ঘাটালের দাসপুরের সোনাখালির এক অনুষ্ঠানে সাংসদ দেব। সোমবার। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।
বিজেপিতে যাওয়া মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে সিনেমা করে এবং পরে তাঁকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়ে এর মধ্যেই বিতর্কে জড়িয়েছেন ঘাটালের তৃণমূল সাংসদ দেব। এ বারে আরও এক ধাপ এগিয়ে আবাস দুর্নীতি নিয়ে তাঁর মন্তব্য, “যাঁদের মাথায় ছাদ নেই, তাঁরা পাচ্ছেন না। যাঁদের পাকা বাড়ি আছে, তাঁরা বাড়ি পাচ্ছেন।’’ এর পরেই তিনি বলেন, ‘‘যেটা ভুল, সেটা ভুল। আমার দল করুক কিংবা অন্য দল করুক। যাঁদের প্রাপ্য, যাঁরা সত্যিই গরিব মানুষ, তাঁদের পাওয়া উচিত।”
দেবের এই মন্তব্য নতুন করে বিতর্কে ইন্ধন দিয়েছে। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তৃণমূলও কঠোর ভাবে জানিয়েছে, দেবকে মনে রাখতে হবে, তিনি দলের সাংসদ। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘সিনেমা নিয়ে কিছু বলছি না। তবে আবাসে স্বচ্ছতার জন্য দল ও সরকার যা করার করেছে। তাই কোনও মন্তব্য করার আগে খেয়াল রাখতে হবে, আমরা যেন বিজেপির ফাঁদে পা না দিই। কেন অযোগ্যের নাম রয়েছে, কবে তা তালিকায় এসেছে, সে সব না বললে কিন্তু বোঝাই যাবে না, ঠিক কী হয়েছে।’’
সোমবার ঘাটালের দাসপুরে একাধিক কর্মসূচিতে এসেছিলেন স্থানীয় সাংসদ দেব। দুপুরে সোনাখালিতে প্রতিবন্ধীদের সহায়ক সরঞ্জাম বিলির অনুষ্ঠান সেরে বিকেলে যান চাঁইপাটে এমপি কাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণে। মাঝে কিছুক্ষণ কাটান দাসপুর-২ ব্লক অফিসের এক আবাসনে।
সেখানে এক প্রশ্নের জবাবে দেব আবাস যোজনায় তালিকা তৈরিতে দুর্নীতির অভিযোগুলিকে কার্যত মান্যতা দিয়ে জানান, যাঁরা সত্যিই গরিব, যাঁদের এই বাড়ি পাওয়া উচিত, তাঁরা পাচ্ছেন না। পক্ষান্তরে যাঁদের পাকা বাড়ি আছে, তাঁরা বাড়ি পাচ্ছেন, এ কথাও উল্লেখ করেন তিনি। তাঁর মতে, এই ভুল যদি তাঁর দল করে থাকে, তা হলেও সেটা ভুলই।
আবাস যোজনায় নানা অভিযোগ ও তদন্তের প্রেক্ষিতে তৃণমূল নেতৃত্ব দলীয় পদাধিকারীদের এর মধ্যেই নির্দেশ দিয়েছেন, যেন নিজেদের নাম কাটিয়ে নেওয়া হয়। সোমবার যেমন মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের জঙ্গিপুরের সভাপতি খলিলুর রহমান এবং কোচবিহারে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহও নিজেদের এলাকায় জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘দলের নেতা বা পঞ্চায়েত সদস্যদের কারও নাম তালিকায় থাকলে, তাঁকে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।’’ তৃণমূলের একাংশের দাবি, দলে যে ভুল শোধরানোর চেষ্টা শুরু হয়েছে, সেটা কিন্তু দেবের কথায় ধরা পড়েনি। এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি বলছেন, ‘‘দেবের সঙ্গে আমিও একমত। যাঁরা প্রকৃত গরিব, যাঁরা ঘর পাননি, তাঁদের ঘর পাওয়া উচিত। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের ভুল কিছু নীতির জন্যই প্রকৃতরা ঘর পাচ্ছেন না।’’ বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তুষার মুখোপাধ্যায় পাল্টা বলছেন, ‘‘আবাস নিয়ে যে দুর্নীতি হয়েছে, সেখানে তাঁর দলের লোকই যে জড়িত, তা সাংসদ বুঝতে পারছেন। তাই বিবেকবানের মতো কথা বলেছেন।’’
এ দিন ফের ‘প্রজাপতি’ ছবির প্রসঙ্গ টেনেছেন দেব। মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে নিজের অভিনয়ের কথা উল্লেখ করে দেব বলেন, “আমরা যদি ভাল থাকতে পারি, তা হলে গ্রামের মানুষ কেন ভাল থাকবেন না? রাজনীতি মানে মানুষের পাশে থাকা। তার জন্য যদি মারপিট, রক্তারক্তি করতে হয়, সেই রাজনীতি আমি বিশ্বাস করি না।” দেবের সোজা কথা, “তুমি একটা দল করছ মনে এই নয়, বাকি দলগুলো তোমার শত্রু।”
পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলীয় কোন্দল প্রসঙ্গেও এ দিন দেবকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। এ বারও সাংসদের জবাব, “আমি তো দলের মুখপাত্র নই। তবে নিজেদের মধ্যে গোলমাল করবেন না। আপনার যদি শরীর খারাপ হয়, তখন আপানার পাশের লোক, তিনি যে দলই করুন, তাঁরাই প্রথমে ছুটে আসবেন।”