গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
দেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে বাংলার ভূমিকা আমাদের প্রত্যেকেরই কম-বেশি জানা আছে। আর স্বাধীনতার প্রধান অঙ্গীকার ছিল একটা অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও সমতাভিত্তিক ভারতবর্ষের নির্মাণ। কিন্তু ৭৩ বছর পর আজ আমরা যদি গণতন্ত্র ও সমতাভিত্তিক সমাজের কথা বলি, তা হলে আজকের পশ্চিমবঙ্গ কোথায় দাঁড়িয়ে? পশ্চিমবঙ্গ এমন এক রাজত্বে পরিণত হয়েছে, যেখানে মানুষ তাঁর ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকারটা প্রয়োগ করার জায়গায় নেই। ভোটদানের অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে যেখানে নাগরিককে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হাতে খুন হতে হয়, সেখানে আমরা কোন মুখে গণতন্ত্রের বড়াই করব বুঝতে পারি না। তার পরে যখন দেবেন্দ্রনাথ রায়ের মতো একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির নিথর দেহ নিজের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে ঝুলন্ত, হাত বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায়, তখন এই গণতন্ত্রের ধামাধারীদের মৌনব্রত আমাকে শুধু উদ্বিগ্নই করে না, ইহকালের সমস্ত দায়িত্ব আমরা কী রকম একটা শক্তির হাতে সঁপে দিয়েছি, তার জোরালো প্রমাণ মেলে।
আজ আমরা এমন রাজ্যে বাস করি, যেখানে আপনি প্রকাশ্যে আপনার রাজনৈতিক মতামত রাখতে ভয় পান, পাছে ‘অনুপ্রাণিত’ দামাল ছেলেরা আপনাকে বা আপনার পরিবারকে আক্রমণ করে। এ রকম একটা সমাজ ব্যবস্থার কথা মাথায় রেখেই কি তৃণমূল তাদের রাজনৈতিক ঘুঁটি সাজিয়েছিল? এ কথা ঠিক যে, এই রাজ্যের আপামর জনতা ৩৪ বছর ধরে সিপিএমের অত্যাচার থেকে পরিত্রাণ চেয়েছিল। কিন্তু তৃণমূল সরকার আসার পরে কি রাজ্যের শাপমুক্তি ঘটেছে?
গত কয়েক দশকের রাজনৈতিক হিংসার পরম্পরা আজও পশ্চিমবঙ্গে সমানে অব্যাহত। বাম আমলের খুনের রাজনীতি গোটা বাংলার মাটিকে রক্তে রাঙিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু তৃণমূল, যারা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার নিয়ে শাসনভার গ্রহণ করেছিল, তাদের শাসনকালেও যে ভাবে রাজনৈতিক হানাহানি চলছে, তাতে এই রাজ্যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক খুনোখুনি বন্ধ হওয়া অসম্ভব। রাজ্যের মানুষ বামেদের ৩৪ বছরের অপশাসনের বিরুদ্ধে মত প্রদান করেছিলেন সামাজিক সুরক্ষা এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মানবিক মর্যাদার কথা মাথায় রেখে। কিন্তু সেই জনমতে সম্মান দেখানোর বিন্দুমাত্র লক্ষণ বর্তমান শাসক দল গত ৯ বছরে দেখাতে পারেনি। শুধু একজন সাধারণ রাজ্যবাসী নন, এ রাজ্যে গত ৯ বছরে কোনও বিরোধী রাজনৈতিক কর্মী, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, এমনকি পক্ষপাতহীন কর্মরত পুলিশও নিরাপদ বোধ করেননি। এই হল রাজ্যবাসীকে ‘মমতাময়ী’ মুখ্যমন্ত্রীর তরফ থেকে গণতান্ত্রিক পুরস্কার। সিপিএম কী ভাবে তাদের ৩৪ বছরের শাসনকালে একের পর এক রাজনৈতিক হত্যার মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে সন্ত্রস্ত্র করে পেশীশক্তির আস্ফালনে বিশ্বাসী একটা দলে পরিণত হয়েছিল, তা আমরা দেখেছি। আর এখন তো প্রকাশ্য ভোট-ডাকাতিই রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ যাঁরা সরকারে আছেন, তাঁরা কথায় কথায় রাজ্যে সর্বত্র উন্নয়নের বুলি আওড়ান। জনগণের জন্য সত্যিই যদি অঢেল উন্নয়ন করে থাকেন, তা হলে তো বুকের জোর অনেক বেশি হওয়া উচিত। কেন তাঁদের ভোট ডাকাতি করতে হয়?
