স্ত্রী এবং এক পুত্রকে হারিয়ে হাওড়া সিটি পুলিশে কর্মরত প্রদীপ ঝা। —নিজস্ব চিত্র।
মায়ের চিকিৎসার জন্য বাজারে কয়েক লক্ষ টাকা ঋণ হয়ে গিয়েছে। এমতাবস্থায় শিবপুরের ফ্ল্যাট বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন হাওড়া সিটি পুলিশে কর্মরত পুলিশকর্মী প্রদীপ ঝা। কিন্তু মাথার উপর ছাদ চলে গেলে থাকবেন কোথায়? প্রশ্ন তুলেছিলেন স্ত্রী। ওই নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরে দম্পতির ঝগড়া হচ্ছিল। তার পরেই দুই নাবালক সন্তান খুনের চেষ্টা করে আত্মঘাতী হন ২৭ বছরের রুবি ঝা। শুক্রবার সন্ধ্যায় শিবপুর থানার বেতাউতলার আবাসনের দরজা ভেঙে স্ত্রীর দেহ উদ্ধার করেন পুলিশকর্মী। অচৈতন্য অবস্থায় পড়েছিল দুই শিশুসন্তান। তাদের হাসপাতালে নিয়ে গেলে বড় ছেলেকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসক। ঘটনার তদন্তে নেমে পারিবারিক সমস্যা এবং দাম্পত্য অশান্তির তথ্য জানালেন তদন্তকারীরা।
পুলিশ সূত্রে খবর, হাওড়া সিটি পুলিশে কর্মরত প্রদীপ আগে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন। বাড়ির একমাত্র রোজগেরে সদস্য তিনি। সংসারও চলত কোনও রকমে। তার মধ্যে প্রদীপের মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর চিকিৎসার জন্য প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা দেনা করেছিলেন যুবক। সম্প্রতি পুলিশের চাকরি পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সংসার সামলে চিকিৎসার খরচ ইত্যাদি বহন করতে পারছিলেন না। তার উপর পাওনাদারদের চাপ বাড়ছিল। তাই ফ্ল্যাট বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পুলিশকর্মী। কিন্তু তাঁর এই পদক্ষেপ মেনে নিতে পারেননি স্ত্রী। রুবি বাপের বাড়িতে স্বামীর ফ্ল্যাট বিক্রির কথা জানানোর পর অশান্তি বেড়ে যায়। জানা গিয়েছে, শ্বশুরবাড়ির সঙ্গেও অশান্তি বাধে পুলিশকর্মীর। তার পরেই এই ঘটনা।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ‘ডিউটি’ থেকে বাড়ি ফেরেন প্রদীপ। বার কয়েক ‘কলিং বেল’ টেপেন। কিন্তু স্ত্রী বা ছেলে, কেউই দরজা খোলেননি। তাঁর চিৎকার-চেঁচামেচিতে আবাসনের প্রতিবেশীরা জড়ো হন। সকলে মিলে চেষ্টা করেও ফ্ল্যাটের মূল দরজা খুলতে পারেননি। এর পর পুলিশ ডেকে দরজা ভাঙা হয়। দেখা যায়, একটি ঘরে সিলিং ফ্যান থেকে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছেন পুলিশকর্মীর স্ত্রী। পাশের ঘরে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে দুই নাবালক সন্তান। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে রুবি এবং বড় ছেলে চিরাগ ঝা (১১)-কে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসক। চার বছরের বঙ্কুর শারীরিক অবস্থা এখনও শঙ্কাজনক। তার চিকিৎসা চলছে।
প্রদীপ জানান, ধার শোধ করার জন্য ফ্ল্যাট বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য রেজিস্ট্রিও হয়ে দিয়েছিল। তাই কিছু করার ছিল না। আর শাশুড়ির থেকে ফ্ল্যাট কেনার টাকা চেয়েছিল স্ত্রী। তখন ওকে অপমান করা হয়। তার পর থেকে মানসিক অবসাদে ভুগছিল। কিন্তু এত বড় ঘটনা ঘটাবে, দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারিনি।’’
পুলিশ সূত্রে খবর, গলায় গামছা জড়িয়ে দুই সন্তানকে খুনের চেষ্টা করেন মহিলা। তার পর আত্মহত্যা করেন রুবি।