহী?’’ অন্য তিন মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, তাপস রায় বাংলার দাবিতে আন্দোলন রাজ্যের জেলায় জেলায় ছড়িয়ে দেওয়ার ডাক দেন।
আরও পড়ুন: এ বার ধনখড় ক্ষুব্ধ হেলিকপ্টার না-পেয়ে
বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান, বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীও ইতিমধ্যেই বাংলার দাবি নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেছেন। মান্নান-সুজনবাবুরা বলেন, তাঁরা শুধু বাংলার কথা বলতে আসেননি। আঞ্চলিক ভাষার জন্য আবেদন করার সুযোগ আছে, এই কথা সব রাজ্য জানত কি না, তা তো ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি স্পষ্ট করেনি।
তৃণমূলের এই দাবির প্রেক্ষিতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘বাংলা থেকে কতজন সর্বভারতীয় জয়েন্টে বসেন? গুজরাত থেকে তো ৬০ হাজার পড়ুয়া জয়েন্টে পরীক্ষা দেন। আর বাংলার কাছে তো জানতে চাওয়া হয়েছিল, তারা বাংলায় প্রশ্ন করতে আগ্রহী কিনা। তখন তো বাংলা কোনও উত্তর দেয়নি।’’ এর জবাবে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘কোন রাজ্যে কত ছাত্র, তার উপরে কি ভাষার অগ্রাধিকার নির্ভর করে? বিজেপি তো শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চাইছে! আমাদের কাছে কখনও এ ব্যাপারে জানতেই চাওয়া হয়নি। উত্তর দেব কী! আমরা আগেই একবার আবেদন জানিয়েছিলাম। আর ৭ নভেম্বর দ্বিতীয় বার আবেদন করেছি।’’
আরও পড়ুন: তথ্য যাচাই চলবে গোটা নভেম্বরই
একটা বিষয় সামনে এসেছে। বাংলা ভাষার অন্তর্ভুক্তি নিয়ে। আমাকে এটা নিয়ে লড়াই করতে হবে। এটা আমার কর্তব্য। আমি রাজ্যের প্রতি কোনও অবিচার হতে পারি না। দিল্লিতে এ নিয়ে কথা বলেছি। যে এজেন্সি এ কাজ করছে, তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। সব কাগজপত্র দেখে দু’তিনদিনের মধ্যেই আমি জানিয়ে দেব, কেন এরকম হয়েছে। রাজ্য সরকারকেও জানাব। যা করার হোমওয়ার্ক সেরেই করব। রাজ্য থেকে একটা চিঠি গেলে বাংলা অন্তর্ভুক্ত করা হত।