যে উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদে বিধায়কের ঝুলন্ত দেহ মিলল, সেই উত্তর দিনাজপুরেরই দাঁড়িভিট আমি এখনও ভুলিনি, কখনও ভুলবও না। ইসলামপুর মহকুমার দাড়িভিট উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা তৈরি হল। পুলিশ-ছাত্র সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই তরতাজা পড়ুয়া লুটিয়ে পড়ল। সে ক্ষত এখনও আমার মনে টাটকা। তাদের অপরাধ ছিল, তারা ওই স্কুলে বাংলা ভাষার শিক্ষক নিয়োগের পক্ষে আন্দোলন করেছিল, কিন্তু শাসক চেয়েছিল উর্দু শিক্ষক নিয়োগ করতে। অতএব গুলি চালিয়ে চুপ করিয়ে দেওয়া হল। সেপ্টেম্বরে সেই ঘটনার দু’বছর পূর্ণ হবে। কিন্তু আজ অবধি তাপস বর্মণ ও রাজেশ সরকারের পরিবার কোনও ন্যায় বিচার পায়নি। সোমবার সেই জেলাতেই আবার একটা নির্মম মৃত্যু দেখলাম আমরা। বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়ের অকালমৃত্যু থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় যে, হিংসা ছাড়া ক্ষমতায় টিকে থাকার কোনও উপায় এই সরকার খুঁজে পাচ্ছে না।
শুধু আমাদের দলের কথা না, শাসকদল নিজেদের বিধায়ককে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ। কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসকে নিজের এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হতে হয়, কিন্তু তার বিচার আজও হয়নি। তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের নির্দেশে পুলিশ আমাদের দলের মুকুল রায়কে সেই খুনের মামলায় ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র করে। সিআইডি-কে দিয়ে মুকুল রায়কে জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করানো হয়েছিল। রানাঘাটের বর্তমান সাংসদ জগন্নাথ সরকারকেও জড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যে শক্ত, সে কথা মাননীয়া বেশ ভালই বুঝতে পেরেছেন। তিনি সেই সত্য আরও একবার টের পাবেন। আমাদের বিশ্বাস, দেবেন্দ্রনাথ রায়ের মৃত্যু আরও একটা রাজনৈতিক হত্যা। আর তাই আমরা রাজ্য পুলিশ বা সিআইডির উপরে কোনও ভরসা রাখতে পারছি না। আমাদের দল সিবিআই তদন্ত চায় যাতে তদন্তে কোনও প্রভাব শাসক দল না ফেলতে পারে।
যে সব গ্রামীণ এলাকায় বিজেপি ভাল রাজনৈতিক জমি তৈরি করেছে, সেখানে প্রথমে নিচুতলার কর্মীদের ভয় দেখিয়ে বা হুমকি দিয়ে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা হবে।
যারা ‘বদলা নয়, বদল চাই’ স্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল, তারা ৯ বছর ধরে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের উপর শুধু বদলাই নিয়ে গিয়েছে। আমাদের দলের শতাধিক কর্মীকে খুন হতে হয়েছে। তাঁদের একমাত্র ‘অপরাধ’ ছিল বিজেপি করা। কিন্তু যেটা সবচেয়ে বেশি চিন্তার, তা হল ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচন, যাকে কেন্দ্র করে চলতি ও আগামী বছরে গোটা রাজ্যে বিরোধী দলগুলোর উপর নির্মম রাজনৈতিক আক্রমণ নামানো হবে।
রাজনৈতিক হিংসার যা পরিসংখ্যান, তাতে পশ্চিমবঙ্গ ধারাবাহিক ভাবে অন্যান্য রাজ্যগুলির থেকে অনেক এগিয়ে। পুরুলিয়ায় বিজেপির একের পর এক কর্মীকে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শাসকদল আপ্রাণ চেষ্টা করেছে এগুলোকে আত্মহত্যা বলে চালাতে। জুন মাসে আরও এক বিজেপি কর্মী পবন জানাকে দাঁতনে খুন করা হল। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, এ সব হত্যাকাণ্ড নিপুণ ভাবে পরিকল্পিত। এই সব খুনকে ‘গ্রামীণ বিবাদ’ নাম দিয়ে এলাকা দখলের ঘৃণ্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে শাসক দল। এর উদ্দেশ্য, বিধেয় সবই খুবই পরিষ্কার। যে সব গ্রামীণ এলাকায় বিজেপি ভাল রাজনৈতিক জমি তৈরি করেছে, সেখানে প্রথমে নিচুতলার কর্মীদের ভয় দেখিয়ে বা হুমকি দিয়ে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা হবে। সে চেষ্টায় কাজ না হলে খুন এবং পুলিশের সাহায্যে প্রমাণ লোপাট। এই রকম ঘৃণ্য রাজনীতি এরা করছে।
