জহর সরকার, আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় ও বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়।
নির্দিষ্ট দিনে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে নেওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাগালের বাইরে। এমনই অভিমত রাজ্যের প্রাক্তন শীর্ষ আমলাদের। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রকে উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা এএনআই সোমবার সন্ধ্যা জানিয়েছে, আলাপনকে শো-কজ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে এর কোনও সমর্থন কোনও তরফেই রাত পর্যন্ত মেলেনি।
সোমবার বিকেলে নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করে দেন, মুখ্যসচিব পদ থেকে অবসর নিয়েছেন আলাপন। মঙ্গলবার থেকেই তিনি যোগ দেবেন মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টার পদে। অর্থাৎ, কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতে আলাপন আর নেই। ঘটনাচক্রে, সোমবারই কেন্দ্র ফের চিঠি পাঠিয়ে আলাপনকে মঙ্গলবার দিল্লির নর্থ ব্লকে কর্মিবর্গ মন্ত্রকে রিপোর্ট করার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু নবান্ন সূত্রের দাবি, তার আগেই আলাপন অবসর নিয়ে ফেলেছেন। ফলে তাঁর উপর ওই নির্দেশেরও আর কোনও বাধ্যবাধকতা থাকছে না।
কেন্দ্র এবং রাজ্যের প্রাক্তন শীর্ষ আমলারা এই সঙ্ঘাত বা বিতর্কে আলাপনের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। প্রসার ভারতীর প্রাক্তন সিইএ জহর সরকার বলছেন, ‘‘আমার মতে কেন্দ্রীয় সরকার আর কোনও পদক্ষেপ করতে পারে না। যেহেতু যথাসময়ে রাজ্য সরকার আলাপনকে ছাড়েনি, তাই তার পক্ষে সরকারি কর্মজীবনের শেষদিনে দিল্লিতে যোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই তাঁর বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কেন্দ্র নিতে পারবে না।’’ অবসর নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আলাপনকে নিজের মুখ্য উপদেষ্টা পদে নিয়োগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সে ক্ষেত্রে কী তাঁর নতুন পদে যোগদানের ক্ষেত্রে কেন্দ্র কোনও অন্তরায় তৈরি করতে পারে? জহরের জবাব, ‘‘অত্যন্ত আইনসঙ্গত ভাবেই আলাপনকে ওই পদে নিয়োগ করা হয়েছে। একবার কোনও আধিকারিক তাঁর পদ থেকে অবসর নিয়ে নিলে যদি তিনি খুনের মতো মারাত্মক অপরাধ না করে থাকেন, তা হলে আর তাঁকে কোনও ভাবেই কেন্দ্রের পক্ষে ধরা সম্ভব নয়। তাই কেন্দ্রকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রাক্তন মুখ্যসচিব নতুন পদে যোগ দিতে পারবেন।’’
কিন্তু কেন্দ্রের নির্দেশ না মানায় প্রাক্তন মুখ্যসচিবের অবসরের পর তাঁর পাওনা তথা পেনশনের ওপরে কোনও বিধিনিষেধ কি আনতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার? রাজ্যের এক প্রাক্তন মুখ্যসচিবের অভিমত, ‘‘সে ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় সরকারের আর কিছু করার থাকবে না। কেন্দ্র কিছু করতে চাইলেও বিষয়টি নিয়ে আদালতে যাওয়ার সুযোগ থাকবে আলাপনের কাছে। সেখানেও আদালতের রায় সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, সংশ্লিষ্ট আধিকারিককে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ মানতে গেলে আগে রাজ্য সরকারের থেকে ছাড়পত্র পেতে হত। আলাপনের পক্ষে যুক্তি, তিনি সেই ছাড়পত্র পাননি বলেই কেন্দ্রের নির্দেশ মানতে পারেননি।’’
সদ্যপ্রাক্তন মুখ্যসচিবের অবসরের সিদ্ধান্ত সমর্থন করছেন রাজ্যের আরও এক প্রাক্তন মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘আলাপন একেবারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমার কর্মজীবনে এমন পরিস্থিতি এলে আমিও একই পন্থা অবলম্বন করতাম। আর কেন্দ্রীয় সরকার তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার মতো জায়গায় নেই। কারণ, আলাপন কোনও আইনবর্হিভুত কাজ করেননি।’’ অতঃপর আলাপন-অধ্যায় এখন কেন্দ্রীয় সরকারের নাগালের বাইরে চলে গিয়েছে বলেই মনে করছে আমলা মহল।