এম কে স্ট্যালিনের পুত্র তথা রাজ্যের মন্ত্রী উদয়নিধি। ছবি: পিটিআই।
সনাতন ধর্মের আদর্শকে নিশ্চিহ্ন করার কথা বলে বিতর্কের ঝড় তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনের পুত্র তথা রাজ্যের মন্ত্রী উদয়নিধি। তাঁর বিরুদ্ধে সরব হল বিজেপি-সহ হিন্দুত্ববাদী দল ও সংগঠনগুলি। মামলাও হল। যার বিষয়বস্তু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হয়েছে।
শনিবার চেন্নাইয়ে লেখকদের একটি অনুষ্ঠানে তরুণ ডিএমকে নেতা উদয়নিধি বলেন, ‘‘সনাতন ধর্মের আদর্শকে মুছে ফেলার এই অনুষ্ঠানে আমায় আমন্ত্রণ জানানোয় আমি উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানাই। সনাতন ধর্মের আদর্শের বিরোধিতা না বলে তাকে নিশ্চিহ্ন করার কথা বলায় অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের অভিনন্দন জানাই।’’ এর পরেই তিনি বলেন, ‘‘আমাদের প্রথম কাজ হল বিরোধিতা নয়, সনাতন ধর্মের আদর্শকে মুছে ফেলা। এই সনাতন প্রথা সামাজিক ন্যায় ও সাম্যের বিরোধী।’’ তিনি বলেন, কিছু জিনিস আছে, যার বিরোধিতা যথেষ্ট নয়, তা নিশ্চিহ্ন করা দরকার। যেমন করোনা, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গির বিরোধিতা নয়, তাদের নিশ্চিহ্ন করা দরকার, তেমনই সনাতন আদর্শকেও মুছে ফেলা দরকার।
উদয়নিধির এই বক্তব্য নিয়েই তোলপাড় শুরু হয়েছে। হিন্দুত্ববাদীদের বক্তব্য, পেরিয়ারের রাজনীতির সুরেই কথা বলে সনাতন ধর্মকে অপমান করেছেন উদয়নিধি। ঠিক এই মর্মেই সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী রবিবার তাঁর বিরুদ্ধে করা মামলায় বলেছেন, উদয়নিধির মন্তব্যে তাঁর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে।
বিজেপি এবং তার সহযোগী হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি গোটা বিষয়টিকে হিন্দু ধর্মের উপরে আঘাত বলে অভিযোগ তুলে প্রচারে নেমেছে। বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলে খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সরাসরি ইন্ডিয়া-জোটকে হিন্দু-বিরোধী বলে দাগিয়ে দিয়েছেন। বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে উদয়নিধির বিরুদ্ধে মামলার পাশাপাশি তাঁকে গ্রেফতারির দাবিও উঠেছে। উদয়নিধি অবশ্য তাঁর অবস্থানে অটল। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, ‘‘আমার কথার ইচ্ছাকৃত ভাবে ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। সনাতন প্রথার বিরুদ্ধে বলেছি মানে এই নয় যে, গণহত্যার কথা বলেছি। এই সনাতন প্রথা যুগ যুগ ধরে জাতপাত, ধর্মের বেড়াজালে রেখে দলিত ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণিকে পায়ের নীচে রেখেছে। একে নিশ্চিহ্ন না করলে মানুষের সার্বিক উন্নতি সম্ভব নয়। তাই আমি আমার বক্তব্য থেকে সরছি না।’’
তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন অনেকেই। তামিল-রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত একটি বড় অংশেরও বক্তব্য, উদয়নিধির মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তিনি সনাতন ধর্মের রীতিনীতি, আদর্শের বিরোধিতা করে তা নিশ্চিহ্ন করার কথা বলেছেন। তার অর্থ কখনওই এই নয় যে তিনি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিশ্চিহ্ন করার কথা বলেছেন। বিজেপি হিন্দু ভোটব্যাঙ্কের দিকে তাকিয়ে ভুল ব্যাখ্যা করে দক্ষিণ ভারতে ফের মাটি ফেরত পেতে চাইছে। ডিএমকে নেতৃত্বের বক্তব্য, ডিএমকে ও পেরিয়ারবাদী রাজনীতি বরাবরই সনাতনপ্রথা, ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে। দ্রাবিড় আন্দোলনের মূলেও ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরোধিতা। ফলে বিজেপির মতো ্রাহ্মণ্যবাদী দলগুলি যত এ নিয়ে সরব হবে, তত তামিলনাড়ুতে ডিএমকে-র মাটি শক্ত হবে। সংবাদ সংস্থা