খড়্গপুরে মহিলা পরিচালিত বুথের পথে কর্মীরা। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
লোকসভা নির্বাচনের সময়কার গেরুয়া হাওয়ার এখন কী হাল? তৃণমূল তাদের হারানো জমি কতটা পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে? বাম ও কংগ্রেসের আসন সমঝোতা কতটা দাগ কাটতে পারছে বিরোধী পরিসরে? এ সব প্রশ্ন নিয়েই তিন জেলার তিন বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হতে চলেছে আজ, সোমবার। তিন কেন্দ্রে মোতায়েন থাকবে মোট ২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। থাকবে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশও। ভোটের ফল ঘোষণা হবে ২৮ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার।
বিগত বিধানসভা নির্বাচনের ফল অনুযায়ী, উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে বিধায়ক ছিলেন কংগ্রেসের প্রমথনাথ রায়। তাঁর মৃত্যুতে ওই আসনে উপনির্বাচন হচ্ছে। নদিয়ার করিমপুর ও পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুর সদরে বিধায়ক ছিলেন যথাক্রমে তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র ও বিজেপির দিলীপ ঘোষ। দু’জনেই লোকসভার সাংসদ হয়ে বিধায়ক-পদে ইস্তফা দেওয়ায় ওই দু’টি আসনে উপনির্বাচন করতে হচ্ছে। কালিয়াগঞ্জ ও খড়গপুর সদর আসন কোনও দিনই শাসক দল তৃণমূলের দখলে ছিল না। বিধায়ক কংগ্রেসের থাকলেও লোকসভা ভোটের নিরিখে কালিয়াগঞ্জে বিজেপি এগিয়ে। খড়গপুরে বিধানসভা ও লোকসভা— দুই ভোটেই এগিয়ে বিজেপি। সেই দিক থেকে দেখলে করিমপুরই শুধু বিধানসভা ও লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে তৃণমূলের দখলে এবং সেই দখল ধরে রাখাই তাদের কাছে প্রথম চ্যালেঞ্জ।
করিমপুরেই আজ ২৬১টির মধ্যে প্রায় ৯৫% বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভোট হবে। পুলিশের কিছু আধিকারিককেও সেখানে ইতিমধ্যে বদলি করা হয়েছে। পক্ষান্তরে, কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে কালিয়াগঞ্জের ২৭০টির মধ্যে প্রায় ৪২% এবং খড়্গপুরে ২৭০টির মধ্যে প্রায় ৭৩% শতাংশ বুথে। কেন্দ্রীয় বাহিনী বণ্টনের এই ‘বৈষম্য’ নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। তিনটি কেন্দ্রেই এক জন করে পুলিশ পর্যবেক্ষক রয়েছেন। কমিশন সূত্রের খবর, মোট ৮০১টি বুথের প্রায় ৩১০টিতে থাকবেন মাইক্রো-পর্যবেক্ষক।
বিগত নির্বাচনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখলে এ বারের উপনির্বাচন তৃণমূলের চেয়েও বেশি করে বিজেপির কাছে জমি আগলানোর লড়াই। বিশেষত, লোকসভার সাফল্যের পরে যারা ২০২১ সালে রাজ্যে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখছে, তাদের জনপ্রিয়তার সর্বশেষ পরিমাপ পাওয়া যাবে উপনির্বাচন থেকে। দেশ জুড়ে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) চালু করার কথা ঘোষণা করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এনআরসি-র প্রবল বিরোধিতায় নেমেছে শাসক তৃণমূল এবং বিরোধী বাম ও কংগ্রেস। এনআরসি-র প্রভাব বাংলার জনতার মধ্যে কেমন পড়ছে, তারও একটা প্রাথমিক ইঙ্গিত এই উপনির্বাচন থেকে পাওয়া যাবে মনে করছেন তিন দলের নেতৃত্ব। মেরুকরণের ফায়দার আশায় থাকা বিজেপি আবার পাল্টা দাবি করছে, বিরোধীরা এনআরসি নিয়ে ‘আতঙ্ক’ ছড়াতে চাইছে।
আরও বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন এবং শাসক দলের আনা ‘বহিরাগত’দের এলাকা থেকে বার করে দেওয়ার দাবি নিয়ে শিশির বাজোরিয়ার নেতৃত্বে বিজেপির একটি প্রতিনিধিদল রবিবার কমিশনের সিইও আরিজ আফতাবের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল। ‘বহিরাগত’দের সরানোর পাশাপাশিই সিইও-র কাছে কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যের দাবি, গ্রামে গ্রামে রাতে বা ভোরের দিকে যাতে মানুষকে ভয় দেখানো না হয়, কমিশনকে বাহিনী দিয়ে তা নিশ্চিত করতে হবে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি ও মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষ রয়েছেন খড়গপুরে তাঁর সাংসদ-নিবাসে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এ দিন বলেছেন, ‘‘বহিরাগত দিলীপ ঘোষকে খড়গপুর শহর থেকে বার করার দাবিতে পর্যবেক্ষকের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি। কিন্তু কমিশন পক্ষপাতিত্ব করছে।’’ বিজেপি নেতা তুষার মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘সাংসদ হিসেবে দিলীপদা নিজের রেল-বাংলোয় রয়েছেন। তৃণমূল আগে নিজেদের আনা বহিরাগত দুষ্কৃতীদের বার করুক!’’
দিলীপবাবু বলেছেন, ‘‘কমিশন খড়গপুরে অন্তত ১০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়ার কথা বলেছিল কিন্তু এসেছে পাঁচ কোম্পানি। সব বুথে বাহিনীর জন্য আবার চিঠি লিখেছি।’’ তৃণমূলের দুই রাজ্য নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও ফিরহাদ হাকিম কোনও প্ররোচনায় পা না দিয়ে নির্ভয়ে ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন।