—প্রতীকী ছবি।
পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে অবস্থিত ইনটিগ্রেটেড চেক পোস্ট (আইসিপি) মারফত প্রতিবেশী দেশ ও রাজ্যগুলিতে পণ্যবোঝাই গাড়ির যাতায়াতে ‘ছড়ি’ ঘোরাত ‘অসাধু চক্র’। তা ভাঙতেই রাজস্ব আদায়ে জোয়ার এসেছে বলে দাবি রাজ্য পরিবহণ দফতরের।
দফতরের তথ্য বলছে, ‘সুবিধা পোর্টাল’ চালু হওয়ার পরে গত দু’বছরে দফতরের ভাঁড়ারে এসেছে প্রায় ৫২২ কোটি টাকা। পাশাপাশি, অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই গাড়ির যাতায়াত আটকাতে জরিমানা আদায়-সহ নানাবিধ উদ্যোগের জেরে বেড়েছে দফতরের মোট রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও। তথ্য বলছে, পাঁচ বছর আগে রাজ্য পরিবহণ দফতরের রাজস্ব আদায় ছিল বছরে ২ হাজার ২৯২ কোটি টাকা। সদ্যসমাপ্ত আর্থিক বর্ষে যা বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ৭৯ কোটি টাকা। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ সা়ড়ে ছ’শো কোটি টাকা পেরিয়েছে। সুবিধা পোর্টাল মারফত এই সময়কালে দফতরের ভাঁড়ারে এসেছে প্রায় ৪২ কোটি টাকা।
পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতে সড়ক পথে পণ্য আমদানি-রফতানি হয় আটটি আইসিপি দিয়ে। একটি চক্র সেখানে রীতিমতো সক্রিয় ছিল। আগে আইসিপি-তে গেলেই দেখা যেত, সেখানে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে ট্রাক। সেই সব ট্রাক থেকে পণ্য নামিয়ে ওই চক্রের সঙ্গে যুক্তদের গাড়িতে চাপিয়ে তা পাঠানো হত বাংলাদেশে। এটাই ছিল দস্তুর। তাতে ট্রাকগুলিকে অনেক দিন দাঁড়িয়ে থাকতে হত। এ নিয়ে বহু অভিযোগও এসেছিল।
এই চক্র ভাঙতে এবং সড়কপথে বাণিজ্যে গতি আনতে ‘ল্যান্ড পোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া’, কাস্টমস এবং বিএসএফের সঙ্গে আলোচনা করে ‘সুবিধা’ পোর্টাল চালু করে পরিবহণ দফতর। বাংলাদেশগামী ট্রাকগুলি পোর্টালে নির্দিষ্ট অর্থের বিমিনয়ে রেজিস্ট্রেশন করানোর পরে, এখন বিনা বাধায় বাংলাদেশে চলে যায়। এতে চক্রটি যেমন ভাঙা গিয়েছে, তেমনই বাড়তি রাজস্বও আসছে। পাশাপাশি, বাণিজ্যেও গতি এসেছে। ওই কর্তা জানান, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে সুবিধা পোর্টাল মারফত রাজস্ব এসেছিল ১৮৪ কোটি টাকা। গত অর্থবর্ষে তা বেড়ে হয়েছে ২৭৬ কোটি টাকা। তিনি বলেন, ‘‘চক্রটি ভাঙতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে।’’
পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আইসিপিগুলিতে পণ্য খালাস ও রফতানির ক্ষেত্রে একটি চক্র সক্রিয় ছিল। অনেক বাধা বিপত্তি ও হস্তক্ষেপ এড়িয়ে তা ভাঙা গিয়েছে। রাজস্ব বাড়াতে আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছি। অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই গাড়ি আটকে জরিমানা আদায় বেড়েছে। আমাদের আশা, চলতি অর্থবর্ষের শেষে রাজস্ব আদায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।’’
পরিবহণ দফতরের তথ্য বলছে, ট্র্যাফিক আইন ভাঙা, অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই গাড়ি আটকে
জরিমানা আদায় বাবদ গত অর্থবর্ষে ১৭৪ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছিল। তার আগের বছর সেই পরিমাণ ছিল ১৬৭ কোটি টাকা। ২০২০-২১ সালে মোট ৩,৬৪,৮২০টি গাড়ি আটকে তল্লাশি হয়েছিল। গত আর্থিক বছরে সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৮,৯৬,৮৩৫।