—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
আর জি কর হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের তদন্ত নিয়ে ফের প্রশ্ন তোলায় পুরোপুরি রাজনৈতিক তরজার মঞ্চ সাজাল তৃণমূল কংগ্রেস। তদন্ত নিয়ে তৈরি সংশয়কে রাজনৈতিক বন্ধনীতে ফেলে বিরোধী দলগুলিকে বিঁধেই আক্রমণাত্মক প্রচার-কৌশল নিল শাসক দল। তাদের বক্তব্য, ‘সংশয়কে সত্য প্রমাণ করতে ঘটনায় ধৃতের হয়েই এ বার বিচার চাইতে হবে রামরেড’দের’ (বিজেপি ও সিপিএম)। বিরোধীরা অবশ্য বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এবং তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা অব্যাহত রেখেছে।
শিয়ালদহ আদালত থেকে বেরোনোর সময়ে সোমবার নিজেকে ‘নির্দোষ’ দাবি করেছিল আর জি করে ধর্ষণ ও খুনের ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার। সেই সঙ্গেই ‘আসল’ লোকজনকে আড়াল করতে তাকে মুখ বন্ধ রাখার জন্য চাপ দেওয়ার অভিযোগও শোনা গিয়েছিল তার গলায়। অভিযুক্তের সেই দাবি ঘিরে নতুন করে তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চিকৎসকদের একাংশ এবং বিরোধীরা। এই প্রেক্ষাপটেই বিষয়টিকে ফের এক বার রাজনীতির বৃত্তে নিয়ে পুরোদস্তুর চাপানউতোরের আবহ তৈরি করেছে তৃণমূল। ফের ওঠা সংশয়ের প্রশ্নকে কটাক্ষ করে দলের নেতা কুণাল ঘোষ মঙ্গলবার বলেছেন, ‘‘তখন যাঁরা সিবিআই তদন্ত চেয়েছিলেন, এখন তাঁরাই পাল্টি খেয়ে সিবিআইকে নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন!’’ সেই সূত্রেই তাঁর কটাক্ষ, ‘‘এর পরে হয়তো ধৃতের পক্ষে ন্যায়-বিচার চেয়ে মিছিল করবেন!’’
তরুণী চিকিৎসকের উপরে যে নৃশংস অত্যাচার হয়েছিল, তা কারও একার পক্ষে করা সম্ভব কি না, এক জন সিভিক ভলান্টিয়ারই শুধু অপরাধী হলে তথ্য-প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা হত কি না, এ সব প্রশ্ন গোড়া থেকেই ছিল। ধৃত সিভিক আদালতের বাইরে নতুন অভিযোগ তোলার পরে বিষয়টি নিয়ে ফের শোরগোল হচ্ছে। এই ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ যুক্ত আছে কি না বা তাদের আড়াল করা হচ্ছে কি না, সোমবার রাতে শহর ও জেলায় যে দ্রোহের কর্মসূচি পালিত হয়েছে তাতেও সেই প্রশ্ন ছিল সুনির্দিষ্ট। তাকেই হাতিয়ার করেছে তৃণমূল। সমাজমাধ্যমে সিপিএম, বিজেপি ও জুনিয়র চিকিৎসকদের কটাক্ষ করে কুণাল লিখেছেন, ‘ধৃতের আগামী শুনানির দিন লাল, গেরুয়া পতাকা পতাকা নিয়ে আসুন। এবং স্লোগান দিন, ‘জাস্টিস ফর সঞ্জয়’! এই আক্রমণে তৃণমূলের ‘অস্ত্র’ সিবিআই। তাদের বক্তব্য, কলকাতা পুলিশ যাঁকে ধরেছিল, সিবিআই-ও তাকেই অপরাধী চিহ্নিত করেছে। তার পরেও এই প্রশ্ন বা সংশয়ের অর্থ কী?
বিরোধীদের প্রশ্ন অবশ্য থামছে না। তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পরে সেই সন্ধ্যায় আর জি কর হাসপাতাল ও টালা থানায় উপস্থিত ছিলেন সিপিএমের যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় এবং রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পাল। ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষীর দাবি, ‘‘তিলোত্তমার ধর্ষণ ও খুন একটি প্রাতিষ্ঠানিক অপরাধ এবং ষড়যন্ত্র। এই অপরাধের সঙ্গে রাজ্যের প্রশাসন জড়িত। নেপথ্যে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের দুর্নীতি। ‘সেটিং’ তদন্ত করে এই অপরাধের বড় বড় মাথাদের আড়াল করা চলবে না।’’ তাঁর সংযোজন, সিবিআই দু’শো জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ধৃত যে ‘ডিপার্টমেন্টে’র কথা বলছে, সেই দফতরের প্রধানকে (মুখ্যমন্ত্রী) জিজ্ঞাসাবাদ করবে না কেন? অগ্নিমিত্রার বক্তব্য, ‘‘নির্যাতিতার শরীরে যত আঘাতের চিহ্ন ছিল, সে সব এক জনের পক্ষে করা সম্ভব? অপরাধ আড়াল করার জন্য প্রশাসনের এই সক্রিয়তা কি এক জন সিভিক ভলান্টিয়ারের জন্য? এই সমস্ত প্রশ্ন তো নির্যাতিতার পরিবার অনেক আগেই তুলেছে। এখন ধৃতের দাবিতে সেই প্রশ্নগুলোই উঠছে। মুখ্যমন্ত্রী আমাদের বোকা ভাবলেও সবাই তো বোকা নয়!’’