মিছিলে তৃণমূল। শনিবারের ঘটনার পর পাঁশকুুড়ায়। ফাইল চিত্র। ডানদিকে, ফেসবুকে সরব হয়েছেন বিজেপি নেতা।
জাতীয় নাগরিক পঞ্জি ও নতুন নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে রাজ্যে একাধিক জায়গায় অবরোধ, বাস-ট্রেনে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জনজীবন কার্যত বিপর্যস্ত। তবে প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ করার পরে মঙ্গলবার বড় কোনও অশান্তির খবর না এলেও গত কয়েক দিনের ঘটনায় আতঙ্কের জেরে এদিনও অনেকেই ঘর থেকে না বেরোনোই শ্রেয় মনে করেছেন।
ইতিমধ্যে এই ইস্যুতে গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদে পথে নেমেছে তৃণমূল। যদিও গত শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত রাজ্যজুড়ে যে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে তার জন্য শাসক দলকেই ‘দায়ী’ করেছে আমজনতার একাংশ। পাড়ায়-পাড়ায়, রাস্তার মোড়ে, চায়ের দোকানে এমন হিংসাত্মক আন্দোলনের বিরোধিতায় সরব হতে দেখা গিয়েছে সাধারণ মানুষকে। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাজ্য সরকারের কালক্ষেপ নিয়ে অনেকেই সরব। তবে তাঁর দলে যে প্রতিবাদের নামে কোনওরকম হিংসাত্মক আন্দোলন সমর্থন করে না তা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর বিরুদ্ধে পথেও নেমেছেন তিনি। সেইসঙ্গে বার্তা দিয়েছেন, কড়া হাতে এই ধরনের হিংসাত্মক আন্দোলনের মোকাবিলার। নেত্রীর নির্দেশে জেলার প্রতিটি ব্লকেই জাতীয় নাগরিক পঞ্জি ও নতুন নাগরিক আইনের বিরুদ্ধে পথে নেমেছে তৃণমূল। পাঁশকুড়ার এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘আমরা সরকারে আছি। তাই স্বাভাবিকভাবেই রাজ্যে অশান্তি হলে তার দায় মানুষ প্রথমে আমাদের ঘাড়েই চাপাবে। তবে আমাদের দল কোনও হিংসাত্মক আন্দোলনকে সমর্থন করে না। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়েই এই আইনের বিরুদ্ধে লড়ব আমরা।’’
তৃণমূল যখন রাস্তায় নেমে প্রতিবাদের কথা বলছে, তখন অশান্তির জেরে সাধারণ মানুষের হয়রানিকে হাতিয়ার করে সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচারে নেমে পড়েছেন বিজেপি নেতারা। দলের তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি নবারুণ নায়েক, পাঁশকুড়ার বিজেপি নেতা সিন্টু সেনাপতি-সহ জেলার ছোট-বড় অনেক নেতাই হিংসা রুখতে রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছেন ফেসবুকে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, গত শনিবার ঘটনার পর থেকে এখনও পর্যন্ত জেলার কোনও বিজেপি নেতাকে পথে নামতে দেখা যায়নি। যার পিছনে সদ্যসমাপ্ত তিনটি উপনির্বাচনে দলের হার এবং পূর্ব মেদিনীপুরে দলের গোষ্ঠীকোন্দলই কারণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। যদিও গত কয়েক দিনের হিংসাত্মক ঘটনার জেরে মানুষের ভোগান্তিকে হাতিয়ার করে শীঘ্রই তাঁরা পথে নামবেন জানিয়েছেন নবারুণ। মঙ্গলবার তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘রাজ্যে হিংসায় প্রত্যক্ষ মদত রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। তৃণমূল নেতারা বিক্ষোভকারীদের একত্রিত করে এনে অবরোধ করাচ্ছেন। মানুষ সব বুঝতে পেরেছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘এতে আমাদেরই লাভ হল। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে আমরা বিপুল জনসমর্থন নিয়ে এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসব। শীঘ্রই আমরা আমাদের সাংগঠনিক কাজকর্ম নিয়ে পথে নামব।’’
জেলা তৃণমূল সহ-সভাপতি নন্দকুমার মিশ্র বলেন, ‘‘আমাদের দল কখনও কোনও হিংসাত্মক ঘটনা সমর্থন করেনি। আজও করে না। জাতীয় নাগরিক পঞ্জি ও নতুন নাগরিক আইনের ফলে সাধারণ মানুষের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়েছে। আমরা আগামীদিনে এই বিষয়ে মানুষকে সঙ্ঘবদ্ধ করে বৃহত্তর আন্দলনে নামব। আমার মনে হয়, এতে রাজ্য সরকারের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে।’’