গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের ভুল প্রয়াণসংবাদের জেরে করা তৃণমূল মহাসচিব তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ফেসবুক পোস্ট ঘিরে শোরগোল শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। ভুল পোস্ট দেওয়া হয়েছে বুঝতে পেরে পার্থ তড়িঘড়ি তা মুছে দিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ তীব্র শ্লেষাত্মক একটি পোস্ট করেছেন। কারও নাম না-করলেও কুণালের পোস্টের লক্ষ যে পার্থ, তা বলছেন তৃণমূলের লোকজনই।
মঙ্গলবার বিকেলে তৃণমূল মহাসচিব তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থের ফেসবুক পেজে আচমকা ভেসে ওঠে পার্থের সঙ্গে মনমোহনের একটি পুরনো ছবি। সঙ্গে লেখা, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ। অথচ মনমোহন রয়েছেন বহাল তবিয়তেই! ভুল বুঝতে পেরে দ্রুত পোস্ট মুছে দেওয়া হয়। পার্থ ঘনিষ্ঠমহলে জানান, ভুলক্রমেই ওই পোস্ট। সেটি তাঁর ফেসবুক পেজে অন্য কেউ করেছে। ভুল বুঝতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে তা সরিয়েও দেওয়া হয়েছে।
এই পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। কিন্তু শোরগোল ফেলে দিয়েছে তার পরের ঘটনাবলি। রাত পোহাতে না পোহাতেই প্রকাশ্যে এসেছে কুণালের ফেসবুক পোস্ট। বুধবার সকালে কুণাল নিজের ফেসবুক ও টুইটার হ্যান্ডলে মনমোহনের সঙ্গে তাঁর দু’টি পুরনো ছবি পোস্ট করেছেন। এবং লিখেছেন, ‘যে বা যাঁরা তাঁর মৃত্যুসংবাদ ছড়ালেন, আগ বাড়িয়ে শোক জানালেন, সেই দায়িত্বজ্ঞানহীনদের ধিক্কার জানাই।’ কুণাল এমনও দাবি তুলেছেন যে, ওই ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ ব্যক্তিদের প্রকাশ্যে দুঃখপ্রকাশ করা উচিত।
কুণালের ওই পোস্টে দলের ‘অনুমোদন’ রয়েছে কি না, তা জানা যায়নি। তবে কুণালের পোস্টটি ফেসবুক এবং টুইটারে রয়েছে। প্রকাশ্যে কেউ কিছু না-বললেও দলের অন্দরে কুণাল এবং পার্থের সম্পর্ক ‘মধুর’ বলেই জানেন তৃণমূলের লোকজন। ফলে পার্থের ভ্রমাত্মক পোস্ট ঘিরে পরোক্ষে কুণালের শ্লেষাত্মক পোস্ট করায় কেউ ‘অস্বাভাবিক’ কিছু দেখছেন না। বরং তাঁদের মতে, পুরভোটের সময় যে দলীয় মতানৈক্য প্রকাশ্যে এসে পড়েছিল, তা-ই আরও একবার বেরিয়ে এসেছে।
প্রসঙ্গত, ইদানীং গোটা দেশে রাজনীতিবিদদের একটি বড় অংশের নেটমাধ্যম অ্যাকাউন্ট দেখাশোনা করে কোনও পেশাদার সংস্থা। গত লোকসভা ভোটের পর থেকে প্রশান্ত কিশোরের (পিকে) সংস্থা ‘আইপ্যাক’ তৃণমূলের নেতানেত্রীদের একাংশের নেটমাধ্যম অ্যাকাউন্ট দেখভাল করত। নিকট অতীতে তা নিয়ে বিতর্কও হয়েছে। তবে ইদানীং পিকে-র সংস্থার সঙ্গে তৃণমূলের আনুষ্ঠানিক কোনও যোগ দৃশ্যত নেই।
তৃণমূলের অন্দরের একটি অংশ বলছে, পার্থ তৃণমূলের অন্যতম প্রবীণ নেতা। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধী আসনে থাকার সময় থেকেই পার্থ তাঁর অন্যতম সহযোদ্ধা। আবার কুণাল দলের অন্দরে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আস্থাভাজন’ বলেও পরিচিত। তারই কি ফল এই পোস্ট?