নবান্নের ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিতে সেই কর্মসংস্থানের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
এবার ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিতে একযোগে স্থান পেতে চলেছে প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের বিষয়ও। কারিগরি শিক্ষা দফতরের উদ্যোগে যুবক-যুবতীদের বিভিন্ন ধরনের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। সরকারি সূত্রে এই খবর জানা গিয়েছে। প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি জানিয়েছেন, এখন তাঁর আসল লক্ষ্য হল শিল্প স্থাপন এবং কর্মসংস্থান। নবান্নের ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিতে সেই কর্মসংস্থানের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
জানুয়ারি মাসের ২ তারিখ থেকে শুরু হচ্ছে ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি। সেই ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির থেকেই এই উদ্যোগের সূচনা হবে বলে জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যে সে বিষয়েও বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছে ‘ডিরেক্টরেট অব ভোকেশনাল এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং’ দফতর। সেখানেও এই নতুন পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করা হয়েছে।
কারিগরি শিক্ষা দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি মারফত প্রথম পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে মাসে ১০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। আপাতত এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলে পরে এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। কারিগরি শিক্ষা দফতরের দাবি, এই কাজ শুরুর ভাবনাচিন্তা ছিল আগেই। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে পরিস্থিতির জন্য কর্মসূচি শুরু করতে কিছুটা দেরি হয়েছে। কিন্তু ‘দুয়ারে সরকার’-এর মতো কর্মসূচিতে এই বিষয়টিকে যুক্ত করে সেই ঘাটতি অনেকটাই পূরণ করা যাবে।
কারিগরি শিক্ষা দফতর ‘আমার কর্মদিশা’ নামে একটি অ্যাপ তৈরি করেছে। ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরে দফতরের কর্মীরা এই অ্যাপের মাধমেই কর্মসংস্থানের ব্যাপারে যুবক-যুবতীদের সাহায্য করবেন। বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও প্রশিক্ষকরা (ইনস্ট্রাক্টর) ওই শিবিরগুলিতে কাউন্সিলারের ভূমিকায় হাজির থাকবেন। এই কাজের দায়িত্বে রয়েছেন মোট ২,৮৫৫ জন। প্রতিটি জেলার দায়িত্বে থাকছেন একজন করে ‘প্রজেক্ট ম্যানেজার’। প্রতিটি জেলার ‘দুয়ারে সরকার’ ক্যাম্পগুলিতে যাতে বেশি সংখ্যক যুবক-যুবতীর সঙ্গে ওই শিক্ষক ও প্রশিক্ষকেরা কথা বলে কর্মসংস্থানের পথ দেখাতে পারেন। সে কথা মাথায় রেখেই পরিকাঠামো সাজানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন দফতরের এক কর্তা।
ওই শিবিরগুলিতে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে সামিল করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ মূলত করবে ওই সংস্থাগুলিই। এই প্রশিক্ষণ পাওয়ার জন্য কোনও অর্থ খরচ করতে হবে না। প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট সংস্থাই ভাতা দেবে তাঁদের। প্রশিক্ষণ শেষ হলে কাজের নিশ্চয়তাও থাকছে বলে জানাচ্ছেন কারিগরি শিক্ষা দফতরের এক কর্তা। খুচরো বিক্রিবাটা, অফিসের কাজ, রান্নার কাজ, তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক কাজ, বিদ্যুৎ সংক্রান্ত কাজ হাতেকলমে শেখানো-সহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর যুবক-যুবতীরা তাঁদের যোগ্যতা ও ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ বেছে নেবেন। সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের প্রবীণ নেতা তথা কারিগরি শিক্ষক প্রশিক্ষক কাছারি সমিতির উপদেষ্টা মনোজ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রাজ্যের এই উদ্যোগ সত্যিই অভিনব। দুয়ারে সরকার কর্মসূচির মাধ্যমে ব্লকে ব্লকে যুবক-যুবতীরা প্রশিক্ষণের সুযোগ এবং নিজের ইচ্ছেমতো কাজ বেছে নিতে পারবেন। রাজ্য সরকারের এই ভাবনাকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। দুয়ারে সরকার যে ভাবে সাফল্য পেয়েছে, তার হাত ধরে কারিগরি শিক্ষা দফতরও সাফল্য পাবে বলে আমরা আশা করছি।’’