আরও পড়ুন: ময়না-তদন্তে বিধায়কের আত্মহত্যার ইঙ্গিত, আটক এক
এগুলো কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ক্ষমতার লোভে, তৃণমূল সরকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়ে গোটা প্রশাসনকে দলের কাজে ব্যবহার করছে। সাধারণ মানুষকে ন্যূনতম অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করে চলেছে। সবটাই অগণতান্ত্রিক এবং আইন বিরুদ্ধ। কিন্তু ‘হীরক রাজার দেশে যদি ধরা হয় সরা, তা হলে দিন হবে রাত…’। নির্লজ্জ, ক্ষমতালোভী একটা দলের কাছে কি এর থেকে বেশি কিছু আশা করা যায়? এরা ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য যে কোনও সীমা লঙ্ঘন করতে পারে। গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত হয়ে মসনদের দখল নেওয়া একটা দল শুধুমাত্র ক্ষমতার লোভে রাজ্যব্যাপী দুর্বৃত্তায়নকে একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। সমাজবিরোধীদের আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিচ্ছে। গোটা রাজ্যে আজ সমাজবিরোধীরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এদের লক্ষ্য একটাই, এলাকা দখল ও তার মাধ্যমে নিজেদের গদি টিকিয়ে রাখা৷ এর থেকে মুক্তি পেতে হলে বাংলার জনগণকে আবার পরিবর্তনের শপথ নিতে হবে।
আরও পড়ুন: ‘প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের ২১’, বার্তা দেবেন মমতা
বর্তমান হোক বা প্রাক্তন, পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিজের দলে পরিণত করে তাকে জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার প্রবণতা গত চল্লিশ বছর ধরে আমাদের রাজ্যে বার বার দেখা যাচ্ছে। নির্বাচনকে একটা প্রহসনে পরিণত করা হচ্ছে। এর পরেও আমরা চুপ করে থাকব?
ভোটকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সংঘর্ষের যে সংস্কৃতি, তা কংগ্রেস ও বাম আমলে একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছিল। আর বর্তমান সরকার, তাদের দেখানো পথ শুধু অনুসরণই করেনি, বরং হিংসার পরিমাণ বহু গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। গত কয়েক বছরে আমাদের রাজ্যে নিয়মিত রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। তাতে আমাদের শতাধিক কর্মী খুন হয়েছেন, কিন্তু তাদের কেউই আজ পর্যন্ত কোনও সুবিচার পাননি। আমাদের রাজ্যে রাজনীতিকে কেন্দ্র করে যে হিংসার পরিবেশ গড়ে উঠছে তার তুলনা বামশাসিত কেরলের সঙ্গে করা যেতে পারে, যেখানে বিজেপির বহু কর্মী খুন হয়েছেন এবং তাদের পরিবার আজও বিচারের অপেক্ষায়।
আরও পড়ুন: খুনের তত্ত্বে অনড় দিলীপ, নস্যাৎ ফিরহাদের
বর্তমান শাসক জেনে গিয়েছেন যে, হিংসার আশ্রয় নিয়েই তাঁকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হবে। অতএব হিংসার আয়োজন পরিকল্পনা মাফিকই হচ্ছে, রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন ক্রমশ বাড়ছে। আজ রাজ্যে সমাজবিরোধীদের জন্য রোজগারের পথ সুগম হয়, যদি তারা শাসকদলের ছত্রছায়ায় থাকে। সিন্ডিকেটরাজ হোক বা তোলাবাজি সর্বত্রই বড়-মেজ-ছোট দাদাদের রমরমা। গোটা রাজ্য জুড়ে সমাজবিরোধীদের দাপাদাপি। আর তাদের সব থেকে বড় পৃষ্ঠপোষক হয়ে কে বসে রয়েছেন, সে কথা সবাই জানেন। