—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কেন্দ্রের ‘পিএম কিসান’ প্রকল্প শেষপর্যন্ত রাজ্য গ্রহণ করলেও, ‘আয়ুষ্মান ভারতে’র আওতায় স্বাস্থ্যবিমার কাজ এখনও শুরু করতে পারেনি। তা নিয়ে রাজ্য এবং কেন্দ্রের তরজাও অব্যাহত। কেন্দ্রের ওই প্রকল্পের তুলনায় রাজ্যের ‘স্বাস্থ্যসাথী’কেই এগিয়ে রাখেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন যে অন্তবর্তী বাজেট (ভোট-অন অ্যাকাউন্ট) পেশ করেছেন, তাতে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে আশা-অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও স্কিম ওয়ার্কার্স ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার বক্তব্য, রাজ্যে প্রকল্পটি গৃহীত নয় বলে তা কাজে আসবে না। বরং দরকার ভাতা বাড়ানো। তবে প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের ধারণা, কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত-বার্তা আখেরে রাজ্যের উপর চাপ কিছুটা বাড়াবে।
রাজ্যের অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘এ রাজ্যে আমরা আয়ুষ্মান নিইনি, নেব না। ৪০ শতাংশ টাকা দেবে রাজ্য। অথচ তাঁরা তাঁদের মা-বাবাকে তার আওতায় আনতে পারবেন না। যেটা এ রাজ্যের স্বাস্থ্যসাথীতে করা যায়।’’ শাসক ঘনিষ্ঠ ইউনিয়ন ও সংগঠনগুলিও দাবি করেছে, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকলে আয়ুষ্মান প্রকল্পের কী দরকার?
যদিও আয়ুষ্মান ভারতের সুবিধা পেলে যে উপকার হয়, সেই ইঙ্গিত দিয়ে বাঁকুড়ার ছাতনার শালডিহা পঞ্চায়েত এলাকার এক আশাকর্মী বলেন, “জটিল রোগে আক্রান্ত আমি। নিয়মিত ভেলোরে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়। সেখানে স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা পাই না। জমানো টাকা ভেঙেই চিকিৎসা করাচ্ছি।”
আশা-অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের কাজের বহর বেড়েছে। সরকারি অনেক প্রকল্পের বাস্তবায়নে সহযোগী হিসাবে বিশেষ করে দেখা যায় আশাকর্মীদের। তাই মাঝেমধ্যেই পারিশ্রমিক-সহ একাধিক দাবিদাওয়ায় সরব হতে দেখা যায় তাঁদের।
সরকারি সূত্রের খবর, রাজ্যে চালু স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে পাঁচ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা পান আশাকর্মীরা। তবে আয়ুষ্মান স্বাস্থ্যবিমার আওতায় এলে আরও পাঁচ লক্ষ টাকার সুবিধা পাওয়া যাবে। পর্যবেক্ষক শিবিরের মতে, পারিবারিক ১০ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা থাকলে আশা-অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের জন্য বাড়তি স্বাস্থ্য পরিষেবা নিশ্চিত করা সম্ভব। কিন্তু আয়ুষ্মান প্রকল্পটি রাজ্য এখনও গ্রহণ না করায় অন্যান্য রাজ্যের আশাকর্মীরা এর সুবিধা পেলেও, এ রাজ্যে তা অধরা থাকবে। সেখানেই রাজ্যের চাপ। আবার রাজ্য যেখানে সার্বিক ভাবে ওই প্রকল্পকে এখনও গ্রহণই করেনি, সেখানে শুধু আশাকর্মীদের জন্য তার দরজা খুলে দেওয়াও কার্যত অসম্ভব।
প্রশাসনিক মহল জানাচ্ছে, রাজ্যে আশাকর্মীদের সংখ্যা প্রায় ৬২ হাজার। প্রতিমাসে তাঁরা সাড়ে চার হাজার টাকা করে সাম্মানিক পান। সঙ্গে থাকে উৎসাহ ভাতা (ইনসেন্টিভ), যা সর্বাধিক ন’হাজার টাকা পর্যন্ত। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সংখ্যা আশাকর্মীদের তুলনায় আরও কিছু বেশি।
স্কিম ওয়ার্কার্স ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার সাধারণ সম্পাদিকা ইসমত আরা খাতুন কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে বলেন, “প্রয়োজন ছিল মাসিক ভাতা বৃদ্ধি করা। আমাদের এক জন কর্মী যে মাসমাইনে পান, তাতে তাঁকে সংসার চালাতে নাকাল হতে হয়। দৈনন্দিন জীবন চালানোর কথা না ভেবে মরার সময় বিমা দিয়ে কী হবে?”