—প্রতীকী ছবি।
এক দিকে রাজ্যের হাজার হাজার বিএড পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ। যা আপাতত অন্ধকারে। অন্য দিকে, বিএড বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা নিয়ম। যাতে বলা হয়েছে, ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পোর্টালের মাধ্যমেই। কলেজ মারফত নয়। আর এই দুইয়ের মাঝে রয়েছে নিয়ম না মানা কয়েকশো বেসরকারি বিএড কলেজ। যারা দিনের পর দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মকে অবজ্ঞা করে নিজেরা ভর্তি নিয়েছে শিক্ষক হতে চাওয়া হাজারো শিক্ষার্থীকে। আর সেই ‘অনিয়মের’ মাসুল এখন গুনছেন ওই পড়ুয়ারা। যাঁদের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মের হদিশ পাওয়া সম্ভব নয়। কলেজগুলিকে বিশ্বাস করে এখন তাঁদের পড়শোনা শেষ হওয়া সত্ত্বেও ডিগ্রি জুটবে না। সোমবার এই সমস্ত ছাত্রছাত্রীরাই জড়ো হয়েছিলেন বিএড বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। জবাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, অনৈতিক দাবি করলেও তা মানতে হবে নাকি!
সম্প্রতিই রাজ্যের ২৫৩টি বিএড কলেজের অনুমোদন সাময়িক বাতিল করেছে রাজ্যের বিএড বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রয়েছে মোট ৬২৪টি বিএড কলেজ। কিন্তু তার মধ্যে প্রায় ৬০০টিই বেসরকারি। এর মধ্যেই ২৫৩টি কলেজের অনুমোদন পুনর্নবীকরণের আবেদন খারিজ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শর্তপূরণ না করায়। এই তিনটি শর্ত হল— এক, কলেজে যথাযথ অগ্নিনির্বাপণ এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যবস্থা থাকা। দুই, শিক্ষক এবং ছাত্রের অনুপাত ঠিক রাখা এবং তিন, শিক্ষকদের বেতন দেওয়ার প্রমাণপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে দাখিল করা। ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এই তিনটি শর্তই না মানায় তাদের অনুমোদন পুনর্নবীকরণের প্রস্তাব খারিজ করা হয়। সেখান থেকেই ঘটনার সূত্রপাত।
একসঙ্গে আড়াইশোরও বেশি বিএড কলেজের অনুমোদন বাতিল হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীরা পড়েন আতান্তরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁরা। অদ্ভূত ভাবে এই বিক্ষোভে শামিল হন নিয়মভাঙা কলেজ কর্তৃপক্ষও। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘প্রত্যন্ত গ্রামে দূরদূরান্ত থেকে ভর্তি হতে আসা ছাত্রছাত্রীদের বরাবর এ ভাবেই ভর্তি নিয়ে এসেছেন তাঁরা। তা হলে এখন কেন অনিয়ম বলা হচ্ছে?’’ ছাত্রদের প্রশ্ন, প্রশিক্ষণ নিয়ে যে সময় তারা ব্যয় করেছেন, তার কি পুরোটাই নষ্ট? এখন কোথায় যাবেন তাঁরা? এর জবাবে অবশ্য বিআর অম্বেডকর এডুকেশন ইউনিভার্সিটির অস্থায়ী উপাচার্য সোমা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এঁরা নিয়ম না মেনে ভর্তি হয়েছেন। তাই নীতিগত ভাবে এঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নন।
ছাত্রেরা অবশ্য বলছেন, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত ৬২৪টি কলেজের তালিকা দেখে তবেই ভর্তি হয়েছেন। তাঁরা কী করে জানবেন। আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে সেই প্রশ্ন উপাচার্যের কাছে রাখা হলে তিনি প্রশ্ন করেন, ‘‘ইউনিভার্সিটির নিয়ম হল, বিশ্ববিদ্যালয়ের পোর্টালের মাধ্যমে ভর্তি হতে হবে ছাত্র-ছাত্রীদের। যাঁরা তা হননি, তাঁদের ইউনিভার্সিটির ছাত্র হিসাবে মেনে নেওয়া হবে কী ভাবে?’’
প্রসঙ্গত কিছু দিনের ছুটি পেরিয়ে সোমবার খুলেছিল বিশ্ববিদ্যালয়। উপাচার্য এবং অন্যান্য প্রশাসনিক ব্যক্তিকে হুমকি দেওয়া হয়েছে এই অভিযোগেই বন্ধ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়। সোমবার একলাইনের একটি নোটিস দিয়ে আবার তা খোলা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানান, পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয় আজ থেকে খোলা হল।
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের হয়ে কথা বলতে এসেছিলেন বিএড ইউনিভার্সিটির কোর্ট অ্যান্ড কাউন্সিলের মেম্বার মনোজিৎ মণ্ডল এবং প্রাক্তন উপাচার্য তথা কোর্ট অ্যান্ড কাউন্সিলের সদস্যা মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার তাঁরা কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের সঙ্গে। বলেন, যে ছাত্ররা প্রত্যন্ত গ্রামে থাকেন, তাঁদের হয়ে কথা বলতে এসেছেন। এরও জবাবে ফোনে আনন্দবাজার অনলাইনকে সোমা বলেন, ‘‘এঁরা ইউনিভার্সিটির মেম্বার হয়ে কী ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতির বিরুদ্ধে কথা বলছেন। এঁরা তো নিজেদেরই তৈরি নীতির বিরুদ্ধে কথা বলছেন।’’