ছবি : সংগৃহীত।
গুজরাত থেকে অরুণাচল প্রদেশের ভৌগোলিক দূরত্ব ৩১৬০ কিলোমিটার। সেই অরুণাচলের জঙ্গলে কোনও হাতি কষ্ট পাচ্ছে কি না বা তাদের উপর অত্যাচার চলছে কি না, তা গুজরাতে বসে জানার কথা নয়। মুকেশ অম্বানীর কনিষ্ঠ পুত্র পশুপ্রেমী অনন্ত অম্বানীর সংস্থা বনতারা কিন্তু জানল এবং অরুণাচলে কষ্টে থাকা সেই হাতি এবং তার সঙ্গীদের উদ্ধারও করল। বনতারা জানিয়েছে, কাঠ ব্যবসায়ীদের অত্যাচারের শিকার হচ্ছিল ওই হাতিগুলি। ত্রিপুরা হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের তৈরি উচ্চস্তরীয় কমিটির অনুমোদন পেয়ে তাদের উদ্ধার করে বনতারা। আপাতত হাতিদের জন্য তৈরি বিশেষ অ্যাম্বুল্যান্সে তারা অরুণাচল থেক গুজরাতের পথে। বুধবারই তাদের পৌঁছে যাওয়ার কথা জামনগরে।
মোট ২০টি হাতি উদ্ধার করা হয়েছে অরুণাচল প্রদেশ থেকে। এর মধ্যে ১০টি পুরুষ হাতি, আটটি স্ত্রী হাতি, একটি শৈশবোত্তীর্ণ হাতি এবং একটি হস্তিশাবক রয়েছে। এদের প্রত্যেকেরই নতুন ঠিকানা হতে চলেছে জামনগরে অম্বানী পরিবারের নিজস্ব পশু-আশ্রয় কেন্দ্র বনতারা। এ ব্যাপারে অরুণাচলে ওই হাতিদের বর্তমান মালিকের কাছ থেকেও অনুমোদন নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
বৃক্ষচ্ছেদনের কাজে হাতিদের ব্যবহার করার চল বহু দিনের। তার কারণ, হাতিদের দিয়ে অনেক বেশি শ্রমের কাজ অনেক কম খরচে এবং সহজে করিয়ে নেওয়া যায়। হাতিকে কাজে ব্যবহার করা হয়, তাদের ক্ষমতার খেয়াল না রেখেই নিরলস পরিশ্রম করানো হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অরুণাচলের জঙ্গলে যে হাতিটি কাঠ ব্যবসায়ীদের অত্যাচারের শিকার হয়েছিল, তার নাম রংমতি। এই কাজের উপযোগী করে তুলতে মারধরও করা হয়েছে রংমতিকে। সেই মারের ফলে তার কানে প্রায় এক ইঞ্চি ব্যাসার্ধের একটি গর্ত। ধাতব বাঁধনের ফলে বুকে এবং পিছনের পায়ে তৈরি হয়েছে দগদগে ঘা। ভারী লোহার শিকল বাঁধা অবস্থাতেই জন্ম দিতে হয়েছে সন্তানের। ফলে গর্ভের ভার সইতে না পারা পায়ে কেটে বসেছে শিকল।
একা রংমতি নয়। আর একটি হাতি রামুকে মাসের পর মাস শিকলে কষে বেঁধে রাখা হয়েছিল অরুণাচলের এক জঙ্গলে। কোথাও যাওয়া তো দূর, দরকার পরলে শুতেও পারেনি সে। যার ফলে অসুস্থ হয়ে পড়ে রামু। বনতারা জানিয়েছে, ওই অত্যাচারের প্রভাব পড়েছে রামুর মনেও।
বনতারার তরফে জানানো হয়েছে, অরুণাচল থেকে রামু, রংংমতি, দুই হস্তিশাবক মায়া এবং লক্ষ্মী বনতারায় এসে পৌঁছলে প্রথমে তাদের চিকিৎসা করা হবে। তার পরে জামনগরে বনতারার চৌহদ্দির মধ্যে কোনও রকম বাঁধন ছাড়াই ঘুরে বেড়াতে পারবে তারা।