পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যপালের ভাষণের মতোই ‘বিধির কোপে’ পড়তে চলেছে রাজ্যের ৫১ দফতরের বাজেট আলোচনা। মোট ৫৪টি দফতরের মধ্যে মাত্র তিনটির ব্যয়বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা হতে চলেছে বিধানসভার চলতি বাজেট অধিবেশনে। এবং ‘গিলোটিন’-এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকছে স্বরাষ্ট্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, ভূমি এবং সংখ্যাঘু দফতরের চর্চায়। ফলে, সেগুলি নিয়ে বাজেট অধিবেশনে আলোচনার সুযোগ থাকছে না।
এখনও পর্যন্ত যা ঠিক আছে, এ বারেও একগুচ্ছ দফতরই আলোচনার বাইরে থাকছে। বরাদ্দ অনুমোদনে যে দফতরগুলি নিয়ে আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে পঞ্চায়েত, কৃষি এবং নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতর। এই দফতরগুলি গুরুত্বপূর্ণ হলেও ১৩ দিনের অধিবেশনে মাত্র তিনটি দফতর নিয়ে কেন আলোচনা, সে সম্পর্কে অবশ্য সরকার পক্ষের কোনও ব্যাখ্যা মেলেনি। শুধু তা-ই নয়, ‘ব্রাত্য’ দফতরের তালিকায় কেন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও স্বরাষ্ট্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তা নিয়েও শাসক শিবিরের কেউ মুখ খুলতে চাননি। এতগুলি দফতর কেন আলোচনার বাইরে থাকছে, তা নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ও।
বাজেট অধিবেশনে দফতর ভিত্তিক আলোচনা বহু দিন ধরেই কমে চলেছে। তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর গত ১২ বছরে স্বরাষ্ট্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতর নিয়ে আলোচনা হয়েছে সব চেয়ে কম। শাসক শিবির রাজ্যের আইশনশৃঙ্খলা ভাল বলে দাবি করলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে থাকা এই দফতর নিয়ে আলোচনায় কখনও আগ্রহ দেখা যায়নি বলে বিরোধীদের অভিযোগ। সেই রকম গত বছর থেকে আলোচনা হচ্ছে না শিক্ষা দফতর নিয়েও। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার পরে টানা দু’বছর নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে চাপানউতোর চললেও বিধানসভায় শিক্ষা দফতর নিয়ে আলোচনা এড়িয়ে গিয়েছে সরকার পক্ষ। মুখ্যমন্ত্রীর হাতে থাকা স্বাস্থ্য বিভাগে শাসক তৃণমূল সাফল্য দাবি করলেও আলোচনার জন্য সেই দফতরও বিবেচিত হয়নি গত কয়েকটি বাজেট বিতর্কে।
পরিষদীয় মন্ত্রী কোনও মন্তব্য করতে না চাইলেও বিরোধীরা বিষয়টিকে সরকার পক্ষের ‘ভয়’ বলেই চিহ্নিত করেছে। বিধানসভায় বিজেপির সচেতক মনোজ টিগ্গা বলেন, ‘‘এই সরকার তো রাজ্যপালের বক্তৃতাই বিধানসভা থেকে বাদ দিয়েছে! তার পরে আর কী প্রত্যাশা থাকতে পারে?’’ ‘গিলোটিন’ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তৃণমূল নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করতে এই ধরনের আলোচনা এড়িয়ে চলেছে। এখন দুর্নীতি ও অন্যায়ের পরিবেশ এতই বিস্তৃত যে, তারা বিরোধীদের মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছে। তাই বিধানসভায় আলোচনার অধিকার হত্যা করা হচ্ছে।’’