আগেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন মুখ্য়মন্ত্রী মমতা। ফাইল চিত্র।
রাজ্য সরকারের পাশাপাশি শাসকদল তৃণমূলও কেন্দ্রের কাছে বকেয়া নিয়ে অভিযোগের সুর আরও চড়াল। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন, রাজ্যের প্রাপ্য প্রায় ৯৭ হাজার কোটি দিচ্ছে না কেন্দ্র। শুক্রবার ৯৭,৮০৭.৯১ কোটি টাকার হিসাব প্রকাশ করল তৃণমূল। যদিও বিরোধীদের প্রশ্নের থেকে রেহাই পায়নি শাসকদল।
তেলের দাম থেকে মানুষকে কিছুটা পরিত্রাণ দিতে কেন পদক্ষেপ করা হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন রাজ্যের উদ্দেশে সরাসরি ছুড়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার পাল্টা জবাব দিয়ে মমতা অভিযোগ করেছিলেন, কেন্দ্রের কাছে ৯৭ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ এখনও পাওনা। তার পরে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি করেও গত তিন বছর ধরে পেট্রল-ডিজ়েলের লিটারপিছু এক টাকা করে ছাড় দিয়ে যাচ্ছে রাজ্য। রাজ্যের দাবি অনুসরণ করেই তৃণমূলের দাবি, সমগ্র শিক্ষা মিশন, মিড-ডে-মিল, স্বচ্ছ ভারত মিশন, বিশেষ বিআরজিএফ, খাদ্য ভর্তুকি-সহ ১৩টি প্রকল্পে বিপুল অর্থ বকেয়া রেখেছে কেন্দ্র। কোনও কোনও ক্ষেত্রে সেই বকেয়া রয়েছে ২০১৪ সাল থেকে। ২০২০-২১ আর্থিক বছর থেকে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধরলে জিএসটি ক্ষতিপূরণ বাবদ ৬৩৭৫.২ কোটি টাকা কেন্দ্রের থেকে পাওনা রয়েছে রাজ্যের। এই সব খাত ধরলে বকেয়ার পরিমাণ ২৮,৭০০.০৩ কোটি টাকা।
তাদের আরও দাবি, করের যে ভাগ রাজ্যকে দেওয়ার কথা কেন্দ্রের, সেই খাতে ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ আর্থিক বছরে যথাক্রমে ১১ হাজার এবং ১৪,২২৫ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। আমপানে প্রায় ৩২,৩১০, বুলবুলে ৬৩৩৪ এবং ইয়াসে ৪২২২ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এই সব মিলিয়ে রাজ্য পায় আরও ৬৮,০৯১.৩২ কোটি টাকা। চতুর্দশ অর্থ কমিশনের পারফরম্যান্স গ্রান্ট বাবদ আরও প্রায় ১০১৬ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে কেন্দ্রের কাছে। এই সবগুলি ধরলে কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের বকেয়া ৯৭,৮০৭.৯১ কোটি টাকা।
প্রধানমন্ত্রীর ডাকা বিচারব্যবস্থা নিয়ে বৈঠকে শুক্রবারই দিল্লি গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আজ, শনিবার সেই বৈঠক সেরে তাঁর ফিরে আসার কথা। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পৃথক সাক্ষাতের সম্ভাবনা নেই, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীই। তবে তেল-বিমান ভাড়া নিয়ে রাজ্যেকে কেন্দ্র নিশানা করায় ও বকেয়া নিয়ে রাজ্যের পাল্টা তোপ দাগায় পরিস্থিতি আরও কিছুটা কঠিন হল বলেই মনে করছেন অনেকে। তবে বিজেপির সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের কটাক্ষ, “কেন্দ্র তো দফায় দফায় টাকা দেয় রাজ্যকে। প্রকল্পেও যেমন থাকে, তেমন থাকে বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবিলায়। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে দুর্যোগের ত্রাণের টাকাও মানুষের কাছে পৌঁছয় না। শাসকদলের নেতারা লোপাট করে দেয়। কেন্দ্রকে দোষ দিয়ে কী লাভ!”
অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, “রাজ্যের ঘাড়ে দোষ চাপালেই চলবে না। রাজ্য মানুষকে পরিত্রাণ দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তেল-গ্যাসের দাম যখন থেকে বাড়তে শুরু করেছিল, তখন তো ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ ছিল না। সেই উত্তর কে দেবে!” সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের অভিযোগ, “পাওনা-বকেয়া মেটানো উচিত কেন্দ্রের। কিন্তু তার জন্য প্রকল্প ধরে হিসাব নিয়ে যে লড়াই করা দরকার। প্রতি বার দিল্লি যাওয়ার আগে বকেয়ার হিসাব ভাসিয়ে লোক দেখানো হয়।’’ টুইট করে তৃণমূলকে পাল্টা বিজেপি নেতা অমিত মালবীয়ের প্রশ্ন, ওই পরিমাণ বকেয়ার তথ্য মুখ্যমন্ত্রী পেলেন কোথা থেকে? মিথ্যাচার বন্ধ করে পেট্রল-ডিজ়েলের উপর ভ্যাট মকুব করা দরকার বলেও জানান।