জগন্নাথ সরকার। ফাইল চিত্র।
তাঁদের দলে অনুশাসনের ঘাটতি হচ্ছে এবং তৃণমূলের চরেরা দলে ঢুকে পড়েছে বলে দাবি করলেন রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার।
কল্যাণী এমসে বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থার চাকরিতে অবৈধ ভাবে লোক ঢোকানোর অভিযোগ রয়েছে জগন্নাথের বিরুদ্ধে। তিনি ছাড়াও বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ ও দুই বিজেপি বিধায়কের নাম রয়েছে ওই অভিযুক্তের তালিকায়। সিআই়ডি তার তদন্ত করছে।
বৃহস্পতিবার রানাঘাটে সাংবাদিক সম্মেলন করে জগন্নাথ দাবি করেন, এসএসসি-দুর্নীতির তদন্ত থেকে নজর ঘোরাতে ‘মুর্শিদাবাদের এক দুধেল গাই’-কে (তিনি কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের এম ফিলের এক ছাত্র) দিয়ে তৃণমূল অভিযোগ করিয়েছে। কিন্তু দলের ভিতর থেকেও তো তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে? বিভিন্ন সময়ে ফেসবুকেও তাঁর বিরুদ্ধে নানা কথা পোস্ট করেছেন দলের কর্মীরা।
এই প্রসঙ্গে জগন্নাথ বলেন, “এটা দলের অনুশাসনের ঘাটতির জন্য হচ্ছে। যারাই করুক, সে সত্যিকারের তৃণমূলের চর।” জগন্নাথের ব্যাখ্যা, “ভারতবর্ষে বা অন্য দেশের লোকের মধ্যেও চরবৃত্তির কাজ চলে। র-এর লোক যেমন থাকে, তেমনই বিভিন্ন অন্য সংস্থার গোয়েন্দা সংস্থার লোকও থাকে। তা দলের মধ্যেও কিছু খোচর, কিছু দালাল থাকে। তৃণমূলের মধ্যেও থাকে। বিজেপির মধ্যেও থাকে। একে অপরকে খবর পাস করে।”
তৃণমূল অবশ্য এই দাবিকে হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছে। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘চর থাকার দরকার নেই। বিজেপির সাংসদ, বিধায়ক সহ ৮০ শতাংশ এখন তৃণমূলে আসতে চাইছেন। তাঁরাই দলের কথা বলছেন।’’
কিছু দিন আগেই তানিয়া ভট্টাচার্য নামে বিজেপির এক যুবনেত্রী টিভি ক্যামেরার সামনে সরাসরি জগন্নাথের বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন। জগন্নাথ পাল্টা তাঁর নামে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তড়িঘড়ি তাঁকে সংগঠনের পদ থেকে সরিয়েও দেওয়া হয়েছে। আবার, চাকদহ এবং বাঁকুড়ার বিজেপি বিধায়কের যথাক্রমে বৌমা এবং মেয়ে অবৈধ ভাবে এমসে চাকরি পেয়েছেন বলে অমিত শাহের কাছে অভিযোগ করেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় নামে বিজেপিরই এক পুরনো কর্মী।
এ দিন জগন্নাথ অবশ্য কারও নাম নেননি। তিনি বলেন, “দলের কোনও বরিষ্ঠ কার্যকর্তা হোক, জনপ্রতিনিধি হোক, কেউ যদি ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছাড়ে, নিশ্চিত ভাবে সে বিজেপির হিতাকাঙ্ক্ষী নয়। সে তৃণমূলের দালাল। সেই শ্রেণির লোককে দল থেকে বহিষ্কার করা বা শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত। না হলে দলের উন্নতি হয় না।”
দলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের পাশে বসেই জগন্নাথ দাবি করেন, “যাঁরা করেছেন ভুল করেছেন। আর যদি কেউ ইচ্ছাকৃত করে থাকেন, দলের খোচর হিসাবে কাজ করে থাকেন, তাদেরকে অবিলম্বে মুক্ত করা উচিত।” পরে এ প্রসঙ্গে পার্থসারথী বলেন, “প্রকাশ্যে দলবিরোধী কাজ বা মন্তব্য করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এটা তো রাজ্য নেতৃত্বেরই সিদ্ধান্ত। আমরাও চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি, কারা এসব করছে।”
বিজেপির ভিতরে থেকে চরবৃত্তির অভিযোগ প্রসঙ্গে তৃণমূলের নদিয়া জেলা মুখপাত্র বাণীকুমার রায় বলেন, “এ সব পাগলের প্রলাপ। জগন্নাথ নিজের দোষ ঢাকার জন্য যা-তা বলে যাচ্ছেন। এ সব কথার উত্তর দেওয়ার মানসিকতা আমাদের নেই।”
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।