গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী তথা ডিএমকে প্রধান এমকে স্ট্যালিনের পুত্র উদয়নিধির বিতর্কিত মন্তব্য ঘিরে ‘ইন্ডিয়া’র অন্দরে মতানৈক্য। কংগ্রেস নেতা কমল নাথ, কেসি বেনুগোপালের পরে এ বার তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর পুত্রের ‘সনাতন ধর্ম’ সংক্রান্ত মন্তব্যের সঙ্গে তিনি একেবারেই একমত নন।
মমতা সোমবার বলেন, ‘‘আমি তামিলনাড়ু-সহ দক্ষিণ ভারতের মানুষকে সম্মান করি। স্ট্যালিনজিকেও শ্রদ্ধা করি। তবে তাঁকে বিনীত অনুরোধ করব, সব ধর্মের নিজস্ব ভাবাবেগ রয়েছে। আমরা সব সময়ই বলি, ভারত সব জাতি, ধর্ম, বর্ণের দেশ। ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক দেশ। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যই আমাদের ঐতিহ্য।’’ সেই সঙ্গে মমতার মন্তব্য, ‘‘আমি সনাতন ধর্মকে শ্রদ্ধা করি। ঋক বেদ, অথর্ব বেদের কথা জানি। উপাসনা, আরাধনা, বন্দনার কথা জানি। আমরা সনাতন ধর্মের পুরোহিতদের ভাতাও চালু করেছি। আমরা মন্দির, মসজিদ, গির্জা সর্বত্রই যাই। আমাদের এমন কোনও কথা বলা উচিত নয়, যাতে সমাজের কোনও একটি অংশের ভাবাবেগে আঘাত লাগতে পারে।’’
উদয়নিধির বিতর্কিত মন্তব্য প্রসঙ্গে সোমবার মমতা সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে বলেন, ‘‘হয়ত ওঁর কম বয়স বলে এমন বলে ফেলেছেন। আমি ঠিক জানি না কেন এমন বলেছেন। আমার দিক থেকে আমি বলতে পারি, ওঁদের সমস্ত ধর্মকে সম্মান করা উচিত।’’ বাংলায় দুর্গাপুজো, দাক্ষিণাত্যে বালাজি, মহারাষ্ট্রের সিদ্ধিদাতা গণেশ সম্পর্কে যে ভাবাবেগ রয়েছে, সে কথাও ডিএমকে নেতৃত্বকে মনে করিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, স্ট্যালিন মন্ত্রিসভার সদস্য তথা জনপ্রিয় তামিল অভিনেতা উদয়নিধি শনিবার চেন্নাইয়ে লেখকদের একটি অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘সনাতন ধর্মের আদর্শকে মুছে ফেলার এই অনুষ্ঠানে আমায় আমন্ত্রণ জানানোয় আমি উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানাই। সনাতন ধর্মের আদর্শের বিরোধিতা না বলে তাকে নিশ্চিহ্ন করার কথা বলায় অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের অভিনন্দন জানাই।’’ এর পরেই তিনি বলেন, ‘‘আমাদের প্রথম কাজ হল বিরোধিতা নয়, সনাতন ধর্মের আদর্শকে মুছে ফেলা। এই সনাতন প্রথা সামাজিক ন্যায় এবং সাম্যের বিরোধী।’’
উদরনিধির দাবি, কিছু জিনিস আছে, যার বিরোধিতা যথেষ্ট নয়, তা নিশ্চিহ্ন করা দরকার। যেমন করোনা, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গির বিরোধিতা নয়, তাদের নিশ্চিহ্ন করা দরকার, তেমনই সনাতন আদর্শকেও মুছে ফেলা দরকার। যদিও ওই ঘটনা নিয়ে রবিবার বিতর্ক দানা বাঁধতেই প্রয়াত করুণানিধির নাতি জানান, তাঁর বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে। প্রয়াত সিএন আন্নাদুরাই ১৯৪৯ সালে যে মূল আদর্শগুলিকে সামনে রেখে ডিএমকের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তা হল দ্রাবিড় সংস্কৃতির রক্ষা এবং নাস্তিকতার অনুশীলন। অথচ আন্নাদুরাইয়ের উত্তরসূরি করুণানিধির জমানাতেই বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র শরিক হয়েছিল ডিএমকে।
কিন্তু লোকসভা ভোটের আগে অধুনা ‘ইন্ডিয়া’র সদস্য উদয়নিধির বক্তব্যকে ‘ছাড়’ দিতে নারাজ বিজেপি এবং তার সহযোগী হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি। গোটা বিষয়টিকে হিন্দু ধর্মের উপরে আঘাত বলে অভিযোগ তুলে প্রচারে নেমেছে তারা। বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলে খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সরাসরি ইন্ডিয়া-জোটকে হিন্দু-বিরোধী বলে দাগিয়ে দিয়েছেন। বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে উদয়নিধির বিরুদ্ধে মামলার পাশাপাশি, তাঁকে গ্রেফতারির দাবিও উঠেছে।
এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের অন্দরেও স্ট্যালিন-পুত্রকে নিয়ে ভিন্নমত প্রকাশ্যে এসেছে। এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক তথা ‘ইন্ডিয়া’র সমন্বয় কমিটির সদস্য কেসি ভেনুগোপাল জানিয়েছেন, কংগ্রেস সব ধর্মকে সম্মান করে। সেই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘প্রতিটি রাজনৈতিক দলের তাদের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে এবং কংগ্রেস সকলের বিশ্বাসকে সম্মান করে।’’ কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা তথা মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথ বলেন, “আমি উদয়নিধির বক্তব্যের সঙ্গে একমত নই।” অন্য দিকে, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের ছেলে প্রিয়ঙ্ক কার্যত উদয়নিধির মত সমর্থন করে বলেন, ‘‘যে ধর্ম সমতার অধিকার প্রচার করে না, মনুষ্যত্বের মর্যাদা নিশ্চিত করে না, আমার মতে সে ধর্ম নয়। যে ধর্ম সমান অধিকার দেয় না, তা রোগের মতোই খারাপ।’’