Mamata Banerjee

অনেক পোকা থেকে ধান বাঁচাতে একটি পোকার সমূলে বিনাশ চান মমতা, সেই ‘পোকা’ কি পার্থ?

মমতা বলেন, ‘‘দেখতে হবে যাতে পোকা না জন্মায়। আর যদি পোকা জন্মে থাকে, তা হলে প্রথমে তাকে সতর্ক করতে হবে। বলতে হবে, হয় নিজেকে সংশোধন করো, না হলে আমাদের অন্য কিছু ভাবতে হবে।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৩ ১৩:৫৫
Share:

নজরুল মঞ্চে নতুন কর্মসূচির সূচনা করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — নিজস্ব চিত্র।

উপলক্ষ ছিল, পঞ্চায়েত ভোটকে পাখির চোখ করে ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচির ঘোষণা। সেই মঞ্চেই দুর্নীতি নিয়ে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বার্তা দিলেন দলনেত্রী। তার পরেই জল্পনা শুরু হয়েছে, দিদি এই বার্তা দিলেন কাকে? দিদির ‘লক্ষ্য’ কি পার্থ চট্টোপাধ্যায়?

Advertisement

সরকারি সুযোগ-সুবিধা সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছচ্ছে কি না, দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে সেই খবর নিতে চাইছে তৃণমূল। এ জন্য বছরের দ্বিতীয় দিনে ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ নামে একটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই কর্মসূচিতে রাজ্যের প্রতিটি মানুষের বাড়িতে গিয়ে তাঁরা সরকারি প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা নিতে পারছেন কি না, সরেজমিনে গিয়ে জানবেন ‘দিদির দূত’রা। এই প্রেক্ষিতেই ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ মন্তব্য করেন দলনেত্রী মমতা। তিনি বলেন, ‘‘যদি একটা পোকা ধানে জন্মায়, তাকে সমূলে বিনাশ না করলে কিন্তু ওই পোকাটা থেকেই সারা ধানে পোকা লেগে যাবে। সুতরাং, আমাকে পোকাটা আগেই নির্মূল করতে হবে। দেখতে হবে যাতে পোকা না জন্মায়। আর যদি পোকা জন্মে থাকে, তা হলে প্রথমে তাকে সতর্ক করতে হবে। বলতে হবে, ‘হয় নিজেকে সংশোধন করো, না হলে আমাদের অন্য কিছু ভাবতে হবে’। মনে রাখবেন, আমিও দলের ঊর্ধ্বে নই, মানুষের ঊর্ধ্বে নই। আমার উপর মানুষের কী কী দায়বদ্ধতা আছে, তা আমি প্রতি দিন সকাল থেকে রাত মেনে চলি।’’

নেত্রীর এই মন্তব্যের পরই তৃণমূলের অন্দরে জোরকদমে জল্পনা শুরু হয়েছে। মমতা ‘পোকা’ বললেন কাকে? ঘাসফুল শিবিরের একাংশের ধারণা, মমতার ‘ধানে পোকা’ সংক্রান্ত মন্তব্য একদা দলীয় সতীর্থ পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে কেন্দ্র করেই। ইদানীং কালে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন প্রাক্তন মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শুধু পার্থই নন, গ্রেফতারির তালিকায় আছেন অনুব্রত মণ্ডল, মানিক ভট্টাচার্যের মতো নেতা, বিধায়করাও। দলের ওই অংশের প্রশ্ন, ‘‘কই, মানিক বা অনুব্রতকে নিয়ে তো কঠোর অবস্থান নেয়নি দল?, তা হলে…।’’

Advertisement

বস্তুত, পার্থের গ্রেফতারির কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁকে দলের সব পদ থেকে সরানোর কথা ঘোষণা করেন অভিষেক। মন্ত্রিপদও যায় পার্থের। অনুব্রত, মানিকদের ক্ষেত্রেও একই পদক্ষেপ করা হবে বলে জল্পনা তৈরি হলেও আখেরে তাঁদের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত চুপই আছে তৃণমূল। দলনেত্রী মমতা স্বয়ং একাধিক বার কেষ্টর পাশে দাঁড়িয়েছেন। অভিযোগ তুলেছেন কেন্দ্রীয় প্রতিহিংসার। কিন্তু পার্থের ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত একটিও শব্দ শোনা যায়নি। এখানেই দুই গ্রেফতারিতে পার্থক্য। তাই অনুব্রত, মানিকদের পাশে দাঁড়িয়ে ‘পোকা’ হিসাবে পার্থের কথাই কি উল্লেখ করলেন মমতা?

পার্থের বিশেষ বন্ধু অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে যে ভাবে বান্ডিল বান্ডিল নোট বাজেয়াপ্ত হয়েছে, জনমানসে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলেই মনে করে তৃণমূল। আর তাই গ্রেফতারির পর কিছুটা সময় নিলেও দল থেকে পার্থকে সরিয়েছে জোড়াফুল। গিয়েছে মন্ত্রিপদও। তার পর থেকে পার্থকে নিয়ে মমতা বা অভিষেকের মুখেও কিছুই শোনা যায়নি। প্রসঙ্গত, নদিয়ার সভা থেকেও নাম না করে পার্থকেই কটাক্ষ করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবারও তাই একটি ‘পোকা গোটা ধানকে পোকায় ভরিয়ে দিতে পারে’ বলে যে মন্তব্য করলেন দলনেত্রী, তাতে আখেরে পার্থকেই তিনি নিশানা করলেন বলে মনে করছে তৃণমূলেরই একাংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement