তৃষ্ণা পাত্র। নিজস্ব চিত্র।
জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফিরে বসেছিল বছর পনেরোর মেয়েটা। কথা বলছিল আলতো গলায়। বলছিল ২৮ ফেব্রুয়ারির ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা।
পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমারের শ্রীকৃষ্ণপুর হাইস্কুলের তৃষ্ণা পাত্র এ বার মাধ্যমিক দিল। ২৮ ফেব্রুয়ারি অ্যাডমিট কার্ড আনার দিন দুই সহপাঠী কেয়া পাত্র ও স্বপ্না কপাটের সঙ্গে তৃষ্ণাও দুর্ঘটনায় পড়ে। একটি গ্যাসের ট্যাঙ্কার পিছন থেকে ধাক্কা মারে তিনজনকে। প্রথমে তমলুক জেলা হাসপাতাল, সেখান থেকে কলকাতার এসএসকেএম। সেই রাতে জ্ঞান ফেরার পরে তৃষ্ণা ছুটি পেলেও তার মাথায় পড়েছিল সাতটা সেলাই। স্বপ্না ও কেয়া, দু’জনেই মারা যায়।
দুই বান্ধবীর এমন পরিণতিতে ভেঙে পড়ে তৃষ্ণা। পড়ায় মন বসত না। কিন্তু মেধাবী তৃষ্ণা যাতে পরীক্ষায় বসে, স্কুলের শিক্ষক এবং দুই সহপাঠী বাড়ি গিয়ে বোঝায়। শেষমেশ মনের জোরেই মাধ্যমিকে বসে তৃষ্ণা। মা নীলিমা পাত্র রোজ পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতেন। একটি পরীক্ষা দেওয়ার সময় সাময়িক অসুস্থও হয়েছিল তৃষ্ণা। তবে মঙ্গলবার মাধ্যমিক মিটেছে। সব বিষয়ের পরীক্ষাই দিয়েছে তৃষ্ণা।
নন্দকুমারের বাসুদেবপুরের বাড়িতে বসে তৃষ্ণা বলছিল, ‘‘সে দিন ট্যাঙ্কারের ধাক্কায় সব থেকে বেশি চোট লেগেছিল কেয়ার। রক্তাক্ত হয়েছিলাম আমিও। স্বপ্না জ্ঞান হারিয়েছিল।’’ বলতে বলতে চোখ বুজে ফেলে মেয়েটা। ক্লাসের পরীক্ষায় প্রথম তিন জনের মধ্যে থাকা তৃষ্ণা তারপর বলে, ‘‘মাধ্যমিকটা ভাল হল না। সব সময় ওদের পড়ে থাকার দৃশ্যটা মনে পড়ে। দুর্ঘটনার পরে আমারও চোখ জ্বালা করত। মাথায় যন্ত্রণা হত।’’
মেয়ের পরীক্ষার ফল নিয়ে অবশ্য ততটা চিন্তিত নয় তৃষ্ণার পরিবার। তাদের চাওয়া একটাই, মাথার সাতটা সেলাইয়ের দাগের সঙ্গে তৃষ্ণার মনে ক্ষতটাও যেন ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়।