সময়ের প্রয়োজনে আলাদা হয়ে গিয়েছিল পথ। আবার সময়েরই প্রয়োজনে কি পথ মিলতে পারে পুরনো সঙ্গীদের? বিজেপির মোকাবিলায় সেই পুরনো সঙ্গীদের সম্মিলিত মঞ্চের নেতৃত্ব দিতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?
আনুষ্ঠানিক ভাবে এমন কোনও উদ্যোগ হয়নি ঠিকই। কিন্তু রাজনৈতিক শিবিরে চর্চা উস্কে দিয়েছে সুব্রক্ষ্মণ্যম স্বামীর একটি মন্তব্য। দু’দিন আগে টুইট করে রাজ্যসভার এই বিজেপি সাংসদ বলেছিলেন, ‘‘গোয়া ও কাশ্মীরের (কর্নাটক বলতে চেয়েছেন কি না, প্রশ্ন আছে কারও কারও) ঘটনা দেখে আমার মনে হয়েছে, একক দল হিসেবে শুধু বিজেপিই থেকে গেলে দেশের গণতন্ত্র দুর্বল হবে। সমাধান? ইতালীয় ও তাঁর বংশধরদের সরতে বলুন! তার পরে সংযুক্ত কংগ্রেসের সভানেত্রী হতে পারেন মমতা। এনসিপি-ও মিশে যেতে পারে।’’ একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শনিবার কলকাতায় এসে একই মনোভাব ব্যক্ত করেন স্বামী।
স্বামীর এই মন্তব্য নিয়ে তৃণমূলের তরফে কেউ মুখ খোলেননি। তিনি যে সনিয়া ও রাহুল গাঁধীকে কংগ্রেসের দায়িত্ব থেকে সরানোর আওয়াজ তুলেছেন, তা পরিষ্কার। ঘটনা হল, লোকসভা নির্বাচনে বিপর্যয়ের দায় নিয়ে রাহুল কংগ্রেস সভাপতির পদ ছেড়েই দিয়েছেন। নতুন নেতা বেছে নিতে হিমশিম খাচ্ছে কংগ্রেস এবং তার জেরে জাতীয় স্তরে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের মোকাবিলার লড়াই দিশাহীন দেখাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই মনে করছেন, দলের নিজস্ব অস্তিত্ব মুছে না ফেলেও কংগ্রেস মনোভাবাপন্ন নানা সংগঠন বিজেপি-বিরোধিতার জন্য এক জায়গায় আসতেই পারে। শরদ পওয়ারের এনসিপি কংগ্রেস মিশে যাবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা ইতিমধ্যেই উঠে গিয়েছে। কংগ্রেস ভেঙে বেরোনো এনসিপি-র মতো দল ওই সম্মিলিত মঞ্চে সামিল হতে পারে। সে ক্ষেত্রে মোদী-বিরোধী পরিসরে জাতীয় স্তরের মুখ হিসেবে সামনে থাকতেই পারেন তৃণমূল নেত্রী।
লোকসভা ভোটের আগেই গত জানুয়ারিতে ব্রিগেডে বিজেপি-বিরোধী সব দলকে এনে সমাবেশ করেছিলেন মমতা। ভোটের পরে তেমন বৃহৎ আকারে না হলেও বিজেপির বিরুদ্ধে কৌশলগত লড়াই ফের গতি পেতে পারে তাঁকে কেন্দ্র করেই, এমনই মত অনেকের। তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার মতে, ‘‘দেশের সংবিধান, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা এখন বিপন্ন। বিজেপির বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে আমাদের নেত্রী সকলকে সঙ্গে নিয়েই লড়াই করছেন। বিধানসভায় তাঁর উদ্যোগেই সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রস্তাব এসেছে, যেখানে কিছু ভিন্ন মত থাকলেও মূল সুরকে সমর্থন করেছে বাম ও কংগ্রেস। লোকসভা ভোটের ফল যেমনই হোক, দেশে বিজেপি-বিরোধী রাজনীতির মুখ এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই।’’