যোগেশ্বরী কালীমন্দির। নিজস্ব চিত্র।
এক সময় আদিগঙ্গার পাড়ে ঘন জঙ্গল ঘেরা শ্মশানে কালীর আরাধনা শুরু করেছিলেন তান্ত্রিকরা। কালের নিয়মে জঙ্গল না থাকলেও এখনও শ্মশান চত্বরে নির্জন পরিবেশ। চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য সমাধি। তারই মধ্যে মাথা তুলেছে লতাপাতার জঙ্গল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুরের সাতঘরা ঠাকুরঝি গ্রামের যজ্ঞবাটি মহাশ্মশানে কয়েক’শো বছর ধরে পূজিত হয়ে আসছেন মা যজ্ঞেশ্বরী কালী।
অধুনালুপ্ত আদি গঙ্গার তীরে অবস্থিত এই শ্মশান। শ্মশানে রয়েছে তিন চূড়া বিশিষ্ট মন্দির। সেখানেই পূজিত হন মা যোগেশ্বরী কালী। তন্ত্র মতে নৈবেদ্য হিসেবে দেবীকে অর্পন করা হয় মদ, মাংস ও ছোলা। এক সময় ছত্রভোগ হয়ে নীলাচলে যাওয়ার পথে এই শ্মশানেই নাকি বিশ্রাম নিয়েছিলেন স্বয়ং চৈতন্য মহাপ্রভু। সে দিক থেকে বিচার করলে এই জায়গার বিশেষ মাহাত্ম্য।
আগে এই জায়গায় বৈরাগী সম্প্রদায়ের মানুষের সমাধি দেওয়া হত। অনেকের ধারণা, বৈরাগীরা সমাধিকে 'যজ্ঞবাড়ি' বলত, তাই এই এলাকার নাম হয়ে যায় যজ্ঞবাটি। পরবর্তী কালে অপঘাতে মৃত শিশুদের দেহ সমাধিস্থ করা হত এই জায়গায়। প্রাচীন এই শ্মশানকে ঘিরে রয়েছে নানা কাহিনী। মূলত সুন্দরবন এলাকার তান্ত্রিকরা তন্ত্র সাধনার জন্য এই শ্মশানে আসতেন। জঙ্গল ঘেরা পরিবেশে তন্ত্র সাধনা করতে প্রথম আসেন শিবানন্দ ব্রহ্মচারী নামে এক তন্ত্র সাধক। তিনিই প্রথম ১০৮ টি নরমুণ্ড দিয়ে তন্ত্র সাধনা শুরু করেন বলে জনশ্রুতি। ধীরে গড়ে ওঠে মায়ের মন্দির। শুরু হয় মা কালীর নিত্যপূজা।
শিবানন্দ ব্রহ্মচারী মারা যাওয়ার পরে সাধুনি নামে এক মহিলা সাধু মায়ের সেবা করতে শুরু করেন। তার পরে প্রায় বন্ধ হতে বসেছিল মায়ের পূজা। তবে গ্রামের বাসিন্দারাই পরবর্তী কালে পুজোর হাল ধরেন। সেই কালীপুজো হয় আজও। দূরদূরান্ত থেকে আসেন ভক্তেরাও।
কথিত আছে, পৌরাণিক কালে ভাগীরথ গঙ্গা আনয়নের সময় অধুনা যজ্ঞবাটি শ্মশানের কাছে বিশ্রাম নিয়ে যজ্ঞ করেছিলেন। সেই থেকে এই এলাকার নাম যজ্ঞবাটি। তবে তা নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। এলাকার আঞ্চলিক ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্বের গবেষক দেবী শংকর মিদ্যা জানিয়েছেন, 'এই এলাকায় পৌরাণিক অনুসঙ্গ থাকলেও প্রামাণ্য ইতিহাস পাওয়া যায় না।