সোমবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে ‘প্রগ্রেসিভ হেল্থ অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাংবাদিক বৈঠকে শশী পাঁজা। —নিজস্ব চিত্র।
আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় শাসক শিবির যে আক্রমণের মুখে পড়েছিল, তার মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছিল তৃণমূলের চিকিৎসক সংগঠন। তাই দলের ‘ব্যর্থ’ চিকিৎসকদের বাদ রেখে নতুন সংগঠন তৈরি করে তার নেতৃত্ব দলের অন্য চিকিৎসক নেতাদের হাতে তুলে দিলেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। সোমবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সাংবাদিক বৈঠকে সংগঠনের আত্মপ্রকাশের কথা জানালেন রাজ্যের বাণিজ্যমন্ত্রী তথা পেশায় চিকিৎসক শশী পাঁজা। চিকিৎসক নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে তৈরি এই সংগঠনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘প্রগ্রেসিভ হেল্থ অ্যাসোসিয়েশন’। শশীকেই করা হয়েছে সংগঠনের সভানেত্রী। উল্লেখ্য, সাংবাদিক বৈঠকের সময় সারা ক্ষণ ছিলেন ২০২১ সালে বালি বিধানসভা থেকে প্রথম বার জিতে আসা রাজনীতিতে আনকোরা বিশিষ্ট শিশু চিকিৎসক রানা চট্টোপাধ্যায়। তৃণমূলের পরিচিত চিকিৎসক নেতাদের অনুপস্থিতি সকলেরই নজর টেনেছে।
তাই সাংবাদিক বৈঠকে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছিল, আরজি কর আন্দোলনের সময় যে ভাবে দলের প্রাক্তন সাংসদ চিকিৎসক শান্তনু সেন ও বিধায়ক চিকিৎসক সুদীপ্ত রায়ের মধ্যে দ্বন্দ্বের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছিল, সেই কারণেই কি এই সংগঠন তৈরি করা হল? জবাবে শশী বলেন, ‘‘কাদের মধ্যে কী দ্বন্দ্ব হয়েছিল আমার জানা নেই। আমাদের জানা আছে মানুষকে পরিষেবা দিতে হবে। সেই লক্ষ্যে আমরা এই নতুন সংগঠন তৈরি করেছি।’’ প্রগ্রেসিভ ডক্টর্স’ অ্যাসোসিয়েশন নামে তৃণমূলের যে চিকিৎসকদের সংগঠন রয়েছে, তাদের কি এই নতুন সংগঠনে জায়গা দেওয়া হবে? সেই প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘সংগঠনের নির্দিষ্ট ঠিকানা দিয়ে রেজিস্ট্রেশনের জন্য পাঠানো হয়েছে। রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে রাজ্য ও জেলাভিত্তিক কমিটি গঠন করা হবে। তখন দেখা যাবে সংগঠনের কে কোথায় জায়গা পেয়েছেন।’’ কলকাতার চিকিৎসকমহল মনে করছে, এমন জবাব দিয়ে কার্যত তৃণমূলের চিকিৎসক সংগঠনের নেতাদের এই সংগঠনে যোগদান সরাসরি খারিজ না করে দিলেও, পুরোপুরি সম্মতি দেননি সভানেত্রী শশী।
সংগঠনে গোষ্ঠীকোন্দল আটকাতে সদস্যপদ গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি নতুন পদ্ধতি চালু করেছেন শশী। সাংবাদিক বৈঠকে একটি ইমেল আইডি ঘোষণা করেছেন তিনি। রাজ্যের যে কোনও প্রান্ত থেকে চিকিৎসক তথা স্বাস্থ্য পরিষেবায় কর্মরত যে কোনও ব্যক্তি ইমেল করে সংগঠনের সদস্য হওয়ার আবেদন জানাতে পারবেন। তবে আবেদনকারীকে সংগঠনের সদস্য করার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন শীর্ষ নেতৃত্ব। বাণিজ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আরজি কর আন্দোলনের সময় যে সব চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন, তাঁরা সংগঠনের সদস্য হতে চাইলে তাঁদের স্বাগত জানানো হবে। তবে তৃণমূলের সংগঠনের নেতাদের সংগঠনে প্রবেশ নিয়ে তেমন কোনও প্রতিশ্রুতি শশী না দেওয়ায়, সন্দেহের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তৃণমূলের চিকিৎসক সংগঠনে।
সাংবাদিক বৈঠক শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে সংগঠনের রাজ্য কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। যেখানে শশী ছাড়াও স্থান পেয়েছেন বেশ কিছু চিকিৎসক বিধায়ক।