বুকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ক্ষমা চাইছেন তৃণমূল কাউন্সিলর। —নিজস্ব চিত্র।
বুকে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। এই অবস্থায় বাড়ি বাড়ি ঘুরে ক্ষমা চাইছেন তৃণমূল কাউন্সিলর! বুধবার পুরাতন মালদহের ৭ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় এমনই ছবি দেখা গেল।
২১ জুলাইয়ের সমাবেশ থেকে দলে ‘শুদ্ধকরণ যাত্রা’র নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। স্পষ্ট জানিয়ে দিয়ে দিয়েছিলেন, দল যেখানে জিতেছে, সেখানে মানুষকে ধন্যবাদ জানাতে। আর যেখানে হেরেছে, সেখানে মানুষের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। সেই নির্দেশ মেনে নিজের এলাকায় ‘শুদ্ধকরণ যাত্রা’ করতে দেখা গেল পুরাতন মালদহ পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শত্রুঘ্ন সিংহ বর্মাকে। সঙ্গেই ছিলেন তাঁর অনুগামীরা। গত লোকসভা নির্বাচনে তাঁর এলাকার মানুষেরা কেন তৃণমূলকে ভোট দিলেন না, বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই প্রশ্নই করলেন শত্রুঘ্ন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অনুযোগের সুরে কাউন্সিলরকে বলতে শোনা গেল, ‘‘বিপদের সময় আমরা থাকি। বিভিন্ন প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা আমরা পাইয়ে দিই। অথচ আমাদের কেন ভোট দিলেন না?’’
বুধবার নিজের ওয়ার্ডের বাচামারি এলাকায় জনসংযোগ করেন শত্রুঘ্ন। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আমরা মানুষের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছি। আমরা তাঁদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। পাশাপাশি কেন আমাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন সাধারণ ভোটারেরা, সে বিষয়ে আমরা পর্যালোচনা করছি। আগামী দিনে যেন এই ভোটারেরা আমাদের পাশে থাকেন, কোনও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হলে আমাদের জানান। আমরা তাঁদের পাশে সব সময় রয়েছি।’’
এ নিয়ে তৃণমূলকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিজেপি। উত্তর মালদহে দলের সাংগঠনিক জেলা সভাপতি উজ্জ্বল দত্ত বলেন, ‘‘তৃণমূলের বোধবুদ্ধির উদয় হয়েছে। এটি ভাল কথা যে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে শুদ্ধকরণ করছেন। তবে খালি হাতে শুদ্ধকরণ করলে হবে না। কারণ তৃণমূল নেতারা যে ভাবে কাটমানি ও তোলা আদায় করেছে, সেই সব টাকা ফেরত দিতে হবে। তবেই শুদ্ধকরণ হবে। আর তা ছাড়া এতে ২০২৬ সালের লোকসভা নির্বাচনে কোনও প্রভাব প়ড়বে না। মানুষ জানেন, এগুলো লোক দেখানো প্রচার!’’
প্রসঙ্গত, গত রবিবার ২১ জুলাইয়ের সভা থেকে তৃণমূলে শুদ্ধকরণের ডাক দিয়েছেন মমতা। দলের প্রথম সারির নেতাদের মতে, নেত্রী মমতা বিলক্ষণ জানেন, দুর্নীতি এবং সরকারি পরিষেবা না-পাওয়া প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার অন্যতম দু’টি কারণ। ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটকে নজরে রেখে সেই প্রতিষ্ঠান বিরোধিতাকে প্রশমিত করতেই এই নির্দেশ। শাসনের সুরেই মমতা সমাবেশে বলেছিলেন, ‘‘তৃণমূল করতে গেলে সকলকে নিয়ে চলতে হবে। যেখানে যেখানে জিতেছেন, সেখানে সেখানে গিয়ে মানুষকে ধন্যবাদ জানাবেন। মানুষের জন্য কাজ করবেন। যেখানে যেখানে আমরা জিতিনি, সেখানকার মানুষের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইবেন।’’ মনে করিয়েছেন, ‘‘গাড়িতে ঘোরার চেয়ে হেঁটে ঘোরা ভাল। সাইকেল নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘোরা ভাল।’’