জমায়েত: দুই পড়ুয়াকে খুনের ঘটনায় তাদের বাড়ির সামনে স্থানীয়দের জটলা। মঙ্গলবার, বাগুইআটির জগৎপুরে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
বাড়ির কাছে খেলতে খেলতেই নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল খড়দহ রামকৃষ্ণ মিশনের নবম শ্রেণির সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় এবং তীর্থঙ্করদাস শর্মা। ব্যারাকপুর এলাকার বাসিন্দা ওই দুই ছাত্রকে দিনভর খোঁজাখুঁজির পরে থানায় যায় তাদের পরিবার। এর প্রায় এক মাস পরে হঠাৎ এক জনের পরিবারের কাছে আসে একটি চিঠি। তাতে জানানো হয়, পান্ডুয়া স্টেশনের কাছে রেললাইনে দুই কিশোরের মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। পুলিশ দেহ পুড়িয়ে দিয়েছে!
মৃত কিশোরদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা না করেই পুলিশের এমন পদক্ষেপ শোরগোল ফেলেছিল সে সময়ে। বছর চল্লিশেক আগের ওই ঘটনায় তোলপাড় হয় রাজ্য-রাজনীতি। এ বিষয়ে রাজ্য পুলিশ না সিবিআই, তদন্ত কে করবে— তা নিয়ে আইনি লড়াই চলতে থাকে। সন্তানহারা দুই বাবা-মা চিঠি নিয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। প্রথমে তেমন আমল না দিলেও পরে জনমতের চাপে পুলিশ-প্রশাসনকে ঝুঁকতে হয় বলে দাবি সে দিনের প্রত্যক্ষদর্শীদের।
সেই ঘটনার সঙ্গে মঙ্গলবার প্রকাশ্যে আসা বাগুইআটির দুই কিশোরের অপহরণ এবং মৃত্যু-রহস্যের মিল পাচ্ছেন অনেকে। যদিও অপহরণ করে খুনের ঘটনার উদাহরণ এ রাজ্যে প্রচুর। কখনও মুক্তিপণের দাবিতে নাবালককে কুপিয়ে খুন, কখনও বা বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে অপহরণ করে খুনের ঘটনা ঘটেছে। কখনও আবার কলকাতার ব্রেবোর্ন রোডের ফুটপাতবাসী কিশোরীকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ ও গলা টিপে খুন করে তপসিয়ার খালে ফেলে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে।
২০১১-র নভেম্বরে দমদমের মধুগড়ে আট বছরের এক নাবালকের অপহরণের ঘটনায় শোরগোল পড়েছিল। ২৫ লক্ষ টাকা হাতাতে বাড়িওয়ালার ছেলেটিকে অপহরণের পরিকল্পনা করে এক ভাড়াটে। নাবালককে ভুলিয়ে নিয়ে গিয়ে অন্য দু’জনের হাতে তুলে দেয় সে। আর তারা গলা টিপে খুন করে নাবালককে। ২০১৪ সালে হাঁসখালি থানা এলাকার একটি ঘটনায় জানা যায়, রজত বিশ্বাস নামে আট বছরের এক নাবালককে অপহরণ করে দশ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে। পরে তার পচাগলা দেহ উদ্ধার হয় বাড়ির কাছেই পাটবাগান থেকে।
২০১৫ সালের মে মাসে হাওড়ার সনাতন মিস্ত্রি লেনের ঘটনায় শিউরে উঠেছিলেন অনেকে। রাস্তায় পড়ে থাকা একটি প্লাস্টিক নিয়ে কুকুর-বেড়াল টানাহেঁচড়া করছে দেখে এক ব্যক্তি খেয়াল করেন, প্লাস্টিকের মধ্যে থেকে বেরিয়ে রয়েছে শিশুর হাত! তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আট বছরের ওই নাবালকের নাম বিশাল শর্মা। পারিবারিক বিবাদের জেরে এক আত্মীয় তৃতীয় শ্রেণির ওই ছাত্রকে অপহরণ করে কুপিয়ে খুন করে।
২০২০ সালের পুজোর সময়ে দিল্লি রোড সংলগ্ন খালের ধারে এক যুবকের কাটা হাত-পা উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। জানা যায়, এক তরুণীকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার ‘অপরাধে’ বিষ্ণু মাল (২৪) নামে ওই যুবককে তুলে নিয়ে গিয়ে গলা টিপে খুন করে, দেহটি ছ’টুকরো করে ফেলে দেওয়া হয়েছিল নানা জায়গায়। গত জানুয়ারিতে লিলুয়ার বাসিন্দা বুদ্ধেশ্বর সাউ নিখোঁজ হন। পরে ঝাড়খণ্ডের তোপচাঁচি থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। তদন্তে জানা যায়, বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের জেরেই অপহরণ করে খুন।
২০১৬ সালের অগস্টে হেয়ার স্ট্রিট থানায় এক ফুটপাতবাসী মহিলার অভিযোগ অবশ্য ছিল আরও মারাত্মক। সেই ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ আধিকারিক এ দিন বললেন, ‘‘মহিলার কিশোরী মেয়েকে ফুটপাত থেকে তুলে নিয়ে যায় দুই ট্যাক্সিচালক। মদ্যপানের পরে ধর্ষণ করে, গলা টিপে খুন করেও থামেনি। কিশোরীর দেহ খালে ছুড়ে ফেলার আগে পায়ে ইট বেঁধে দেয়। কিন্তু খালের জলে দেহ ডোবেনি।’’