গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
প্রাক্তনী হয়েও কেন হস্টেলে থাকতেন সৌরভ চৌধুরী? সে প্রশ্নের উত্তরও হোয়াট্সঅ্যাপ মারফত পৌঁছে গিয়েছিল হস্টেল আবাসিকের মোবাইলে। যাতে হঠাৎ প্রশ্নের মুখে পড়লে জবাব দিতে অসুবিধা না হয়। মঙ্গলবার আদালতে এমনটাই জানালেন সরকার পক্ষের আইনজীবী। তিনি বলেন, পুলিশের হাতে এর প্রমাণও এসেছে।
যাদবপুরের ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্তদের মঙ্গলবার নিয়ে আসা হয়েছিল আদালতে। শুনানির সময় সৌরভ সম্পর্কে বলতে গিয়ে সরকারি পক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘‘সৌরভই কিংপিন।’’ অর্থাৎ, ঘটনার নেপথ্যে থাকা মূলচক্রী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাক্তন ছাত্রই। এ ব্যাপারে পুলিশের হাতে আসা প্রমাণের উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পর থেকেই গোটা ঘটনাটির একটি সুবিধাজনক কাহিনি তৈরির চেষ্টা করা হয়েছিল। সেই প্রক্রিয়ায় হস্টেলের ‘দাদা’গোত্রীয় সৌরভকে বাঁচানোরও চেষ্টা করা হয়েছে বিভিন্ন ভাবে। সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন, পুলিশ সম্প্রতি এক ছাত্রের মোবাইল থেকে সেই তথ্য উদ্ধার করেছে। তাতে দেখা গিয়েছে চার জনকে নিয়ে একটি হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করা হয়েছিল। সেই গ্রুপের এক সদস্য ছিলেন এই সৌরভও।
আদালতে ওই তথ্য পেশ করে সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন, হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপেই লেখা হয়েছিল কেন সৌরভ প্রাক্তনী হলেও হস্টেলে থাকেন। সৌরভ নিজেই সেখানে লিখেছিলেন, ‘‘আমার মা যখন অসুস্থ থাকেন, তখনই আমি হস্টেলে এসে থাকি।’’ পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনায় বাড়ি সৌরভের। সম্ভবত মাকে নিয়ে কলকাতায় চিকিৎসার জন্য আসতে হয়, এবং সে জন্যই তাঁকে হস্টেলে থাকতে হয়— এমনটাই বোঝাতে চাওয়া হয়েছিল ওই মেসেজে। পুলিশ ওই হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপের এক সদস্যের ফোন থেকেই এই তথ্য পেয়েছে।
ফলে প্রশ্ন উঠেছে, হস্টেলে কেন থাকেন সে কথা হঠাৎ হোয়াট্সঅ্যাপে এত দিন পরে জানাতে হল কেন সৌরভকে। তবে কি এ-ও ৯ অগস্ট রাতের মেন হস্টেলের বিশেষ বৈঠকের মতোই ‘কাহিনি তৈরির’ চেষ্টা? যেমনটা এক ছাত্রের বয়ান থেকে অনুমান করছিল পুলিশ?
এর আগে পুলিশ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের এক ছাত্রের কাছে জানতে পেরেছিল, হস্টেলে সে দিন তিন দফায় দু’টি বিশেষ বৈঠক ডাকা হয়েছিল। সেই বৈঠকে দুর্ঘটনার কথা জানিয়েছিলেন মূলত সৌরভই। কিন্তু যাঁর বিরুদ্ধে মৃত পড়ুয়ার বাবা অভিযোগ করেছেন, যাঁর নাম রয়েছে এফআইআরে, সেই সৌরভ কি আদৌ দুর্ঘটনার সঠিক বর্ণনা দেবেন? না কি নিজের পিঠ বাঁচানোর চেষ্টা করবেন? স্বাভাবিক ভাবেই উঠে আসে সাজানো গল্পের তত্ত্ব। তদন্তকারীরা আরও ছাত্রদের জেরা করে অনুমান করে, সেই ঘটনাও ছিল আসলে সৌরভকেই বাঁচানোর পরোক্ষ চেষ্টা।
জেরায় পুলিশ এ কথাও জেনেছিল যে, সে দিন রাতে সৌরভ যা বলেছিল, তাকে সমর্থন করেছিলেন দীপশেখর দত্ত নামে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রও। আর এ জন্যই তদন্তকারীদের মনে হচ্ছে গত ৯ অগস্ট রাতে মেন হস্টেলে দুর্ঘটনা ঘটার পর ঠান্ডা মাথায় গোটা ঘটনাটির একটি সুবিধাজনক কাহিনি বানানোর চেষ্টা হয়েছিল। আদালতে সরকারি পক্ষের আইনজীবীও তাই মঙ্গলবার একই কথা বলেছেন। তিনি বলেন, আগাম বিপদের আঁচ পেয়েই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে দুর্ঘটনার রাতেই শুরু হয়েছিল ‘কিংপিন’ সৌরভকে বাঁচানোর চেষ্টা।