দমকলের দেখা নেই, পুড়ে ছাই ৩০টি বাড়ি

কোথাও ডাকার পরেও এল না দমকল। কোথাও আবার যখন পৌঁছল, তখন সব শেষ। সোমবার দুপুরে জেলায় পৃথক দু’টি অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হল ৩০টি বাড়ি। তবে কেউ হতাহত হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মহম্মদবাজার ও দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৫৮
Share:

ভস্মীভূত। সোমবার সাঁইথিয়ার কাপিষ্ঠা গ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র।

কোথাও ডাকার পরেও এল না দমকল। কোথাও আবার যখন পৌঁছল, তখন সব শেষ। সোমবার দুপুরে জেলায় পৃথক দু’টি অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হল ৩০টি বাড়ি। তবে কেউ হতাহত হয়নি।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন দুপুর দেড়টা নাগাদ প্রথম ঘটনাটি ঘটে মহম্মদবাজারের কাপিষ্ঠা গ্রামের রায়পাড়ায়। সেখানে প্রায় ২৫টি মাটির বাড়ি পুড়ে গিয়েছে। কীভাবে আগুন লাগল, তা এখনও জানা যায়নি। তবে, স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, হঠাৎ-ই রায়পাড়ার একটি বাড়ি দাউদাউ করে জ্বলতে শুরু করে। মুহূর্তে তা পাশের বাড়িতে ছড়ায়। গ্রামবাসী আগুন নেভানোর কাজে হাত লাগায়। সিউড়িতে দমকল কেন্দ্রেও খবর দেওয়া হয়। কিন্তু দমকল আসার আগেই সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘গত ক’দিনের আগুনে রোদে এমনিতেই সব তেতে ছিল। তারপর আবার খড়ের ও টিনের বাড়ি। তাই আগুন লাগতে না লাগতেই সব শেষ!’’ যাঁদের বাড়ি পুড়েছে, তাঁদের অন্যতম পাঁচকড়ি রায়, গোঁসাই রায়, পরেশ মালরা বলেন, ‘‘কীভাবে আগুন লাগল বুঝতে পারছি না। আসবাবপত্র, চাল, গম থেকে খাবার সামগ্রী পর্যন্ত সবই পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। যে যা পড়েছিলাম, তা-ই পড়ে কোনও রকমে বেরিয়ে এসে প্রাণে বেঁচেছি।’’ আগুনে সব হারানোর পরে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি গৃহবধূ মনসা বাগদি। কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘‘কীভাবে সারা বছর চলবে? কোথায় থাকব এই গরমে?’’ আগুনে পুড়ে যাওয়া বাড়িগুলির পরিবারগুলির সকলেরই একই জিজ্ঞাসা।

এ দিকে, দমকল কর্মীরা জানান, খবর মিলতেই তাঁরা রওয়ানা দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রায় ২৫ কিলোমিটারের এই পথ পেরিয়ে গ্রামে পৌঁছনোর আগেই সব শেষ হয়ে গিয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে দমকলের অনুমান, রান্নার উনুন থেকে বা শর্ট সার্কিট হয়ে আগুন লেগে থাকতে পারে। ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন বিডিও তারকেশ্বর ঘোষ। দুর্গতদের অবস্থা খতিয়ে দেখে ত্রাণের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। ঘটনাস্থলে পৌঁছে পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতারা।

Advertisement

প্রায় একই সময়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে দুবরাজপুরের গোহালিয়াড়া পঞ্চায়েতের একব্বরপুরের গ্রামে। সেখানে আগুনে পাঁচটি খড়ের ছাউনি মাটির বাড়ি ভস্মীভূত হয়। সব চেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা হল, জেলার নানা জায়গায় এ দিন আগ্নিকাণ্ডের ঘটনার জন্য খবর দেওয়া হলেও ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারেনি দমকলের কোনও ইঞ্জিন। গ্রামবাসী নিজস্ব পাম্পসেট লাগিয়ে আগুন আয়ত্বে আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাড়িগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার থেকে বাঁচানো যায়নি।

স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন দুপুরে স্নান খাওয়া সেরে সবে বাড়িতে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন একব্বরের গ্রামের বাসিন্দারা। ঠিক তখনই আগুন লাগে অনাদীশ অঙ্কুরের বাড়িতে। চৈত্রের হাওয়ায় নিমেশে আগুন ছড়িয়ে পড়ে সদাই, সেন্টু, অঙ্কুর, শিশির ও পিন্টু অঙ্কুরদের বাড়িতে। অনাদীশ, পিন্টু অঙ্কুররা বলেন, ‘‘এত তাড়াতাড়ি সব কিছু শেষ হয়ে যাবে ভাবিনি। চাল ধান, আসবাব, টাকাপয়সা, সাইকেল সব পুড়ে ছাই।’’ পরিবারের মহিলা শৈবা অঙ্কুর, ঝুমা অঙ্কুর, মায়া অঙ্কুরদের আক্ষেপ, ‘‘দমকলের ইঞ্জিন এলে হয়তো কিছু জিনিস বেঁচে যেত। এখন খোলা আকাশের নীচেই রাত কাটাতে হবে আমাদের।’’ খবর পেয়ে ঘাটনাস্থলে স্থলে পৌঁছে যান স্থানীয় গোহালিয়াড়া পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান চন্দ্ররেখা বাউড়ি এবং গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য পরেশনাথ আচার্যরা। তাঁরা বলেন, ‘‘খুবই দুঃখজনক ঘটনা। আপাতত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির পাশে থাকবে পঞ্চায়েত।’’ কীভাবে আগুন লাগল, তা এখনও জানা যায়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement