প্রথম স্থানাধিকারী গ্রন্থন সেনগুপ্ত
এমনিতেই রাতে ঘুম কম হয়। কখনও গিটার বাজিয়ে গান করি, কখনও আবার স্ক্রিপ্ট হাতে নিয়ে চিৎকার করে নাটকের মহড়া দিই। এত দিকে আমার ভাল লাগাগুলো ছড়িয়েছিটিয়ে আছে, যে কী বলব!
যথারীতি গতকালও ঘুমাতে অনেক দেরি হয়েছে। আজ সকালে উঠে রেজাল্ট জানার জন্য টিভি চালিয়েছি। বাবা-মাও ছিল। এমন সময় প্রথম স্থানাধিকারীর নাম ঘোষণা। গ্রন্থন সেনগুপ্ত। ব্যস, আমি আর নেই। এক ছুট্টে পাশের ঘরে গিয়ে স্রেফ খাটে শুয়ে পড়েছি। বালিশ ভিজে যাচ্ছে চোখের জলে।
আমি ঠিক শুনলাম তো? আমি প্রথম হয়েছি? ভাল ফল হবে জানতাম ঠিকই। কিন্তু প্রথম?উঁহু।একেবারেই ভাবিনি। মাধ্যমিকে ভাল ফলের পর সব্বাই পই পই করে বলেছিল বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে। কিন্তু আমার সেই জেদ। আর্টস নিয়েই পড়ব। একদম ঠিক করে নিয়েছিলাম। বাবা-মা সব সময় আমার পাশে ছিলেন। বাবা একটা ওষুধের সংস্থায় কাজ করেন। আর মা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা। ওঁরা আমায় বলতেন, আমার যা ইচ্ছা, আমি যেন তা নিয়েই পড়াশোনা করি।
আরও খবর
জেলার বাজিমাত উচ্চমাধ্যমিকেও, প্রথম জলপাইগুড়ির গ্রন্থন, দ্বিতীয় তমলুকের ঋত্বিক
আমার কোনও কাজে কখনও একটুও বাধা দেননি বাবা-মা। কখনও রাত জেগে মহীনের ঘোড়া শুনছি, গুন গুন করে গাইছি। রবিঠাকুর শুনছি। নিয়মিত জলপাইগুড়ির নানা নাটকের দলে অভিনয় করছি। পরীক্ষার আগেও কলকাতার রবীন্দ্র সদনে নাটকের শো করতে গিয়েছিলাম। সম্প্রতি সল্টলেকের পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতি কেন্দ্র (ইজেডসিসি)-তেও গিয়েছি অভিনয়ের জন্য। নাটক আমার প্রাণ। আর সঙ্গে গান।
দেখুন ভিডিয়ো...
পড়াশোনায় ভাল ফল কিন্তু এই ইচ্ছাগুলোর থেকেই। রাতের সময়টাকে কাজে লাগিয়েছি আমি। দিনে পড়াশোনা করলেও, রাত নামলেই গিটার নিয়ে বসে পড়তাম। ‘নো’ পড়াশোনা। নাটক আর গান নিয়মিত চালিয়ে যাব, পড়াশোনার পাশাপাশি।
আমার রেজাল্টের কথা শুনে বাড়িতে চলে এসেছে সব্বাই। বাবা-মা আমায় জড়িয়ে ধরছে। কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না। স্কুলের শিক্ষকরাও এসেছেন। স্কুলে পৌঁছে তো আরও একটা কাণ্ড। আমায় ‘স্পেশাল অ্যাসেম্বলি’ করে মার্কশিট দেওয়া হবে। একটু বাদেই ডিএম আসবেন, স্যররা বললেন। আর তার পর নাকি আমায় নিয়ে ট্যাবলো ঘুরবে গোটা জলপাইগুড়ি শহরে। আমাদের হাকিমপাড়ার বাড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছা নিয়ে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তীও আসছেন, মা বলল। সব মিলিয়ে কেমন একটা উৎসব উৎসব লাগছে। খুব আনন্দ হচ্ছে।