প্রতীকী ছবি।
প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস বা প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর সম্ভাব্য তৎপরতা সম্পর্কে কেন্দ্রের তরফে হুঁশিয়ার করে দেওয়া হয়। এ বার নাশকতার আশঙ্কা থেকে পুরো পুজো পর্বে একই রকম সতর্ক থাকার বার্তা দিল রাজ্য সরকার।
রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, ১২-১৫ অক্টোবর দুর্গাপুজা ও দশেরা পালিত হবে। সেই সময় বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি নাশকতা ঘটিয়ে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা এবং অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। তাই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং নজরদারি রাখতে হবে।
অনেক প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকই মনে করছেন, দুর্গাপুজোয় এমন নাশকতার সতর্কবার্তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। অতীতে মহোৎসবের সময় সরকার এমন বার্তা দিয়েছে কি না, তা স্মরণ করতে পারছেন না প্রবীণ আমলাদের অনেকেই। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করছেন, আফগানিস্তানকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির সঙ্গে এই সতর্কবার্তার সম্পর্ক রয়েছে।
প্রশাসনিক বিশেষজ্ঞদের অনেকের ব্যাখ্যা, জঙ্গি বা বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলি মূলত নিশানা করে জনবহুল স্থান, উৎসবের ভিড় বা অন্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকাকে, যেখানে নাশকতা ঘটালে বড় ধরনের ক্ষতি করার সঙ্গে সঙ্গে তাদের উদ্দেশ্যের প্রচারও সম্ভব। দশেরা, দুর্গাপুজোয় রেকর্ড ভিড় হয়। জঙ্গিরা মনে করে, তখন নাশকতা ঘটাতে পারলে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠবে, অস্থিরতা বাড়বে। একই ভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে গোষ্ঠী-বিরোধে উস্কানি দেওয়াও সহজ হবে।
আফগানিস্তানে তালিবানি শাসন প্রতিষ্ঠার পর থেকে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর তৎপরতা বৃদ্ধির ইঙ্গিত পাচ্ছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। এ দেশে অস্থিরতা সৃষ্টিই যে সেই তৎপরতার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য, সেই ব্যাপারে তাঁরা মোটামুটি নিঃসন্দেহ। যার অন্যতম উদাহরণ কাশ্মীরে সাম্প্রতিক নাশকতা ও হত্যাকাণ্ড। এই অবস্থায় উৎসবমুখী রাজ্যগুলিকে এ ব্যাপারে সতর্কবার্তা দিয়েই রেখেছে কেন্দ্র। পুজোর সময় রাজ্যের তরফে এমন সতর্কবার্তা তাতে নতুন সংযোজন।
নাশকতা ঠেকাতে নজরদারির প্রশ্নে দু’টি পথ ধরতে চাইছে প্রশাসন। একটি পথ পুলিশের, অন্যটি নাগরিক-সচেতনতা এবং নজরদারি। কিছু দিন আগে পুজোর বিধি প্রকাশ করেছেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। তাতে নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট অনুশাসনের আওতায় পুজো করার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। বেশি সংখ্যায় স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করে পুজোর ব্যবস্থাপনার নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। স্বরাষ্ট্র দফতর সেই বিধি অক্ষরে অক্ষরে পালনের উপরে জোর দিয়েছে। কোভিড বিধি পালনের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকদের উপরে নজরদারির বাড়তি দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলেছে সরকার। কারও গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হল তার উপরে নজর রেখে পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করতে বলা হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবকদের। বড় পুজোগুলিতে ক্লোজ্ড সার্কিট ক্যামেরা এবং ‘ওয়াচ টাওয়া’ বা নজরমিনার বসানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘন বসতিপূর্ণ, স্পর্শকাতর, গুরুত্বপূর্ণ এবং মিশ্র এলাকাগুলিতে বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থা হচ্ছে।
বিসর্জনেরও নিয়মবিধি ও তারিখ নির্দিষ্ট করে দিয়েছে নবান্ন। স্বরাষ্ট্র দফতরের নির্দেশ, শুধু ১৫, ১৬, ১৭ এবং ১৮ অক্টোবরেই প্রতিমা ভাসান দেওয়া যাবে। পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করে বিসর্জনের দিন এবং সময় স্থির করতে বলা হয়েছে পুজো উদ্যোক্তাদের। ভাসানের জন্য কলকাতা পুলিশের এলাকায় গঙ্গার ২৪টি ঘাট-সহ মোট ৭০টি ঘাট নির্দিষ্ট রয়েছে। লালবাজার জানিয়েছে, বিসর্জনের জন্য নির্দিষ্ট চার দিন সব ঘাটেই পর্যাপ্ত বাহিনী থাকবে। সঙ্গে থাকবে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও। দুই শিফটে ওই বাহিনী মোতায়েন করার কথা আছে। নজরমিনার থাকবে সব ঘাটেই। এ ছাড়া সিসি ক্যামেরার সাহায্যে চলবে লাগাতার নজরদারি।
বিসর্জনের দিনগুলিতে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পুলিশ পিকেট থাকছে। যে-কোনও ধরনের নাশকতা ঠেকাতে সাদা পোশাকের পুলিশও মোতায়েন করা হবে। বিধি মেনে মাইক ব্যবহারের সঙ্গে পুজোর সময় অবাঞ্ছিত ঘটনা এড়াতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন।