নবান্ন। —ফাইল চিত্র।
বিভিন্ন দফতরের প্রায় দেড় হাজার পদে নিয়োগে সিলমোহর দিল রাজ্য মন্ত্রিসভা। সিদ্ধান্ত হল চা-শ্রমিকদের জমির পাট্টা দেওয়ার। দেহ সৎকারের কাজে নিযুক্তদের ‘ডোম’ বলে উল্লেখের বদলে তকমা দেওয়া হল ‘সৎকার বন্ধু’র। বছর শেষ আর লোকসভা ভোটের মুখে বুধবার এমনই একগুচ্ছ সিদ্ধান্তে সায় দিল মন্ত্রিসভা।
সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে দমকল দফতরে প্রায় এক হাজার শূন্যপদে নিয়োগের প্রস্তাবে সিলমোহর দিয়েছে মন্ত্রিসভা। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে এই নিয়োগ হওয়ার কথা। মাধ্যমিক পাশ যে কেউ এই পরীক্ষায় বসতে পারবেন। প্রশাসনিক সূত্রের বক্তব্য, ওই দফতরে সব মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার অপারেটরের পদে নিয়োগ প্রয়োজন। তারই প্রথম ধাপ হিসেবে এ দিন এক হাজার নিয়োগে এই অনুমোদন।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে লোকসভা ভোটের আগে এ দিন উত্তরবঙ্গের দিকেও বেশি করে নজর দিয়েছে সরকার। মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্তরবঙ্গের চা-বাগান শ্রমিক এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের উন্নয়নে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠক শেষে মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া জানান, চা-সুন্দরী প্রকল্পের আওতায় বাড়ি তৈরি করে চাবি তুলে দেওয়া হয়েছে এত দিন। নতুন সিদ্ধান্তে চা-শ্রমিকদের জমির পাট্টাও দেওয়া হবে। সেই জমিতে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা পাবেন তাঁরা। তাতে তাঁরা বাড়ি তৈরি করতে পারবেন। মন্ত্রীর দাবি, আগে এই পাট্টা ছিল না। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের মতে, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বরাদ্দ যেখানে রাজ্যে দুর্নীতির অভিযোগে বন্ধ, সেখানে লোকসভা ভোটের আগে বিজেপির শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত উত্তরবঙ্গে চা-শ্রমিকদের বাড়ি তৈরির টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে পরিকাঠামো উন্নয়নের পদক্ষেপ হিসেবে দার্জিলিংয়ের পেডিয়াট্রিক মেডিসিন বিভাগের অধীনে ‘সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট’-এর জন্য ২৬টি নতুন পদ তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া, পাঁচ মেডিক্যাল অফিসার, ২০ জন স্টাফ নার্সের পদ তৈরির পাশাপাশি, পরীক্ষাগারে একটি পদ তৈরি হচ্ছে। হবে নতুন ৪০টি ক্রিটিক্যাল শয্যাও। রাজ্যের দাবি, এ জন্য যা লোকবল লাগবে, তা নিয়োগ হবে। উত্তরবঙ্গে শিশু বিভাগ-সহ ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটও হচ্ছে।
‘হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ড’-এর অধীনে হোমিয়োপ্যাথিক ডিসপেনসরিতে ২৯টি মেডিক্যাল অফিসারের পদ তৈরি হচ্ছে। ভূমি দফতরের ব্লক, মহকুমা, জেলা স্তরে লোকবল এত দিন কম ছিল। ভূমি-দলিল কম্পিউটারে নথিবদ্ধ করতে প্রবল চাপ রয়েছে। তা সামাল দিতে ৪২৭ জন ‘ডেটা এন্ট্রি অপারেটর’ নিয়োগ করা হবে চুক্তির ভিত্তিতে।
এ বার থেকে ‘ডোম’ শব্দটি ব্যবহার করতে চাইছে না সরকার। দেহ সৎকারে নিযুক্তদের ‘ডোম’ বলে উল্লেখ করা হত। এ বার থেকে তাঁদের ‘সৎকার বন্ধু’ বলা হবে বলে বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মানস বলেন, কলকাতা পুর নিগমের অধীনে ন’জন সৎকার কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পঞ্চায়েত স্তরে জেলা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য এ বার বদলি নীতি চালু হবে। হবে কাজের মূল্যায়নও। এত দিন জেলা স্তরে পঞ্চায়েত দফতরের অধীনে যাঁরা এই পদে নিযুক্ত হতেন, তাঁরা অবসর নিতেন সেই জেলা থেকেই। এই বিষয়ে মানস জানিয়েছেন, “এক জায়গায় থেকে গেলে প্রশাসনিক এবং ব্যক্তিগত স্তরে সমস্যা হয়। তাই এই সিদ্ধান্ত।”