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে কী হয়েছিল, তা আমাদের সকলেরই জানা। ৩৪ শতাংশ আসনে বিরোধী দলগুলোকে প্রার্থীই দিতে দেওয়া হয়নি, শাসকদল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল। আর সেই গোটা প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হয়েছিল এসডিও বা বিডিও অফিস থেকে। বীরভূমের মতো জেলা, যার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের নামে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে, তা আজ অনুব্রত মণ্ডলের উর্বর জমি। তৃণমূলের নেতারা হাতে ‘পাঁচন’ নিয়ে দিবারাত্রি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করছেন সেখানে| মাননীয়ার অনুপ্রেরণায় কেষ্ট (অনুব্রতর ডাক নাম) আর তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা প্রায় সম্পূর্ণ বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েত তাঁদের প্রাণের নেত্রীকে উপহার দিয়ে নিজেদের নম্বর অনেক গুণ বাড়িয়ে নিয়েছেন। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, আগামী নির্বাচনেও একই কায়দায় কেষ্ট ভোট-ডাকাতি করবেন।
আপনারা কখনও কি ভেবে দেখেছেন, কেন এই সরকার পঞ্চায়েতে একটা আসনও হাতছাড়া করতে চায় না? আসলে গ্রামীণ উন্নয়ন এবং বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের রূপায়ণের প্রায় পুরোটাই পঞ্চায়েতের মাধ্যমে হয়। কোটি কোটি টাকার প্রবাহ। আর দুর্বৃত্তদের মাঠে নামিয়ে দিয়ে তা দু’হাতে লুঠ করার সুযোগ। তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরাও আজ এর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন।
তৃণমূল শুধুমাত্র সিপিএম-বিরোধিতাকে সম্বল করে ক্ষমতায় এসেছিল। এ দলের কোনও আদর্শগত ভিত্তি নেই। এদের কাছে গণতান্ত্রিক আচরণ বা রাজনৈতিক সৌজন্য আশা করা অর্থহীন। কিন্তু এদের থেকে মুক্তি পাওয়াটা যে জরুরি, সে কথা নিশ্চয়ই রাজ্যের মানুষকে এখন আর বুঝিয়ে বলার দরকার পড়ে না। মুক্তির পথ কিন্তু রাজ্যবাসীকেই খুঁজে নিতে হবে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই এই অশুভ শক্তিকে বিদায় জানাতে হবে।
আবার বলছি, মাথায় রাখুন, যে দল আজ রাজ্যে সরকার চালাচ্ছে, তারা আপনার-আমার ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে দেয় না। সেই দলের প্রধান আবার নাকি সততার প্রতীক! এর বিচার আমাদেরই করতে হবে। আমাদের অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে গণতান্ত্রিক শক্তিতে বলীয়ান হয়ে এই ক্ষমতালোভী তৃণমূলকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ছুড়ে ফেলে বাংলার মর্যাদা পুনরুদ্ধার করতে হবে।
আবার একটা একুশে জুলাই আসছে। কলকাতায় কংগ্রেস কর্মীদের উপর গুলি চালানোর ঘটনার ২৭ বছর পূর্ণ হবে। অন্যান্য বারের মতো এ বারও সেই রক্তাক্ত দিনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তৃণমূল রাজনৈতিক ফসল ঘরে তুলতে চাইবে৷ আমাদের প্রত্যেকের কাজ হবে, এ বারের একুশেতে তৃণমূলকেই প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া। তৃণমূলের শাসনকালে যে পরিমাণ রাজনৈতিক হত্যা হয়ে গেল, তার পরেও কি শহিদ দিবস পালন করার কোনও নৈতিক অধিকার তৃণমূলের বেঁচে থাকে? সেই রাজনৈতিক শহিদদের কোনও ন্যায়বিচার এই সরকার দিতে পারেনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বছর বছর শুধু নিজের রাজনৈতিক রুটি সেঁকে নিয়েছেন। লাশের উপরে দাঁড়িয়ে রাজনীতি করার অভ্যাস তিনি ছাড়তে পারেননি। মুখ্যমন্ত্রী পদে বসে থাকার আর কোনও অধিকার কি তাঁর রয়েছে? পশ্চিমবঙ্গের আপামর জনগণকে আজ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যে সাংঘাতিক প্রতারণার মুখে দাঁড় করানো হয়েছে গোটা রাজ্যকে, যদি তার জবাব দিতেই হয়, তা হলে আগামী বিধানসভা নির্বাচন আপনাদের সেই সুযোগ করে দেবে। আশা করি সে সুযোগ কেউ হাতছাড়া করবেন না।
লেখক: বিজেপির রাজ্য সভাপতি