ঘুমন্ত শিশুটিকে অপহরণ করছে এক ব্যক্তি। ছবি জামশেদপুর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে।
বিয়ের বছর খানেকের মাথায় মেয়ের জন্ম। তার পরেই স্বামীবিচ্ছিন্না হয়ে সন্তানকে নিয়ে পুরুলিয়ার ঝালদায় দিনমজুর বাবার কাছে ফিরে এসেছিলেন যুবতী। বছর তিনেক পরে ফের জড়ান সম্পর্কে। কিন্তু সেই সম্পর্ক গড়ার আশ্বাস যার কাছ এসেছিল, ‘সে লোকটা ঠিক ছিল না’—এমনই উপলব্ধি তাঁর। সঙ্গে আক্ষেপ, ‘‘মেয়েটা চলে গেল!’’
‘সিসিটিভি ফুটেজ’ দেখে ঝাড়খণ্ডের টাটানগর স্টেশন থেকে তিন বছরের শিশুকন্যাকে অপহরণ, ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগে টেলকো থানা এলাকার দুই বাসিন্দাকে ধরেছে রেলপুলিশ। সঙ্গে ধরা হয়েছে ঝাড়খণ্ডেরই সাহেবগঞ্জের মনু মণ্ডলকে। যুবতীর দাবি, এই মনু মণ্ডলের ‘চাপাচাপিতেই’ তিনি ঝালদা থেকে জামশেদপুরে যেতে রাজি হন। সম্প্রতি নাম ভাঁড়িয়ে মনু তাঁর সঙ্গে ফোনে আলাপ পাতায়। মেয়েকে নিয়েই সংসার পাতার প্রস্তাব দেয়।
২৩ জুলাই মনু ঝালদায় পৌঁছয়। বলে, দেখা করতে। যুবতীর বাবা বলেন, ‘‘মেয়ে দোনামনা করছিল। আমিই বলি, এত দূরে যখন এসেছে ছেলেটা, দেখা অন্তত করে আয়।’’ মেয়েকে নিয়ে বেরোন যুবতী। ঝালদা বাসস্ট্যান্ডে দেখা হয় মনুর সঙ্গে। যুবতীর দাবি, মনু তখন ‘পীড়াপিড়ি’ করে জামশেদপুরে গিয়ে তার বাড়ির লোকেদের সঙ্গে পরিচয় করে আসতে।
মা-মেয়ের দুপুরের খাওয়া হয়নি তখনও। ঝালদা থেকে বাসে পুরুলিয়ায় গিয়ে একটি হোটেলে তিন জনে খান। তার পরে সেখান থেকে ট্রেন ধরে টাটানগর। সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। রাতটা স্টেশনে কাটিয়ে পর দিন সকালে মা ও মেয়েকে নিয়ে মনু চাইবাসায় একটি তালাবন্ধ বাড়ির সামনে হাজির হয়। যুবতীকে বোঝায়, টাটানগরে একটি পারিবারিক অনুষ্ঠান রয়েছে। সবাই সেখানে গিয়েছেন। যুবতীর কথায়, ‘‘তখন একপ্রস্ত সন্দেহ হয়েছিল। আঁচ করেছিলাম, ফাঁদে পড়েছি। কিন্তু অচেনা একটা জায়গায় কী করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না।’’
মা ও মেয়েকে নিয়ে মনু সে রাতেই ফিরে যায় টাটানগর স্টেশনে। রাতটা সেখানে কাটিয়ে, সকালে অনুষ্ঠানবাড়িতে যাওয়ার কথা বলে। যুবতী বলেন, ‘‘ঘুম এসে গিয়েছিল। হঠাৎ উঠে দেখি, মেয়ে নেই।’’ মনু পাশেই শুয়েছিল। যুবতীর সঙ্গে সে-ও শিশুটির খোঁজ করে। তবে অভিযোগ, মেয়ের হদিস না পেয়ে যুবতী রেল পুলিশের কাছে যেতে চাইলে, সে বাধা দেয়। নানা ওজর-আপত্তি করে। এমনকি, যুবতীর ফোনটিও নিয়ে নেয়। যুবতীর কথায়, ‘‘তখন চিৎকার করি। লোকজন জড়ো হয়ে যায়।’’
যুবতী ও জনতার চাপে মনু রেল পুলিশের কাছে যেতে বাধ্য হয়। রেল পুলিশ ‘সিসিটিভি ফুটেজ’ দেখে রিঙ্কু শাহ ও কৈলাস কুমার নামে দু’জনকে ধরে। গ্রেফতার হয় মনুও। বুধবার আদালত তাদের ১৪ দিনের জন্য জেল-হাজতে পাঠিয়েছে। ২৯ জুলাই উদ্ধার হয় শিশুটির দেহ। রেল পুলিশের এক কর্তা জানান, শনাক্ত করতে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যান যুবতী।