সেই বাসচালক ও খালাসিরা। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
ব্রিগেডের জন্য কলকাতায় এলেন ওঁরাও। রবিবার।
শাসক দল তৃণমূলের সমর্থক সকলেই। তা সত্ত্বেও স্থানীয় দলীয় নেতৃত্বের অনুমতি নিয়েই এ দিন ব্রিগেডে এসেছিলেন সবাই। বহু বাম সমর্থককে এ দিন ওঁরাই পৌঁছে দিলেন ব্রিগেডে। ওঁরা পূর্ব বর্ধমানের বিভিন্ন জায়গার বাসিন্দা। আসলে ওঁরা কেউ বাস চালান। কেউ আবার বাসের খালাসির কাজ করেন। পেশা আর রোজগারের টানে এ দিন ওঁরা এসেছিলেন ব্রিগেডে।
ব্রিগেডের সভায় রবিবার পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া, মঙ্গলকোট, ভাতার, আউশগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাম সমর্থক-কর্মীদের নিয়ে এসেছিল প্রায় ৫০টি বাস। সেই সব বাসেরই চালক আলো শেখ, মানিকচাঁদ শেখ, সুধীর ঘোষ, কিংবা খালাসি দিলওয়ার মণ্ডল, শিবু বিশ্বাস, মনু ঘোষেরা— নিজেদের তৃণমূলের সমর্থক বলে দাবি করেছেন। তাই ১৯ জানুয়ারি তৃণমূলের ব্রিগেডের দিন যেমন মাঠে গিয়েছিলেন, এ দিন কিন্তু তা করলেন না তাঁরা। সওয়ারি বাম কর্মী-সমর্থকদের বাবুঘাটে বাস থেকে নামিয়ে ওঁরা তাঁদের জন্য গঙ্গার পাড়ে অপেক্ষা করে সময় কাটালেন। কেউ কেউ আবার বেলার দিকে কাঁধে গামছা এবং সাবান নিয়ে গঙ্গায় ডুব দিয়ে স্নানও সেরে নিলেন।
বাসচালক আলো শেখের কথায়, ‘‘গত সপ্তাহে মালিক আমাদের জানিয়েছিলেন বাস চালিয়ে বাম কর্মী-সমর্থকদের কলকাতায় নিয়ে আসতে হবে। সেই মতো আমরা স্থানীয় তৃণমূল নেতাকে জানিয়েছিলাম। উনি কোনও আপত্তি করেননি।’’ আবার মানিকচাঁদ শেখ বলেন, ‘‘রাজনীতিতে সৌজন্য থাকাটাই উচিত। আমি তৃণমূল সমর্থক বলে গাড়ি চালিয়ে বাম সমর্থকদের নিয়ে আসতে পারব না, এই মানসিকতা একেবারেই ঠিক নয়।’’ ১৯ তারিখ দলের ব্রিগেডের দিন মানিকবাবুরা বাস চালিয়ে সমর্থকদের নিয়ে এসেছিলেন। সে দিন দলের তরফে বাবুঘাটের সামনে মাঠে রান্নাবান্না করে খাওয়া-দাওয়া করেন সবাই। তার পরে ব্রিগেডের মাঠেও যান। তবে রবিবার দুপুরে নিজেদের খরচে বাবুঘাটের সামনের হোটেলে ডিমভাত খেলেন ওঁরা।
চালক অপু সর্দারের কথায়, ‘‘বাড়িতে স্ত্রী, দুই ছেলেমেয়ের সংসার। বাস চালালে টাকাও তো পাব। সেটাও তো একটা ব্যাপার।’’ চালক বিশ্বজিৎ ঘোষের কথায়, ‘‘ব্রিগেডের সভার আগে একটা অপপ্রচার চলছিল যে বামেদের ব্রিগেডের সভায় তাদের সমর্থকদের আসতে তৃণমূল বিভিন্ন ভাবে বাধা দিচ্ছে। কিন্তু বর্ধমানের কাটোয়া, ভাতার, মঙ্গলকোট থেকে আমাদের মতো প্রায় পঞ্চাশ জন তৃণমূল সমর্থক বাসের চালক, খালাসির সক্রিয় উপস্থিতি এটাই প্রমাণ করে যে তৃণমূল কোনও বিভাজনের রাজনীতি করে না।’’
ব্রিগেড মাঠে যাবেন না?
আউশগ্রাম থেকে বাস নিয়ে আসা চালক জোসেফ মুর্মু বলেন, ‘‘আমি এসেছিলাম বাসের চালক হিসেবে। আমি তো বাম সমর্থক নই যে ব্রিগেডের মাঠে যেতে হবে।’’