(বাঁ দিকে) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ও (ডানদিকে) কংগ্রেস নেত্রী দীপা দাশমুন্সী। ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের জোটে যে তাঁর তীব্র অনীহা রয়েছে, তা গোপন করেন না কংগ্রেস নেত্রী দীপা দাশমুন্সী। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে কেন্দ্র থেকে বিজেপিকে সরাতে বাংলায় কংগ্রেস-তৃণমূল জোট হলেও কোনও ভাবেই আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনায় তৃণমূলকে ‘আগ্রাসী’ হতে দেওয়া উচিত হবে না বলে মনে করেন রায়গঞ্জের প্রাক্তন সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। কংগ্রেস সূত্রের খবর, বুধবার দিল্লিতে এআইসিসি নেতৃত্বের সঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের বৈঠকে নিজের বক্তব্যে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন দীপা। তবে পাশাপাশিই তিনি জানিয়েছেন, ‘দলের স্বার্থে’ তিনি যে কোনও সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, বৈঠকে সরাসরি তৃণমূলের সঙ্গে জোটের কথা মুখে আনেননি দীপা। কিন্তু নিজের অতীত অভিজ্ঞতা থেকে এআইসিসি নেতাদের জানিয়েছেন, ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে জোট করার সময় পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের মতামতকে একেবারেই গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটেও সেই একই পথে জোট করেছিল কংগ্রেস। যার ফলে পরবর্তী সময়ে কংগ্রেসের সংগঠন ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে তৃণমূল! তাই এ বার জোট গড়ার ক্ষেত্রে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বাংলার নেতাদের মতামতকে যেন ‘গুরুত্ব’ দেয় এআইসিসি। তবে ওই কথা বলার সময় কোনও ব্যক্তিবিশেষের নাম করেননি দীপা।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট গড়তে বড় ভুমিকা ছিল তৎকালীন এআইসিসি পর্যবেক্ষক কেশব রাও এবং তদানীন্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের। ২০১১ সালে কেশব এবং প্রণব ওই দায়িত্বে না থাকলেও তৎকালীন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মানস ভুঁইয়া ও বাংলায় এআইসিসির পর্যবেক্ষক শাকিল আহমেদ তাঁদের দেখানো পথে চলেছিলেন বলেই মনে করেন কংগ্রেসের নেতাদের একটি বড় অংশ। তাই দীপা সরাসরি তৃণমূলের সঙ্গে জোট না-গড়ার কথা না বললেও কোনও অবস্থাতেই যাতে ২০০৯ সালের মতো তৃণমূলকে ‘আগ্রাসী’ হতে না দেওয়া হয়, সে কথাটিই এআইসিসি নেতৃত্বকে বুঝিয়েছেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র তেমনই জানাচ্ছে।
২০০৯ সালে লোকসভা ভোটে তৃণমূল ২৭টি, কংগ্রেস ১৪টি এবং তৃণমূলের জোটসঙ্গী হিসাবে জয়নগর লোকসভা কেন্দ্রে লড়াই করেছিল এসইউসিআই(সি)। সেই তথ্য-পরিসংখ্যান তুলে ধরেই যুক্তি সাজিয়েছিলেন দীপা। যদিও ঘটনাচক্রে, ২০০৯ সালে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের প্রার্থী হিসাবেই রায়গঞ্জ থেকে সাংসদ হয়েছিলেন দীপা। সেবার সিপিএম প্রার্থী বীরেশ্বর লাহিড়ীকে হারিয়ে তাঁর স্বামী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সীর আসনে জয় পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে একক ভাবে কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে লড়াই করে হার হয় তাঁর। তা সত্ত্বেও তৃণমূলের তুলনায় বাংলায় বামফ্রন্ট তথা সিপিএমের সঙ্গে জোটে গেলেই কংগ্রেস বেশি ‘লাভবান’ হবে বলে বৈঠকে অভিমত প্রকাশ করেছেন তিনি। তিনি যে বামেদের সঙ্গে জোটের পক্ষপাতী, তা বৈঠকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন দীপা। প্রসঙ্গত, কয়েক মাস আগে হিমাচল প্রদেশ এবং সম্প্রতি তেলঙ্গানার ভোটে এআইসিসির হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন দীপা। দু’টি রাজ্যেই জিতেছে কংগ্রেস। ফলে কংগ্রেসের অন্দরে দীপার মন্তব্য ‘গুরুত্ব’ পাবে বলেই অনেকে মনে করছেন।
সূত্রের খবর, বৈঠকের শেষে রাহুল গান্ধী বাংলার কংগ্রেস নেতৃত্বকে বলেন, অনেক রাজ্যেই কংগ্রেস ৩৮-৪০ শতাংশ ভোট পায়। সেখানে কংগ্রেসে সংগঠন ভাল। কিন্তু বাংলায় কংগ্রেস এখন মাত্র ৪-৫ শতাংশ ভোট পায় বড়জোর! তা সত্ত্বেও সংগঠন নিয়ে প্রদেশ নেতৃত্বর ‘ভাবনা এবং প্রচেষ্টা’ দেখে তাঁর ভাল লাগছে।