রাজারহাটে সিপিএম অফিসে সব্যসাচী দত্ত। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।
সিপিএমের হয়ে তিনি প্রচার করতে পারবেন না। তাদের প্রার্থীর জন্য পোলিং এজেন্ট দিতে পারবেন না। এবং নিজের ভোটটা তাদের দিতেও পারবেন না।
দেবেন বাম প্রার্থীকে প্রচারের প্রশস্ত পরিস্থিতি। দেবেন প্রচার-লিখনের জন্য অবাধ দেওয়াল ও শিল্পী। এমনকী দেবেন প্রচার চালানোর জন্য পর্যাপ্ত লোকবলও।
গণতান্ত্রিক পরিবেশে বিরোধী দল যাতে নির্বিঘ্নে ভোটের প্রচার চালাতে পারে, সেই জন্য এ ভাবেই সব ধরনের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলেন নিউ টাউন বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সব্যসাচী দত্ত। এবং প্রতিশ্রুতি দিলেন সরাসরি সিপিএমের একটি পার্টি অফিসে ঢুকে।
ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পরে প্রথম রবিবারেই প্রচারে বেরিয়ে এমন গাঁধীগিরি দেখিয়ে চমক দিয়েছেন শাসক দলের ওই প্রার্থী। কংগ্রেস-সিপিএম জোটের তুঙ্গ জল্পনা এবং নির্বাচনের দিনক্ষণ জানা মাত্র তৃণমূলের প্রার্থী-তালিকা ঘোষণার মধ্যে যে-রাজনৈতিক তাল ঠোকাঠুকি চলছে, তাতে শাসক দলের নেতার এমন গাঁধীগিরি খানিকটা ধন্দেরও সৃষ্টি করেছে। তবে বাম শিবির এতে বিগলিত, এমন কোনও প্রমাণ এ দিন মেলেনি। বরং তাদের কেউ কেউ এতে গিমিক দেখছেন। আবার অনেকে দেখছেন পরোক্ষ হুমকি।
ঠিক কী ঘটেছিল?
শাসক দলের অন্য প্রার্থীদের মতো এ দিন প্রচারে বেরিয়েছিলেন সব্যসাচীবাবুও। গিয়েছিলেন রাজারহাটের নারায়ণপুরে। প্রচারের মধ্যেই তিনি নারায়ণপুরে সিপিএমের জোনাল অফিসে ঢুকে পড়েন। যদিও সব্যসাচীবাবুর দাবি, প্রচারে নয়। গিয়েছিলেন দলের এক কর্মীর অন্ত্যেষ্টিতে। ফেরার পথে হাঁটছিলেন। সঙ্গে ছিলেন দলের কিছু কর্মীও।
নারায়ণপুরে সিপিএমের অফিসে তখন কয়েক জন কর্মী বসে ছিলেন। আচমকাই সেখানে ঢুকে পড়েন সব্যসাচীবাবু। তাঁর সঙ্গীদের দাবি, প্রার্থীকে স্বাগত জানান সিপিএমের কর্মীরা। সব্যসাচীবাবু লেবু চা খেতে চান। সিপিএমের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে গাঁধীগিরি শুরু করেন তৃণমূল প্রার্থী। বলেন, ‘‘আপনাদের কোনও চিন্তা নেই। নির্বাচনের প্রচার নিয়ে চিন্তা করবেন না। দরকার হলে লেখার জন্য দেওয়াল এবং তার শিল্পী জোগাড় করে দেবো। প্রচারের জন্য লোকও দেবো।’’ সেই সঙ্গেই জানিয়ে দেন, কী কী দিতে পারবেন না এবং কেন পারবেন না। বলেন, ‘‘আমি তো শাসক দলের প্রার্থী। আপনাদের পোলিং এজেন্ট দিতে পারব না। আপনাদের হয়ে ভোট দেওয়ার আবেদনও জানাতে পারব না।’’ নিজের ভোটটা যে সিপিএম প্রার্থীকে দিতে পারবেন না, তার কারণ হিসেবে সব্যসাচীবাবু বলেন, ‘‘কেননা আমি এখানকার ভোটার নই।’’ অর্থাৎ ওই এলাকার ভোটার হলেই যেন তিনি বাম শিবিরের বাক্সে নিজের ভোটটাও অক্লেশে দিয়ে দিতে পারতেন!
ওই এলাকার তৃণমূলকর্মীদের একাংশের বক্তব্য, এখানে সিপিএম প্রায় নিশ্চিহ্ন। তবু ওঁরা সন্ত্রাসের অভিযোগ করেন। তাই ‘দাদা’ ওঁদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন। ইতিমধ্যে ১০টা দেওয়াল সিপিএমের জন্য চুনকাম করে রেখে দেওয়া হয়েছে বলে তৃণমূলকর্মীদের দাবি।
২০১১-য় তৃণমূলের তৎকালীন প্রার্থী সব্যসাচীবাবুর বিরুদ্ধে সিপিএম যাঁর নেতৃত্বে লড়াই করেছিল, সেই তাপস চট্টোপাধ্যায় এখন তৃণমূলে। এমনকী তিনি সব্যসাচীবাবুর অধীনেই বিধাননগর পুর নিগমে ডেপুটি মেয়রের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। এই অবস্থায় স্থানীয় সিপিএম ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়েছে বলে দাবি তৃণমূলের। ‘‘নির্বাচন এলেই বিরোধীরা সন্ত্রাসের অভিযোগ তোলেন। আমি চাই, গণতান্ত্রিক পরিস্থিতিতেই ভোট হোক। তাই ওঁদের সঙ্গে দেখা করলাম,’’ বিরোধী দলের অফিসে গাঁধীগিরির এমনই ব্যাখ্যা দিয়েছেন সব্যসাচীবাবু।
শাসক-নেতার এ-হেন গাঁধীগিরির গন্ধটা যে সন্দেহের বাইরে নয়, বাম নেতাদের অনেকে সেটা জানিয়ে দিচ্ছেন সরাসরিই। তাঁদের অভিযোগ, শাসক দলের প্রার্থী গাঁধীগিরির নামে এ দিন কার্যত হুমকিই দিয়েছেন বিরোধী শিবিরকে। এটা শাসক দলের নতুন কৌশল। ওই সিপিএম নেতাদের কটাক্ষ, ‘গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি’ কেমন, বিধাননগর পুর নিগমের গত নির্বাচনেই সেটা দেখা গিয়েছে। ওই এলাকায় তৃণমূল যে-ব্যবধানে জিতেছিল, সুষ্ঠু ভোটে সেটা সম্ভব নয় বলে তাঁদের অভিমত।
রাজারহাটের সিপিএম নেতা শুভজিৎ দাশগুপ্তের দাবি, পুরোটাই গিমিক এবং সংবাদ-শিরোনামে আসার কৌশল মাত্র। তৃণমূলই এই এলাকায় আগেভাগে দেওয়াল দখল করে নিয়েছে। এ দিন কী ঘটেছিল, তার ব্যাখ্যা দিয়ে শুভজিৎবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূল প্রার্থী দলীয় অফিসে ঢুকেছিলেন। তাঁকে দেখে আমাদের কর্মীরা দেওয়াল দখলের অভিযোগ জানান। তখন উনি জানেন, উনি পদক্ষেপ করবেন। তবে যে-সব প্রতিশ্রুতির কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো নিছকই কথার কথা।’’