টিউটোপিয়ায় পড়াশুনা এবার আরও সহজ
শুরুর দিনগুলোতে সমাজের অনেকেই গুলিয়ে ফেলেছিলেন প্রকৃত উদ্দেশ্যের কথা। অনেকেই ভেবেছিলেন, লকডাউনে স্কুল বন্ধ হওয়ায়, এটা সাময়িক সময়ের জন্য পড়াশোনার একটা বিকল্প ব্যবস্থা। কিন্তু, টিউটোপিয়া হেঁটেছিল সমস্যার আরও গভীরে, পৌঁছেছিল শিকড়ে। স্কুল বন্ধ থাকুক, বা না থাকুক – ছেলেমেয়েরা আগ্রহের সাথে পড়ছে তো? আরও নির্দিষ্ট করে বললে, ফার্স্ট বেঞ্চের পরের বেঞ্চগুলোর বাসিন্দা যারা, তারা কিভাবে সামলাচ্ছে পড়ার চাপ? টিউটোপিয়ার রিসার্চ টিমের সার্ভেতে উঠে আসে – প্রতি বছর পশ্চিমবঙ্গের লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়ের পড়াশোনার সবচেয়ে বড় সমস্যা হল – চারপাশে বিনোদনের অসংখ্য হাতছানির মধ্যে, পড়াশোনার গতানুগতিক ধারায় তাদের আগ্রহ একেবারেই আর নেই।
মূল কাঠামোটা বজায় রেখেও, পড়াশোনাকে ছেলেমেয়েদের কাছে আকর্ষণীয় করা যায় কী? প্রশ্নটা প্রথম এসেছিল সুব্রত রায়ের মাথায়। সুব্রত রায়ের হাই-টেক অ্যানিমেশন পূর্বভারত তথা ভারতের অন্যতম এগিয়ে থাকা অ্যানিমেশন কোম্পানি – যাদের কাজ বাচ্চাদের জন্য অ্যানিমেশন তৈরি করা। অর্থাৎ, বাচ্চাদের সাথে সূক্ষ্ম একটা যোগ আগে থেকেই ছিল। এবার সেই বাচ্চাদের পড়াশোনাকে আকর্ষণীয় করার প্রশ্ন। সহযোদ্ধাদের নিয়ে শুরু হল একটা নতুন অধ্যায়। প্রায় ৬৫০ জন কর্মী নিয়ে শুরু হল কাজ। লকডাউনে যেখানে বড় বড় সংস্থাও কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছে, সেখানে শুধুমাত্র একটা চ্যালেঞ্জিং ভাবনা তৈরি করে দিল কর্মসংস্থানের সুযোগ। ৬৫০ জন শিক্ষক, শিক্ষিকা, গবেষক, অ্যানিমেটর, সিনেমাটোগ্রাফার, এডিটর, গ্রাফিক ডিজাইনার সহ আরোও অনেকের পরিশ্রমে বাংলার মাটি সাক্ষী থাকল এক নতুন ইতিহাসের। তৈরি হল টিউটোপিয়া । বাংলায় শিক্ষার আধুনিক অ্যাপ – “দুনিয়া যেভাবে পড়ে, আজ বাংলার ঘরে ঘরে”।
এবার দায়িত্ব ছেলেমেয়েদের ঘরে পৌঁছে দেওয়া টিউটোপিয়াকে। এই কাজটা যাতে দ্রুততার সাথে হয়, টিউটোপিয়ায় যুক্ত হলেন লোকাল অ্যাকাডেমিক পার্টনাররা। যারা অ্যাপটা নিয়ে সরাসরি পৌঁছে গেছেন ছাত্রছাত্রীদের কাছে। বিগত এক বছর ধরে তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে টিউটোপিয়া আলোর গতিতে কলকাতার অফিস থেকে পৌঁছে গেছে পশ্চিমবঙ্গের শহরতলী ও জেলা ছাপিয়ে একদম প্রত্যন্ত এলাকাতেও – সকলের চেষ্টায় টিউটোপিয়া আজ ৯ লক্ষেরও বেশি ফোনে ডাউনলোড হয়েছে, এসেছে ২১ হাজারেরও বেশি রিভিউ, গুগল প্লে স্টোরে ছাত্রছাত্রীদের রেটিং-এ টিউটোপিয়া ৫-এর মধ্যে ৪.৮, যা সত্যিই প্রশংসনীয়।
