ভরসা কমিশনে, তবু প্রতিরোধের প্রস্তুতি

৩ এপ্রিল দাঁতনের সভায় এসে সাহসটা দিয়ে গিয়েছিলেন সূর্যকান্ত মিশ্র। বলেছিলেন, ‘‘বুথে বুথে দৃপ্ত মিছিলে মাটি কাঁপিয়ে দিতে যদি না পারেন তাহলে ওই নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে নির্বাচন হবে না।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দাঁতন শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৬ ০১:১২
Share:

৩ এপ্রিল দাঁতনের সভায় এসে সাহসটা দিয়ে গিয়েছিলেন সূর্যকান্ত মিশ্র। বলেছিলেন, ‘‘বুথে বুথে দৃপ্ত মিছিলে মাটি কাঁপিয়ে দিতে যদি না পারেন তাহলে ওই নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে নির্বাচন হবে না।’’

Advertisement

সেই সাহসে ভর করে ছক সাজাতে চাইছে বিরোধী কর্মী-সমর্থকরা। কিন্তু ভয় তো যায় না! শেষ পর্যন্ত কার্যকর করা যাবে তো পরিকল্পনা, নিজের ভোটটা নিজে হাতে দেওয়া যাবে তো! সেই ভাবনাই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে রোদজ্বলা গরম হাওয়ায়।

স্থানীয় বাসিন্দারা আড়ালে আবডালে হিসাব দিয়েছেন— গত লোকসভা ভোটে সিঙ্গাস প্রাথমিক বিদ্যালয় বুথের জনা তিরিশেক ভোটার তৃণমূলের হুমকি উপেক্ষা করে ভোট দিতে আসতে পারেননি। শ্রীচন্দনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৪৫ জন বাম সমর্থকও বুথে আসতে পারেননি বলে অভিযোগ। ভোটের কয়েকদিন আগে থেকেই শাসক দলের বাহিনী বাড়ি বাড়ি হুমকি দিয়ে এসেছিল যাতে কেউ ভোটকেন্দ্রে না-যান। তবে সে হুমকি উপেক্ষা করে দল বেঁধে কয়েকজন বেরিয়েছিলেন ভোট দেবেন বলে। পারেননি। বুথে ঢোকার আগেই তাঁদের আটকে দেয় মারমুখী শাসকের দলবল। এমন অভিযোগ করেছেন দাঁতন বিধানসভা বুথের ভোটারই। এ বার তাই আগে থেকেই জোট বাঁধছেন বিরোধী কর্মীরা। সাহস করে সামিল হয়েছেন কয়েকজন সাধারণ ভোটারও। লক্ষ্য একটাই, নিজের ভোটটা নিজে দেওয়া।

Advertisement

গত পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে ভোট কব্জা করেছিল শাসক তৃণমূল, এমন অভিযোগ হামেশাই করছেন বিরোধীরা। কমিশন এ বার তাই একটু বেশি কড়া। কিন্তু, চলতি বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ১৮ টি কেন্দ্রের ভোট নিয়ে মোটেও খুশি হতে পারছেন না দাঁতনের বিরোধী শিবির। তাই শুধু কমিশনে ভরসা রেখে আরও একটি ভোট পার করে দিতে চান না তাঁরা। চান না সাধারণ অনেক ভোটারও।

তাই বুথে বুথে প্রতিরোধ পরিকল্পনা করেছেন তাঁরা। কী সেই পরিকল্পনা? এখনই ভেঙে বলতে চাইছেন না। আগে থেকেই চিহ্নিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও করছেন। রয়েছে অন্য ভয়ও। স্থানীয় কয়েকজন গ্রামবাসী বলছেন, “আমরা কৌশল নিয়েছি ঠিকই। তবুও সবাই একজোট হয়ে বেরিয়ে না আসা পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না। ভোটের পরে যাই হোক ভোটের দিন কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকার উপর নির্ভর করছে অনেক কিছু।”

দাঁতন-২ ও মোহনপুর ব্লকের সঙ্গে দাঁতন-১ ব্লকের একটি পঞ্চায়েত নিয়ে দাঁতন বিধানসভা। বুথ রয়েছে মোট ২৭১ টি। গত পঞ্চায়েত ভোটে মোহনপুর ব্লকের ৮৭ টি আসনের মধ্যে ৫৫টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল তৃণমূল। অভিযোগ ৪৪ টি বুথে বামেদের এজেন্টই ছিল না। বিরোধীদের অভিযোগ, বাকি বুথগুলিতে মাঝপথে এজেন্টদের বার করে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। লোকসভা ভোটে ১০৭ টি বুথের মধ্যে ৪২টিতে ছিল না বুথ এজেন্ট। দাঁতন-২ ব্লকে পঞ্চায়েত ভোটে ১১৪ টি আসনের মধ্যে ৩৯টিতে লড়াই ছাড়াই জিতেছিল তৃণমূল। লোকসভা ভোটে ৩৮ টি বুথে তারা পোলিং এজেন্টই দিতে পারেনি।

এ বার কী পরিস্থিতি বদলাচ্ছে? বাম ও কংগ্রেস নেতারা বলছেন, গত দু’টি ভোটে যে সমস্ত বুথে তাঁরা প্রচার পর্যন্ত করতে পারেননি এ বার সেখানে মানুষ তাঁদের সমর্থনে পথে বেরিয়ে এসেছেন। গ্রামের অনেক বাড়িতেই প্রচার করতে পেরেছেন। দেওয়াল লিখন হয়েছে। দাঁতনে জোটের প্রার্থী সিপিআইয়ের শিশির কুমার পাত্র বলেন, “এ বার সব বুথে এজেন্ট দেওয়া যাবে বলেই আমার বিশ্বাস। কেন্দ্রীয় বাহিনী ও কমিশনকে ভরসা করতে হচ্ছে। আগের থেকে জোটের কর্মী সমর্থকদের মন থেকে ভয় ভীতি কমেছে।” তৃণমূল প্রার্থী বিক্রম প্রধানের দাবি, “বাম আমলেই এলাকাগুলি সন্ত্রাস কবলিত ছিল। এখন মানুষ নির্ভয়ে ভোট দেন। এই কেন্দ্রের কোথাও কোনও সমস্যা নেই।”

তবুও আশঙ্কায় রয়ে গিয়েছে। সিপিএমের মোহনপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক প্রণব দে বলছেন, “মানুষ প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত। আমরা সংঘর্ষের পথে যাব না। কিন্তু স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ হলে আমাদের কিছুই করার থাকবে না।” এর জবাবে তৃণমূল নেতা প্রদীপ পাত্র বলেন, “এলাকায় ওদের জনসমর্থন নেই। অভিযোগ থাকলে কমিশনে জানায়নি কেন?” তৃণমূলকে ঠেকাতে আরও একটু কড়া অবস্থান নিয়েছেন সিপিএমের দাঁতন ২ জোনাল সম্পাদক রতন দে। তাঁর সাফ কথা, “জিততে হলে তৃণমূলের ভোট লুঠ আটকাতে হবে। তার জন্য চাই প্রতিরোধ ব্যবস্থা। স্থানীয়ভাবে আমাদের প্রতিরোধ প্রস্তুতি সারা।” তবে ব্লকের প্রায় দশটি বুথে এখনও বুথ এজেন্ট দেওয়া নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন বলে
জানান রতনবাবু।

দাঁতনের নির্বাচনী আধিকারিক পুষ্পেন্দু সরকার বলেন, “দাঁতন কেন্দ্রের ২৭১ টি বুথের ভোটারদের জন্য সবরকম নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement