মাড়গ্রামের ঘটনায় অভিযুক্তদের রামপুরহাট আদালতে তোলা হচ্ছে। সোমবার। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
বোমার ঘায়ে নিহত দুই তৃণমূল কর্মীর পরিবারের দাবি, হামলা করেছেন কংগ্রেস কর্মীরা। কিন্তু, মাড়গ্রাম-কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত কংগ্রেস কর্মী সুজাউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী ওই ঘটনাকে তৃণমূলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ বলে দাবি করলেন সোমবার। যদিও বীরভূম জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন। এ দিকে, দায়িত্ব নেওয়ার পরে সোমবার সন্ধ্যাতেই নতুন এসপি ভাস্কর মুখোপাধ্যায় মাড়গ্রাম গেলেন। সঙ্গে নিলেন অতিরিক্তপুলিশ সুপারকে।
শনিবার রাতে মাড়গ্রামের ধূলফেলা মোড়ের কাছে হাসপাতাল পাড়ায় হামলা হয় মাড়গ্রাম-১ পঞ্চায়েত প্রধান মহুবুল শেখে ভাই লাল্টু শেখ ও তৃণমূল কর্মী নিউটন শেখের উপরে। শনিবার নিউটন এবং রবিবার এসএসকেএম হাসপাতালে লাল্টু মারা যান। পুলিশ ওই ঘটনায় সুজাউদ্দিন আহমেদ, তাঁর দুই ছেলে-সহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে খুন, খুনের চেষ্টা, বেআইনি জমায়েত, মারাত্মক ভাবে জখম করা এবং বিস্ফোরক আইনে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। সোমবার ধৃতদের মধ্যে সুজাউদ্দিন, তাঁর দুই ছেলে এবং গাব্বার শেখকে ১০ দিনের হেফাজতে চেয়ে পুলিশ রামপুরহাট আদালতে আবেদন জানায় পুলিশ। বিচারক ৮ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। অন্য দুই ধৃত আকবর শেখ ও ছোট্টু মালের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ হয়েছে।
এ দিন আদালত চত্বরে সুজাউদ্দিন-সহ ধৃতেরা নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি করেন। সুজাউদ্দিন বলেন, ‘‘যারা দোষী, তারা বাইরে।’’ কারা দোষী, তা নিয়ে অবশ্য তিনি কিছু বলেননি। তাঁর স্ত্রী সোনালি বিবির দাবি, ‘‘আমার স্বামী মাড়গ্রাম-১ পঞ্চায়েতের তৃণমূলের সদস্য। এখনও তৃণমূলের সঙ্গেই যুক্ত। লাল্টু, নিউটন সবাই আমার স্বামীর কাছেই বড় হয়েছে।’’ তাঁর আরও দাবি, ঘটনার সময় সুজাউদ্দিন বাড়িতেই ছিলেন। পুলিশ তাঁকে ও দুই ছেলেকে বিনা দোষে গ্রেফতার করেছে। এর পরেই সোনালি বলেন, ‘‘কারা বোমা মেরেছে, তা বলতে পারব না। তবে এটা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।’’
এ দিন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘দু’দিন আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বীরভূমে বলে গিয়েছেন, আগের ব্যবস্থাই চলবে। অর্থাৎ নকল টোল প্লাজা, কোটি কোটি টাকার লেনদন, পাথর, কয়লা আগের মতো চলবে। মানুষ পরিত্রাণ চাইছে এই লুটেরা রাজ থেকে। সেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকলে সম্ভব হচ্ছে না। তৃণমূলের যারা গিয়েছিল নিজের প্রাণ বাঁচাতে, এখন তাঁদের প্রাণ সংশয় দেখা দিযেছে।’’ উল্টো দিকে, তৃণমূলের রামপুরহাট মহকুমার পর্যবেক্ষক ত্রিদিব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কোনও রকম গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নয়। কংগ্রেস আশ্রিত গুন্ডারা মাড়গ্রামকে অশান্ত করার জন্য এই খুনের রাজনীতি চাইছে। কিন্তু, তৃণমূল তা হতে দেবে না।’’ এ দিন লাল্টু শেখের দেহ এসে পৌঁছয় গ্রামে। রাস্তার দু’ধারে ভিড় করেছিলেন বহু তৃণমূল কর্মী সমর্থক এবং এলাকার বাসিন্দা। বাড়ির কাছেই লাল্টুর দেহ কবর দেওয়া হয়।