যেখানে নতুন ভাবনা, সেখানেই চ্যালেঞ্জ। গত এক বছরে লক্ষ্য করা গেল কিছু সমস্যা। যেমন- অ্যাপের সাবস্ক্রিপশন যৎসামান্য হলেও, যেহেতু ছাত্রছাত্রীদের একসঙ্গে বাৎসরিক মূল্য দিতে হয়, তাতে অনেকের অসুবিধা হচ্ছে। তেমনি অনেকের কাছে স্মার্টফোনই নেই; কারোর কাছে স্মার্টফোন থাকলেও যথাযথ ইন্টারনেট পরিষেবার সুযোগ নেই।
তাহলে কি করা যায়? কথায় আছে, “Necessity is the mother of invention”। এই সব সমস্যার সমাধান নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের জন্য টিউটোপিয়ার নতুন উদ্যোগ “Tutopia Smart Coaching” – পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি পিনকোডে শুরু হতে চলেছে একটি করে “Tutopia Smart Coaching” – এখানে ছেলেমেয়েরা মাসিক সাবস্ক্রিপশনের বিনিময়ে পড়তে পারবে ক্লাস ৮ থেকে ক্লাস ১২ পর্যন্ত। একসাথে বার্ষিক সাবস্ক্রিপশন দেওয়া যাদের কাছে সমস্যার, যাদের কাছে যথাযত ইন্টারনেট পরিষেবা যায়নি এখনও, যাদের বাড়িতে স্মার্টফোন নেই –তাদের ঘরের কাছে আধুনিক পড়াশোনার ব্যবস্থা নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে – “Tutopia Smart Coaching”। যেখানে থাকবে অত্যাধুনিক ট্যাব ও ইন্টারনেট পরিষেবাসহ আরও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো।
ছাত্রছাত্রীদের ছোটো বড় কোনো সমস্যাকেই উপেক্ষা করতে চায় না টিউটোপিয়া। ফ্রান্স-প্রবাসী এক বাঙালি শিক্ষা-প্রযুক্তিবিদ বলছেন – "টিউটোপিয়ার লোগোতে দেখবেন একটা জ্বলে ওঠা বাল্বের ছবি আছে। মনে পড়ে যায়, আশুতোষ গোয়ারিকরের ‘Swades’ ছবির সেই অপূর্ব শট, যেখানে গ্রামে প্রথম বিদ্যুৎ আসার দিন, প্রথম জ্বলে ওঠা বাল্বের সামনে দাঁড়িয়ে প্রায় অন্ধ হয়ে আসা চোখের এক অশীতিপর বৃদ্ধা অস্ফুটে বলে ওঠেন – 'বিজলি'। ভৌগোলিক এলাকা ধরে Tutopia Smart Coaching- ঘরে ঘরে নিয়ে যাচ্ছে নতুন দিনের সেই শিক্ষার আলো, যা খুবই নামমাত্র মূল্যে। এতে আরোও অনেকের কাছে খুব সহজেই পৌঁছে যাবে আধুনিক প্রযুক্তি-নির্ভর পড়াশোনা।"
ডিরেক্টর সুব্রত রায় বললেন, "আমাদের সব চেষ্টা, পদক্ষেপই ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় এগিয়ে দেওয়ার জন্য। সবকিছুর পরে ওদের যদি পড়াশোনায় আগ্রহ তৈরি হয়, সেটাই হবে আমাদের প্রকৃত সাফল্য। আমরা সেদিকেই তাকিয়ে।"