Maoist

মাওবাদী গুলিতে জখম, আইনি ফাঁকে সাহায্য অধরা

মাওবাদী হানায় নিহতের পরিবার তো বটেই, চাকরি পেয়েছেন অশান্ত সময়ে নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যেরাও।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

গিধনি শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:১৯
Share:

দূর্বাদল চৌধুরীর বাম ঊরুতে সেই গুলির দাগ। নিজস্ব চিত্র।

মাওবাদীদের ছোড়া গুলি তাঁর বাম ঊরু এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়েছিল। তবু তিনি নাকি মাওবাদী হানায় আক্রান্ত নন। কারণ, মাওবাদীরা সরাসরি তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়নি।

Advertisement

২০০৯ সালের ৮ নভেম্বর। ভরা বাজারে ইএফআর জওয়ানদের গুলি করে খুন করেছিল মাওবাদীরা। সেই গুলি ছিটকে লেগেছিল দোকানি দূর্বাদল চৌধুরীর পায়ে। চিকিৎসার জন্য গিয়েছে শেষ সঞ্চয়টুকু। তিনি প্রত্যক্ষদর্শী। সিআইডি তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। কিন্তু যুগ পেরিয়ে গেলেও জোটেনি ক্ষতিপূরণ বা চাকরি।

মাওবাদী হানায় নিহতের পরিবার তো বটেই, চাকরি পেয়েছেন অশান্ত সময়ে নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যেরাও। অথচ আইনের ফাঁকে পড়ে কিছুই পাননি দূর্বাদল। তিনি মাওবাদী আক্রমণের লক্ষ্য নন। হামলার সময় অকুস্থলে থাকার খেসারত দিতে হচ্ছে তাঁকে। সংসার টানতে এখন স্টিয়ারিং ধরেছেন বছর চল্লিশের দূর্বাদল। সাত বছর ধরে দুর্বল পায়ে গাড়ি চালাচ্ছেন। এখন দূর্বাদল বলেন, ‘‘ভাগ্যিস ডান পা জখম হয়নি, তাহলে ব্রেক কষতে সমস্যা হতো।’’

Advertisement

দূর্বাদলের বাড়ি ঝাড়গ্রাম জেলার জামবনি ব্লকের গিধনি অঞ্চলের এলাগেড়িয়া গ্রামে। গিধনি বাজারে সাইকেল মেরামতির দোকান চালাতেন তিনি। এখনও সেই দিনটার বিবরণ দিতে গিয়ে কেঁপে ওঠেন দূর্বাদল। সন্ধ্যা তখন সওয়া ছ’টা। সবে দোকান বন্ধ করবেন বলে জিনিসপত্র গোছাচ্ছেন। স্থানীয় ইএফআর ক্যাম্পের কয়েক জন জওয়ান বাজারের দোকানে চা খেতে এসেছিলেন। রাস্তার ধারে জওয়ানেরা দাঁড়িয়ে ছিলেন। আচমকা ফট-ফট আওয়াজ শুনে দূর্বাদল ঘুরে দেখেন, জনা চারেক ইএফআর জওয়ান রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁর দোকানের কাছেই রাস্তার ধারে পড়ে রয়েছেন। মাওবাদী দলের ছোড়া গুলি দূর্বাদ‌লেরও বাম ঊরু এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়েছিল। বেশ কয়েক মাস ধরে চলেছিল চিকিৎসা।

দোকানের ভাড়া মেটাতে না পেরে সাইকেলের ব্যবসা তুলে দেন দূর্বাদল। নিজের সমস্যা জানিয়ে জামবনি ব্লক প্রশাসন ও থানার দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু সাহায্য মেলেনি। শেষ পর্যন্ত গাড়ি চালানো শিখেছেন। সংসার চলছে কোনওমতে। দূর্বাদলের স্ত্রী টুম্পা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী তো এখন মাওবাদী হানায় নিহতের পরিজনদের চাকরি দিচ্ছেন। আমার স্বামী তো অশান্তি পর্বে গুলিতে জখম হয়ে পায়ের জোর হারিয়েছেন। ওর একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিলে সংসারটা বাঁচে।’’ দূর্বাদলের ঘটনা শুনে ঝাড়গ্রাম জেলার পুলিশ সুপার ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘উনি (দূর্বাদল) আবেদন করলে আমরা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন মহলে বিবেচনার জন্য পাঠিয়ে দেব।’’

ছেলে এ বার মাধ্যমিক দেবে। তার ভবিষ্যৎ ভেবেই দূর্বাদল বলছেন, ‘‘আবেদন ফের পাঠাব। তবে আইনি নয়, এ বার মানবিক দিক থেকে বিষয়টি দেখা হোক।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement